চণ্ডীতলা, 24 মে: বুধবার প্রকাশিত হয়েছে রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ৷ এবারের মেধা তালিকায় রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের কৃতীদের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে হুগলির চণ্ডীতলার জনাই ট্রেনিং হাইস্কুলের স্মরণ্যা ঘোষ ৷ 490 নম্বর পেয়ে সপ্তম হয়েছেন স্মরণ্যা ৷ তবে বাকি কৃতী পড়ুয়াদের সঙ্গে কিছুটা ফারাক রয়েছে এই পড়ুয়ার ৷ সেই ফারাক তাঁর লড়াইয়ের, তাঁর যাপনের ৷ কারণ আর পাঁচজন পরীক্ষার্থী যখন পরীক্ষার আগে পড়েছেন তাঁদের ফল ভালো করতে ৷ স্মরণ্যাকে তখন লড়তে হয়েছে আরও এক লড়াই ৷ সেই লড়াই ছিল তাঁর নিজের মধ্যে চলা মানসিক দ্বন্দ্বের সঙ্গে ৷ নিজেকে নিজের মতো করে গ্রহণ করার লড়াই ৷ কারণ তিনি একজন রূপান্তরকামী ৷ তবে সমাজের বাঁকা চোখ, কটাক্ষ ও নিজের মনে চলতে থাকা প্রাথমিক দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করেই নিজেকে নিজের মতো করে গ্রহণ করে এগিয়েছেন এই কৃতী পড়ুয়া ৷ লিখেছেন সাফল্যের এক নয়া সোপান ৷
তাঁর ভিতরের ও বাইরের দুই সত্ত্বার সঙ্গে লড়াইয়ের জটিল মানসিক টানাপোড়েনকে পিছনে ফেলেই স্মরণ্যা এখন সফল ৷ তাঁর সাফল্যে খুশি এই কৃতীর পরিবার ও শিক্ষকরা ৷ নিজেকে ইতিমধ্যেই রূপান্তরকামী হিসেবে প্রকাশ করেছেন স্মরণ্যা ৷ লিঙ্গগত পরিচয়ের দিক দিয়ে পুরুষ হলেও তাঁর ভিতরে যে এক নারী সত্ত্বা আছে সেটা প্রথম থেকেই বুঝতে পারতেন স্মরণ্যা । তাই স্কুলে মেয়েদের সঙ্গে খেলা ও ওঠাবসা তাঁর । এরজন্য সহপাঠীরা অনেকে বাঁকা চোখে দেখত তাঁকে । শুনতে হয়েছে কটাক্ষ ও কটূ কথাও ৷ কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় স্মরণ্যা নিজেকে প্রকাশ করে । তাঁর ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ৷
স্মরণ্যার কথায়, "স্কুলের স্যার, ম্যাডামরা সাহায্য করেছেন । আমি জন্মে ছিলাম পুরুষের শরীরে । কিন্তু অন্তরআত্মা থেকে মেয়ে ছিলাম । সমাজ পুরুষ জানালেও আমি মেয়ে হিসাবে মনে করতাম নিজেকে । রূপান্তরকামী হিসাবে বাঁচাতে চাই । আমাকে সমর্থন করেছিলেন বাবা, মা ও শিক্ষকরা । সকলকে বলব আমাদের মানুষ হিসাবে দেখতে । আমার মতো যাঁরা আছে তাদের বলব শিক্ষাই একমাত্র অস্ত্র । সমাজের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মধ্যে সবাইকে লড়াই করতে হয় । আমিও লড়াই করেছি ।"
আরও পড়ুন: হাজারও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মাধ্যমিক পাশ পোলবার মহসিনার
ইতিহাসে 100 এ 100 পেয়েছেন এই কৃতী ৷ ভবিষ্যতে তিনি সিভিল সার্ভিসে যেতে চান বা অধ্যাপক হতে চান ৷ চান তাঁর কাজের মাধ্যমে রূপান্তরকামীদের পাশে দাঁড়াতে, এই লড়াইয়ের বিষয়ে অন্যদের সচেতন করতে ৷ তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক রজতকুমার কুণ্ডু বলেন,"আমরা জানতাম স্মরণ্যা ভালো ফল করবে । ও গত এক-দেড় বছর ধরে প্রচণ্ড মানসিক টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে । তারপরেও যে ও এই রেজাল্ট করবে সেটা আমরা জানতাম কারণ ওর মধ্যে একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে । আর্টস বিভাগে ওর এই ফল নজরকাড়া । ওর প্রিয় বিষয় ইতিহাসে একশো পেয়েছে । আগামী দিনে ও আরও সফল হোক এটাই চাই ।"