কলকাতা, 3 নভেম্বর: রাজ্যে বিজেপিকে আটকাতে সিপিএম-তৃণমূলের গোপন আঁতাত নিয়ে অনেক বছর ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক চলছিল । 2011 সালের ফিশ-ফ্রাই তত্ত্ব আন্দোলিত হয়েছিল রাজ্য সিপিএমের কট্টরপন্থী অংশের মধ্যেই । ফের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে 'বৃহত্তর' স্বার্থে এনডিএ বিরোধী দলগুলি একত্রিত হয়ে 'ইন্ডিয়া' জোট প্রকাশ্যে আসার পরই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকে জোটের সঙ্গী করা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে সিপিএমের অভ্যন্তরেই । তাই নিয়ে নিজের দলের মধ্যেই মতানৈক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । যা নিয়ে রীতিমতো বিব্রত হতে হচ্ছে সিপিএমকে।
যদিও এই বিতর্কে ইতি টানতে ও দলীয় কর্মীদের প্রতি বার্তা দিতে শুক্রবার হাওড়ার জেলা পার্টি অফিসের দলীয় সভা থেকে লোকসভা নির্বাচনের আগে 'ইন্ডিয়া' জোটে দল কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে একমঞ্চে থাকা নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ৷
শুক্রবার থেকে দলের হাওড়া জেলা দফতরে শুরু হয়েছে সিপিএম রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন । সেই অধিবেশনের উদ্বোধনী সভাতে এসে তৃণমূলের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকার ব্যাখ্যা দেন ইয়েচুরি । শুক্রবার ইয়েচুরি বলেন,"ভারতকে বাঁচানোর জন্যই 'ইন্ডিয়া' তৈরি হয়েছে ৷ দেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তা হলে অবশ্যই আগে দেশের সার্বভৌমত্ব বাঁচাতে হবে । সেই কাজে যাঁরা প্রস্তুত তাঁদের সবাইকে জোটে স্বাগত।’’
এছাড়াও সিপিএম সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, "বিষয়টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা নয় । সকলেই জানে তৃণমূল আগে বিজেপির শরিক ছিল । প্রয়োজনে তারা বোঝাপড়া করতে পারে । যদিও ক্ষমতা থেকে বিজেপিকে দূরে রাখতে ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি হয়েছে, তাতে এসে যারা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায় তাদের সবাইকেই আমরা নিয়েছি।’’
তবে বাংলায় যে এই জোট প্রযোজ্য নয় এদিন তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক ৷ তিনি জানিয়েছেন,‘ইন্ডিয়া’ জোট এই রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, সুতরাং তৃণমূলের সঙ্গে রাজ্যে সমঝোতার কোনও জায়গা নেই । শুক্রবার ইয়েচুরি পুরানো প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন,‘‘একসময় ইন্দিরার কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে সরাতে আমরা ছাত্র আন্দোলন করি । আমরা অনেকেই সেই সময়ে একসঙ্গে ওই বিক্ষোভে দেখে বিটি রণদিভে বলেছিলেন, দিল্লি থেকে আগ্রা যাওয়ার পথে গাড়ি খারাপ হলে আশপাশের লোক ডেকে ঠেলে গন্তব্যে নিয়ে যেতে হয় । তখন ওই লোকেদের মধ্যে বাছবিচার করলে চলে না।’
আরও পড়ুন: বৃহত্তর স্বার্থে 'ইন্ডিয়া' জোট, রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নয়: ইয়েচুরি
যদিও সিপিএমের নেতার বক্তব্যকে কটাক্ষ করে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, 1988 সালে রাজীব গান্ধিকে হারানোর জন্য জ্যোতি বসু, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং ও অটলবিহারী বাজপেয়ী হাতে হাত ধরে সভা করেছিল ৷ সেবছর ভোটের পর বিজেপি গোটা দেশে দুই থেকে বাড়ে 84টি আসন পায় ৷ ফের 2019 সালে সিপিএমের লোকেরাই বিজেপিকে ভোট দিয়ে বাংলায় 19টি আসন দিয়েছে ।