হুগলি, 15 অগাস্ট : তখন দেশজুড়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের জোয়ার । দেশবাসীর মুখে একটাই স্লোগান ইংরেজ ভারত ছাড়ো । স্বাধীনতার 72তম বর্ষে দাঁড়িয়ে 95 বছরের এক বৃদ্ধর মুখে সোনা গেল সেই স্লোগান ৷ স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গলার আওয়াজে সেই তেজ আর মুষ্টিবদ্ধ হাতে এক নাগাড়ে বলে চলেছেন ইংরেজ ভারত ছাড়ো । তিনি হলেন হুগলির হরিপালের নয়ানগর গ্রামের চুনিলাল সিংহরায় । সদ্য রাষ্ট্রপ্রতি পুরস্কার পেয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : অর্থের অভাব, নিজের চিকিৎসার টাকা জোগাতে সমস্যায় পড়েছিলেন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত
সালটা তখন 1941-42৷ ধনেখালির ভান্ডারহাটি বি এম ইনস্টিটিশনের ক্লাস এইটের ছাত্র চুনিলাল সিংহরায় । প্রফুল্ল সেনেকে আদর্শ মেনে যোগ দেন স্বাধীনতা আন্দোলন । সেই সময় তাঁর কাজ ছিল আন্দোলনকারীদের কাছে বুলেটিন পৌঁছে দেওয়া, খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ । এই কাজে শুধু তিনি একা নন সঙ্গে ছিলেন তাঁর আরও দুই দাদা পান্নালাল এবং জহরলাল । এক সময় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে জেলও খাটেন৷ শ'দেড়েক সশস্ত্র পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে গ্রেপ্তার করে । হুগলি জেলে বেশ কিছু দিন থাকার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন । অসুস্থতার কারণে জেল থেকে ছাড়া পেলেও গৃহবন্দি করে রাখা হয় চুনিলাল বাবুকে । প্রায় চার মাস গৃহবন্দি থাকার পর পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যান তাঁর মাসির বাড়ি আরামবাগে । এর পর আর পুলিশ তাঁর কোনও খোঁজ পায়নি ।
আরও পড়ুন : জওয়ানের গলায় 'সন্দেশ আতে হ্যায়,' ভিডিয়ো ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায়
1947 এর 15 অগাস্ট স্বাধীন হয় দেশ । বেনারসের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সকালবেলায় প্রভাতফেরির মাধ্যমে পালন করা হয় দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি । সেই প্রভাতফেরিতে অংশ নেন বেনারস রামকৃষ্ণ মিশনের কর্মী চুনিলাল সিংহরায় । 1972 সালে ইন্দিরা গান্ধি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান জানিয়ে তাম্রপত্র প্রদান করা হয়েছিল ৷ সম্মানিত করা হয়েছিল চুনিলাল সিংহরায় ও তাঁর দুই দাদাকে ।
আরও পড়ুন : সমান অধিকার, ক্ষমতা, সুবিধা ভোগ করবে জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষ : রাষ্ট্রপতি
1946 সালে মেট্রিক পাশ করেছিলেন চুনিলাল সিংহরায় । কলেজে ভর্তি হয়েও অর্থাভাবে পড়া হয়নি । 34 বছর বয়সে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন হরিপালের জেঁজুর প্রথমিক বিদ্যালয়ে । স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে চলতি মাসে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান । বর্তমানে অসুস্থ শরীরে অতীতের স্মৃতিচারণে মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরে তুলে বলতে পারেন, 'ইংরেজ ভারত ছাড়ো' । তিনি মনে করেন দেশের আরও উন্নতি করতে হবে । দেশের যুবকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছেন । স্বাধীন ভারতের যুবকরা এখানেই পড়াশোনা করে এ দেশেই যেন চাকরি করেন, একটাই চাওয়া চুনিলালের৷