হুগলি, 9 জুন : করোনার প্রকোপ রুখতে রাজ্য়জুড়ে কার্যত লকডাউন জারি করেছে সরকার ৷ যার জেরে বন্ধ বাস, অটো ও টোটো পরিষেবা ৷ ফলে বন্ধ গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের রোজগারও ৷ হুগলি জেলায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা 500-রও বেশি ৷ আর টোটো-অটো রয়েছে অন্তত কয়েক হাজার ৷ বিধিনিষেধের জেরে আজ সেসবই ‘অচল’ ৷ কর্মহীন হয়ে ঘোর আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটছে পরিবহণ শ্রমিকদের ৷ বিপাকে পড়েছেন গাড়ির মালিকরাও ৷ গাড়ি কেনার ঋণ শোধ করাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের পক্ষে ৷
গত বছর করোনার কারণে ঘরবন্দি হয়ে যায় গোটা দেশ ৷ মাসের পর মাস চলতে থাকে অচলাবস্থা ৷ তার জেরে প্রায় সাত মাস রুজিরুটি বন্ধ থাকে পরিবহণ ব্য়বসায়ী ও পরিবহণ শ্রমিকদের ৷ পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ফের সংক্রমণের হার বাড়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে যান চলাচল ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় এক মাস বসে ধরে বসে রয়েছে গাড়ি ৷ এতে রোজগার যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনই দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার জেরে গাড়ির কল-কবজা বিগড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ৷
গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধি ৷ এই অবস্থায় কীভাবে গাড়ি চালাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না মালিকরা ৷ কীভাবে চলবে সংসার, জানা নেই পরিবহণ শ্রমিকদেরও ৷ সমস্য়া সমাধানে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছেন হুগলির পরিবহণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা ৷
2 নম্বর রুটের বাস মালিক দেবব্রত ভৌমিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সরকার বাস চালু করা নিয়ে কিছুই বলছে না ৷ এদিকে অটো, টোটো ইচ্ছা মতো চলছে । অটো, টোটো চলুক ৷ আমাদের তাতে সমস্য়া নেই ৷ কিন্তু সরকার আমাদেরও দেখুক ৷’’ একই সুর শোনা গিয়েছে বাসচালক শেখ বিকাশের গলাতেও ৷
ভাল নেই টোটো ও অটোচালকরাও ৷ বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই রাস্তায় বেরোচ্ছেন তাঁরা ৷ কিন্তু তাতে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচটুকুও উঠছে না ৷ স্থানীয় অটোচালক শেখ সহমদ আলি জানালেন, পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে অটো বের করতে হচ্ছে ৷ কারণ, লকডাউন পরিস্থিতিতে গাড়ি বের করার নিয়ম নেই ৷ কিন্তু দিনের পর দিন গাড়ি বসিয়ে রাখলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাবে ৷ তাই বাধ্য হয়েই বেরোতে হচ্ছে ৷ তবে যাত্রী তেমন জুটছে না ৷
হতাশার সুর টোটোচালক বাবুল নন্দীর গলাতেও ৷ তিনি জানান, দোকান-বাজার যে সময়ে খোলা থাকছে, তখনই বেরোচ্ছেন টোটো নিয়ে ৷ তাছাড়া, কিছু মানুষ ব্যাঙ্ক, হাসপাতালে যাচ্ছেন ৷ তাঁরাও টোটো ভাড়া করছেন ৷ কিন্তু এটুকুতে উপার্জন প্রায় কিছুই হচ্ছে না ৷
আরও পড়ুন : বাসের গায়ে পোস্টার লিখে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ মালিকদের
এই অবস্থায় সকলেই চাইছেন, দ্রুত স্বাভাবিক হোক পরিস্থিতি ৷ স্বাভাবিক হোক যান চলাচল ৷ তা না হলে পরিবার নিয়ে হয়তো পথে বসতে হবে খেটে খাওয়া এই মানুষগুলোকে ৷ একইসঙ্গে সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন, সম্ভব হলে বাড়তি কিছু আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিক সরকার ৷