ETV Bharat / state

Hindustan Motors: অ্যাম্বাসেডরের আঁতুড়ঘর এখন সাপের আড্ডা ! হিন্দ মোটর্সের জমিতে আবাসন প্রকল্পের ভাবনা

অ্য়াম্বাস্য়াডর (Ambassador) উৎপাদক সংস্থা হিন্দ মোটর্স বা 'হিন্দুস্তান মোটর্স লিমিটেড' (Hindustan Motors Limited)-এর আজ বেহাল দশা ৷ বন্ধ কারখানার জমি ফেরত নিয়ে আবাসন শিল্প গড়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার ৷

author img

By

Published : Dec 14, 2022, 6:45 PM IST

Updated : Dec 14, 2022, 7:40 PM IST

WB Government wants to develop Housing Project on Hindustan Motors vacant Land
Hindustan Motors: অ্য়াম্বাস্য়াডরের আঁতুরঘর এখন সাপের আড্ডা ! হিন্দ মোটর্সের জমিতে আবাসন প্রকল্পের ভাবনা

কলকাতা ও হুগলি, 14 ডিসেম্বর: ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল হিন্দ মোটর্স বা 'হিন্দুস্তান মোটর্স লিমিটেড' (Hindustan Motors Limited)। ভেবেছিল, ধুলো ঝেড়ে আবার শুরু হবে 'দৌড়' ! কিন্তু কোথায় কী ! হিন্দ মোটর্স আজও সেই আঁধারেই ৷ হতাশ সংস্থার কর্মীরা ৷ শ্রমিক আবাসনে বাড়ছে ক্ষোভ ৷

হিন্দ মোটর্সের কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের দেওয়া কথা কেউ রাখেনি ! এই তো মাত্র কয়েকদিন আগের কথা ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে হিন্দ মোটর্সে রাজ্যের প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি ও স্কুটার তৈরির কারখানা শুরু হয় ৷ সেই সময় বলা হয়েছিল, ইউরোপীয় একটি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করা হবে ৷ এখানেই শেষ নয় ৷ হিন্দ মোটর্স কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা জমি ও পরিকাঠামো ধরা হলে মোট লগ্নির পরিমাণ ছিল প্রায় 1 হাজার 200 কোটি টাকা ৷

আরও পড়ুন: প্রয়োজনে 'হিন্দুস্তান মোটর্স'-কে দেওয়া জমি ফেরত নেবে রাজ্য ! শিল্প গড়তে কড়া বার্তা মমতার

কিন্তু এসবের পরও হিন্দ মোটর্স আছে হিন্দ মোটর্সেই ৷ যথারীতি 'দুয়োরানি' হয়ে ৷ 2014 সাল থেকে এই সংস্থায় 'সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক' চলছে ৷ সেই সময় থেকেই প্রায় 2 হাজার 300 কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে ৷ বন্ধ কারখানার আনাচ-কানাচ এই মুহূর্তে জঙ্গলে ভরা ৷ শ্রমিক আবাস যেন সাপের আস্তানা ! যে কোনও দিন ঘটে যেতে পারে বড় কোনও দুর্ঘটনা ৷ তবুও কয়েকজন ভাগ্য বদলের আশায় আজও এসব আঁকড়ে বসে আছেন ৷ কিন্তু, এই অবস্থাতেও হিন্দ মোটর্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই শ্রমিকদের ৷ ইতিমধ্যেই, আবার হিন্দ মোটর্সের বন্ধ কারখানার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার ৷ আর তাতেই অনেকে মনে করছেন, তাঁদের যে সম্ভবনার কথা শোনানো হয়েছিল, তা হয়তো কোনওদিনই আর বাস্তবায়িত হবে না ৷ এবং সেই কারণেই বন্ধ কারখানার অব্যবহৃত জমি ফিরিয়ে নিচ্ছে রাজ্য সরকার ৷

যদিও এই বিষয়ে মালিকপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে সরকারপক্ষের বক্তব্য, নতুন করে শিল্প স্থাপন করতেই এই উদ্যোগ ৷ রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, "সিঙ্গুরে টাটারা চলে যাওয়ার পর রাজ্যে নতুন করে গাড়ির কারখানা তৈরি হোক, চাইছে রাজ্য সরকার ৷ তবে হিন্দ মোটর্সের বন্ধ কারখানার জমিতেই যে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না ৷"

WB Government wants to develop Housing Project on Hindustan Motors vacant Land
খাঁ খাঁ !

