হুগলি, 4 জুলাই: সকালে উঠে বাজারে গেলেই হাতে লাগছে ছ্যাঁকা ৷ পটল, বেগুন থেকে উচ্ছে, লঙ্কা অগ্নিমূল্য দামের প্রভাব পড়েছে আমজনতার জীবনে ৷ কিছুদিন আগেও সবজির দাম ছিল স্বাভাবিক ৷ কিন্তু হঠাৎ করেই এত দাম বাড়ল কেন ? প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মনে ৷ বাজারে আগে যে লঙ্কা 60-70 টাকা কেজি দরে পাওয়া গিয়েছে, বর্তমান তার বাজার মূল্য পাইকারি দরে 150 টাকা প্রতি কেজি ও খুচরো বাজারে তা বিকোচ্ছে 200 থেকে 250 টাকা প্রতি কেজিতে ৷ এমতাবস্থায় নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তদের ঘরে ৷ কবে কমবে সবজির দাম, প্রশ্ন এখন একটাই ৷
কিন্তু সবজির বাজারে এত মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী ? তারই উত্তর খুঁজতে ইটিভি ভারত ঢুঁ মেরেছিল হুগলির শেওড়াফুলির পাইকারি বাজারে ৷ এখানে হুগলি ছাড়াও বর্ধমান ও নদিয়ার বিভিন্ন বাজার থেকে আসে সবজি। সরাসরি চাষীরা এসে নিজেদের ফসল বিক্রি করেন এখানে। আবার এখান থেকেই কলকাতা-সহ ভিন রাজ্যেও রফতানি হয় যাবতীয় সবজি । পাইকারি বাজার বিক্রেতা দবজির দাম বাড়ার কারণ হিসাবে দায়ি করেছেন আবাহাওয়ার পরিবর্তনকে ৷ অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ, সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় সবজির উৎপদান পর্যাপ্ত পরিমাণ হয়নি ৷ যার ফলে বেড়েছে সবজির দাম ৷ অনেকে আবার কর্ণাটকে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণকে দায়ি করেছেন সবজির অগ্নিমূল্যের কারণ হিসাবে ৷
পাইকারি ব্যবসাদার বাবু দাস বলেন, "কর্ণাটক থেকে অনেক সবজি আসে ৷ কিন্তু দুর্যোগের কারণে সবজি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ আমদানি কম হচ্ছে ৷ তাই দাম বেশি ৷" পাইকারি বিক্রেতা সহদেব সিং বলেন, "বাজারের পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ বিক্রি করা যাচ্ছে না সবজি ৷ দাম বেশি, তাই জিনিস তুলতেও ভয় লাগছে ৷ পাইকারি ও খুচরো বাজারে দামের পার্থক্য হওয়ারও কারণ রয়েছে ৷" সহদেব বাবু অভিযোগ করে বলেন, "অনেকে আসেন কিছু সবজি কিনলে লঙ্কা ফ্রিতে নিয়ে নেন ৷ আবার কেউ আসেন অনুরোধ করে বলেন একটু লঙ্কা দেওয়ার জন্য ৷ আমরা দিয়েও দিই ৷ কিন্তু এইভাবে আমাদের তো লোকসান হয় ৷ সেটা পোষানোর জন্য একটু দাম বাড়াতেই হয় ৷"
আবার পাইকারি বাজার বিক্রেতা আলি হোসেন-এর গলায় দাম বাড়ার কারণ হিসাবে শোনা গিয়েছে অন্য সুর ৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, "দাম অনেকটাই কমে যাবে যদি পুলিশের জুলুমবাজি বন্ধ করা যায় ৷ রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি আটকে টাকা চান তাঁরা ৷ 50-100 টাকা তাঁরা নেবেন না ৷ নিলে 200-500 টাকা নেবেন ৷ সেই টাকা তো আমরা পকেট থেকে দেব না ৷ তাই আমাদের সেই টাকা তোলার জন্য সবজির দামে চাপিয়ে দিতে হয় ৷"
তবে সুফল বাংলা কেন্দ্রে সবজির মূল্য খানিকটা কম হলেও, সব জায়গায় তা না থাকায় সাধারণ মানুষ পড়েছেন সমস্যায় ৷ আবার চাহিদা অনুযায়ী সুফল বাংলা কেন্দ্রগুলিতে জোগান থাকে কম ৷ ফলে সেখানেও সমস্যা ৷
একনজরে দেখে নেওয়া যাক পাইকারি বাজার ও খুচরো বাজারে সবজির মূল্যের পার্থক্য কীরকম :
পাইকারি বাজার (প্রতি কেজি দর টাকায়) খুচরো বাজার (প্রতি কেজি দর টাকায়)
1। বেগুন 70.00 1৷ বেগুন 100.00
2। পটল 40.00 2। পটল 50.00
3। লঙ্কা 150.00 3। লঙ্কা 200.00
4। টমেটো। 120.00 4। টমেটো। 150.00
5। ঝিঙে 60.00 5। ঝিঙে 70.00
6। আদা 220.00 6। আদা 250.00
7৷ রসুন 150.00 7৷ রসুন 200.00
8। মুলো 30.00 8। মুলো 50.00
9। ক্যাপসিকাম 80.00 9। ক্যাপসিকাম 100.00
10। বিট-গাজর 30.00 10। বিট-গাজর 50.00
11। কাঁকরোল 40.00 11। কাঁকরোল 60.00
12। চিচিংয়ে 30.00 12। চিচিংয়ে 50.00
13৷ ধনেপাতা 150.00 13৷ ধনেপাতা 200.00
14। শসা 30.00 14। শসা 40.00
15। আলু- চন্দ্র মুখী 25.00 15। আলু- চন্দ্র মুখী 30.00
16৷ পিঁয়াজ 20.00 16৷ পিঁয়াজ 30.00
আরও পড়ুন: সবজি বাজারে যৌথ হানা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ, স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের
হুগলি নিয়ন্ত্রিত বাজারের সম্পাদক ফিরদোসুর রহমান বলেন, "গত বছরের তুলনায় ফসলের উৎপাদনের পরিমাণ কম। তার জন্য দাম বাড়ছে। আদা ও লঙ্কা আমদানি কম থাকার জন্য সমস্যা বাড়ছে। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে বাজার দর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। হুগলির উৎপাদিত পণ্য কলকাতা ও হাওড়ায় চলে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। কৃষক বাজারগুলিতে অন্য জেলা থেকেও বিক্রি করতে আসেন উৎপাদনকারীরা । আমাদের নিয়ন্ত্রিত বাজারের আধিকারিকরা সব সময় পর্যবেক্ষণ করছে।"