বেলুড়, 15 জুন : অবশেষে খুলল বেলুড় মঠের দরজা। খুলতেই মঠ প্রাঙ্গণে শুরু হল ভক্তদের আনাগোনা। প্রথম দিনেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ হাজির হলেন ঐতিহাসিক মঠ দর্শনে। দীর্ঘদিন পর শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা-স্বামী বিবেকানন্দের স্মরণে আসতে পেরে আবেগ বিহ্বল হতে দেখা গেল ভক্তদের ৷ গঙ্গাপাড়ের বিশ্বখ্যাত মঠটি এতদিন ধরে বন্ধ থাকেনি কখনো। সেই কারণেই হয়ত তীর্থক্ষেত্রের মূল ফটক খোলার প্রথম দিনেই ভিড় করলেন বহু ভক্ত। তবে, সংক্রমণ ঠেকাতে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলল মঠ৷
এবার থেকে মঠ চত্বরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক৷ অন্যথা মঠে প্রবেশের অনুমতি মিলবে না। বিশেষ স্যানিটাইজ়ার মেশিন রাখা হয়েছে প্রবেশপথে। পাশাপাশি ভক্তদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। এছাড়া 60 বছরের বেশি ও 10 বছরের কমবয়সিদের এখনই মঠে না আসতে অনুরোধ করছেন মঠ কর্তৃপক্ষ। কমানো হয়েছে মঠ দর্শনের সময়সীমা। আপাতত সকাল 9 টা থেকে বেলা 11টা ও বিকেল 4 টে থেকে সন্ধে 6 টা পর্যন্ত মঠের দরজা খোলা থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য। বিশেষ কারণে স্বামী বিবেকানন্দের শয়নকক্ষ ও পুরানো মন্দির বাদ পড়েছে দর্শনের তালিকা থেকে। তবে, আগের মতোই শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির, মা সারদা মন্দির, স্বামী বিবেকানন্দ মন্দির ও ব্রহ্মানন্দ মন্দির দর্শন করতে পারবেন ভক্তরা। ভিড় এড়াতে এই মন্দিরগুলিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পথ তৈরি করা হয়েছে। 6 ফুটের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও বাধ্যতামূলক৷
মঠের তরফে জানানো হয়েছে, প্রসাদ বিতরণ-পর্ব আপাতত বন্ধ থাকছে। মঠের গঙ্গাঘাটে স্নান তথা জলে নামা নিষিদ্ধ৷ পাশাপাশি প্রতিদিন মঠ বন্ধের পর গোটা মঠ চত্বর স্যানিটাইজ়েশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লকডাউন পরবর্তী পর্বের যাবতীয় নির্দেশিকা মঠের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারিং করার পাশাপাশি অডিও সিস্টেমে বাজানো হচ্ছে। সোশাল মিডিয়াতেও নয়া বিধিনিষেধের প্রচার চালানো হবে বলে জানা গিয়েছে মঠ সূত্রে।
এইসব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সোমবার সকালে বহু ভক্ত হাজির হলেন মঠ দর্শনে৷ দীর্ঘদিন পর মঠে প্রবেশ করতে পেরে তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। লকডাউন পর্বের পর প্রথম দিনেই মঠে এসেছেন ভক্ত তপতী কারক৷ তিনি বলেন, "বেলুড় মঠ আমাদের কাছে এক মানসিক শান্তি এবং তৃপ্তির জায়গা। আজ ফের মঠে আসতে পেরে তৃপ্তি অনুভব করছি।" আড়াই মাস পর প্রিয় মঠে আসতে পারার আনন্দে চোখ ভিজে ওঠে তপতী দেবীর৷ বলেন, "আমি মঠে দীক্ষিত৷ এতদিন পর ফের আসতে পেরে মনে হচ্ছে যেন মায়ের কাছে ফিরেছে সন্তান!"
অনেকটা সময় পর মঠ খুললেও মঠের ব্যবস্থাপনা দেখে মুগ্ধ ভক্ত জহর বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, "এটা সবার শেখা উচিত৷ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল মঠ৷ আজ খুলল৷ মনে হল না, যে এতদিন বন্ধ ছিল৷ তাছাড়া যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মঠ খোলা হল তা একমাত্র বিবেকানন্দের আদর্শে যাঁরা দীক্ষিত তাঁরাই পারেন৷"