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন এই অধিগ্রহণ ? সূত্রের দাবি, আবাসন বা অন্য কোনও শিল্পে ব্যবহৃত হবে এই জমি ৷ এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, "রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় হিন্দমোটর্সকে এই বিশালাকার জমি 'লিজ' দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেই জমিও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৷ বন্ধ কারখানাগুলির অব্যবহৃত জমিতে নতুন করে শিল্পস্থাপনই আমাদের সরকারের লক্ষ্য ৷ সেই হিসাবে হিন্দ মোটর্সের 395 একর যে জমি রয়েছে, সেটা সরকার ফিরিয়ে নিচ্ছে ৷ সেই কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে ৷ এখানে শিল্প হলে তবেই তো কর্মসংস্থান হবে ৷"

অন্যদিকে, স্থানীয় বিজেপি নেতা পঙ্কজ রায়ের বক্তব্য হল, "হিন্দ মোটর্সের জমি অধিগ্রহণ করা হোক ৷ তাতে আমাদের কিছু বলার নেই ৷ কিন্তু আগে যে মানুষগুলির জীবন এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, তাঁদের বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক ৷ আটবছর পর এখন সরকারের 'ল্যান্ড রাইট'-এর কথা মনে পড়েছে ! আট বছর ধরে যে শ্রমিকেরা না-খেয়ে পড়ে রয়েছেন, তাঁদের কথা মনে পড়েনি ? আগে এই কারখানা খোলা হোক ৷ তারপর ঠিক করা হোক, এই কারখানা দিদি চালাবেন, মোদি চালাবেন, নাকি বিড়লারা চালাবে ৷ আমাদের দাবি দিদির কাছে ৷ দিদি, আগে আপনি হিন্দ মোটর্সের শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন ৷"

প্রসঙ্গত, একদিন এই হিন্দ মোটর্স ভারতের সেরা অটোমোবাইল কারখানাগুলির অন্যতম ছিল ৷ তাদের শ্রেষ্ঠ উৎপাদন নিঃসন্দেহে অ্যাম্বাসেডরে (Ambassador) ৷ যা একটা সময় রীতিমতো 'স্ট্য়াটাস সিম্বল' ছিল ৷ সেইসঙ্গে, এই চারচাকা যানের সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল বাঙালির আবেগ ৷ কলকাতার চির পরিচিত হলুদ ট্যাক্সি হোক, কিংবা লাল, নীল হুটার বাজানো মন্ত্রী, আমলাদের কনভয়, সবকিছুতেই ছিল এই হিন্দ মোটর্সের তৈরি অ্যাম্বাসেডর ৷ উল্লেখ্য, ভারতে অ্যাম্বাসেডরের আগমণ হয় স্বাধীনতার 10 বছর পর, অর্থাৎ 1957 সালে ৷ সেই যাত্রার সমাপ্তি ঘটে 2014 সালে ৷

কলকাতা ও হুগলি, 14 ডিসেম্বর: ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল হিন্দ মোটর্স বা 'হিন্দুস্তান মোটর্স লিমিটেড' (Hindustan Motors Limited)। ভেবেছিল, ধুলো ঝেড়ে আবার শুরু হবে 'দৌড়' ! কিন্তু কোথায় কী ! হিন্দ মোটর্স আজও সেই আঁধারেই ৷ হতাশ সংস্থার কর্মীরা ৷ শ্রমিক আবাসনে বাড়ছে ক্ষোভ ৷

হিন্দ মোটর্সের কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের দেওয়া কথা কেউ রাখেনি ! এই তো মাত্র কয়েকদিন আগের কথা ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে হিন্দ মোটর্সে রাজ্যের প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি ও স্কুটার তৈরির কারখানা শুরু হয় ৷ সেই সময় বলা হয়েছিল, ইউরোপীয় একটি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করা হবে ৷ এখানেই শেষ নয় ৷ হিন্দ মোটর্স কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা জমি ও পরিকাঠামো ধরা হলে মোট লগ্নির পরিমাণ ছিল প্রায় 1 হাজার 200 কোটি টাকা ৷

আরও পড়ুন: প্রয়োজনে 'হিন্দুস্তান মোটর্স'-কে দেওয়া জমি ফেরত নেবে রাজ্য ! শিল্প গড়তে কড়া বার্তা মমতার

