হাওড়া, 16 জুন: নামেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র । নেই জেনারেটর বা ইনভার্টার । ন্যূনতম পরিকাঠামোর অভাবে অন্ধকারে এমার্জেন্সির আলোতেই শুক্রবার সন্তানের জন্ম দিলেন এক প্রসূতি । ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন । শুরু হয় সমালোচনা ৷ যদিও হাওড়া জেলার সাঁকরাইল ব্লকের এই ঘটনায় ন্যূনতম প্রতিক্রিয়া দিয়ে দায় সেরেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ।
নিদারুণ গরমে রাজ্যজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা এখন খুবই সাধারণ একটি ঘটনা হয়ে গিয়েছে । আর পরিস্থিতি এমনই যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো জরুরি পরিষেবাতেও ঘটছে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো ঘটনা । চিকিৎসক থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকা-সহ কোনও বিকল্প ব্যবস্থাও না থাকার কারণে সমস্যার মুখে পড়ছেন রোগীরা । সাঁকরাইল ব্লকের এই একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল 16টি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা । প্রতিদিন বহু প্রসূতি-সহ অন্যান্য রোগীরা এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন । যদিও এখানে ন্যূনতম বিকল্প পরিকাঠামো না থাকার অভিযোগ তুলছেন রোগীর আত্মীয়রা ।
প্রসূতির স্বামী শহিদুল লস্কর জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল 5টা নাগাদ স্ত্রীকে এখানে ভর্তি করেন । শুক্রবার সকাল 10টা থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এই তীব্র গরমের মধ্যেই তার স্ত্রী এখানে সন্তান প্রসব করার জন্য রয়েছেন । এরপর বিকেলে এসে স্ত্রীকে অন্যত্র ভর্তি করার কথা বলতে গেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয় তাঁর সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে ।
এরপর তাঁর অভিযোগ, এখানে জেনারেটরের কোনও ব্যবস্থা নেই । তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে এত কষ্ট পাচ্ছেন এই গরমে তাহলে যারা ভিতরে আছেন তাঁদের কতটা কষ্ট হচ্ছে সেটা ভাবার বিষয় । তাঁর সন্তান হয়েছে জানালো হলেও ছেলে না মেয়ে হয়েছে তাও প্রথমে জানানো হয়নি তাঁকে । এটা কি ধরনের হাসপাতাল যেখানে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হলে অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই ?
প্রসূতির জেঠিমা অভিযোগ করে বলেন,"সকাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে । এই পরিস্থিতিতে কীভাবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হল সেটাই অসম্ভব ব্যাপার । কাউকে বিদ্যুৎ সংযোগ কখন ফিরবে জিজ্ঞাসা করতে গেলেই অফিসে যোগাযোগ করতে বলছে । যদিও তিনি জানেন না অফিস কোথায় । যথেষ্টই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন : নর্মাল ডেলিভারি অথচ নেই কোনও যন্ত্রণা, নজির গড়ল আসানসোল জেলা হাসপাতাল
যদিও এই প্রসঙ্গে হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইবরণ মণ্ডল ফোনে ইটিভি ভারতকে বলেন, "ইউপিএস আছে ওখানে ৷ কিন্তু ইউপিএসের তো একটা লিমিট থাকে ৷ আপনারা তো সিইএসসি বা ডব্লিউবিএসইডিসিএলকে একটা ফোন করতে পারতেন যে ওখানে কারেন্ট নেই কেন ৷ এটা তো এমারজেন্সি লাইন ৷ হাসপাতাল জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে । এটা মাঝেমধ্যে আমাদর ফেস করতে হয় ৷ ওদেরও তো বিষয়টা দেখা উচিত ৷ কোনওভাবে এবারের মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে ৷"
বিকেল 5টার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরৎ আসে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে । যদিও গোটা ঘটনাতে যথেষ্টই ক্ষুব্ধ প্রসূতির পরিবারের লোকেরা । সাঁকরাইল ব্লকের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও বিকল্প জরুরি পরিকাঠামো না থাকা নিয়েও রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলছেন তাঁরা ৷