কিন্তু এসবের পরও হিন্দ মোটর্স আছে হিন্দ মোটর্সেই ৷ যথারীতি 'দুয়োরানি' হয়ে ৷ 2014 সাল থেকে এই সংস্থায় 'সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক' চলছে ৷ সেই সময় থেকেই প্রায় 2 হাজার 300 কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে ৷ বন্ধ কারখানার আনাচ-কানাচ এই মুহূর্তে জঙ্গলে ভরা ৷ শ্রমিক আবাস যেন সাপের আস্তানা ! যে কোনও দিন ঘটে যেতে পারে বড় কোনও দুর্ঘটনা ৷ তবুও কয়েকজন ভাগ্য বদলের আশায় আজও এসব আঁকড়ে বসে আছেন ৷ কিন্তু, এই অবস্থাতেও হিন্দ মোটর্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই শ্রমিকদের ৷ ইতিমধ্যেই, আবার হিন্দ মোটর্সের বন্ধ কারখানার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার ৷ আর তাতেই অনেকে মনে করছেন, তাঁদের যে সম্ভবনার কথা শোনানো হয়েছিল, তা হয়তো কোনওদিনই আর বাস্তবায়িত হবে না ৷ এবং সেই কারণেই বন্ধ কারখানার অব্যবহৃত জমি ফিরিয়ে নিচ্ছে রাজ্য সরকার ৷

যদিও এই বিষয়ে মালিকপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে সরকারপক্ষের বক্তব্য, নতুন করে শিল্প স্থাপন করতেই এই উদ্যোগ ৷ রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, "সিঙ্গুরে টাটারা চলে যাওয়ার পর রাজ্যে নতুন করে গাড়ির কারখানা তৈরি হোক, চাইছে রাজ্য সরকার ৷ তবে হিন্দ মোটর্সের বন্ধ কারখানার জমিতেই যে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না ৷"

WB Government wants to develop Housing Project on Hindustan Motors vacant Land
খাঁ খাঁ !

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন এই অধিগ্রহণ ? সূত্রের দাবি, আবাসন বা অন্য কোনও শিল্পে ব্যবহৃত হবে এই জমি ৷ এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, "রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় হিন্দমোটর্সকে এই বিশালাকার জমি 'লিজ' দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেই জমিও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৷ বন্ধ কারখানাগুলির অব্যবহৃত জমিতে নতুন করে শিল্পস্থাপনই আমাদের সরকারের লক্ষ্য ৷ সেই হিসাবে হিন্দ মোটর্সের 395 একর যে জমি রয়েছে, সেটা সরকার ফিরিয়ে নিচ্ছে ৷ সেই কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে ৷ এখানে শিল্প হলে তবেই তো কর্মসংস্থান হবে ৷"

অন্যদিকে, স্থানীয় বিজেপি নেতা পঙ্কজ রায়ের বক্তব্য হল, "হিন্দ মোটর্সের জমি অধিগ্রহণ করা হোক ৷ তাতে আমাদের কিছু বলার নেই ৷ কিন্তু আগে যে মানুষগুলির জীবন এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, তাঁদের বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক ৷ আটবছর পর এখন সরকারের 'ল্যান্ড রাইট'-এর কথা মনে পড়েছে ! আট বছর ধরে যে শ্রমিকেরা না-খেয়ে পড়ে রয়েছেন, তাঁদের কথা মনে পড়েনি ? আগে এই কারখানা খোলা হোক ৷ তারপর ঠিক করা হোক, এই কারখানা দিদি চালাবেন, মোদি চালাবেন, নাকি বিড়লারা চালাবে ৷ আমাদের দাবি দিদির কাছে ৷ দিদি, আগে আপনি হিন্দ মোটর্সের শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন ৷"

প্রসঙ্গত, একদিন এই হিন্দ মোটর্স ভারতের সেরা অটোমোবাইল কারখানাগুলির অন্যতম ছিল ৷ তাদের শ্রেষ্ঠ উৎপাদন নিঃসন্দেহে অ্যাম্বাসেডরে (Ambassador) ৷ যা একটা সময় রীতিমতো 'স্ট্য়াটাস সিম্বল' ছিল ৷ সেইসঙ্গে, এই চারচাকা যানের সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল বাঙালির আবেগ ৷ কলকাতার চির পরিচিত হলুদ ট্যাক্সি হোক, কিংবা লাল, নীল হুটার বাজানো মন্ত্রী, আমলাদের কনভয়, সবকিছুতেই ছিল এই হিন্দ মোটর্সের তৈরি অ্যাম্বাসেডর ৷ উল্লেখ্য, ভারতে অ্যাম্বাসেডরের আগমণ হয় স্বাধীনতার 10 বছর পর, অর্থাৎ 1957 সালে ৷ সেই যাত্রার সমাপ্তি ঘটে 2014 সালে ৷

Last Updated : Dec 14, 2022, 7:40 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.