চুঁচুড়া, 17 মে : দীর্ঘ তিন বছর শয্যাশায়ী বাবা ৷ চরম দৈন্যতায় ওষুধ-পথ্য তো অনেক দূরের, দুবেলা দুমুঠো জোগাতেই বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে চুঁচুড়ার অন্তার বাগানের দত্ত পরিবারে ৷ এমন কঠিন পরিস্থিতিতে বাবাকে বাঁচাতে বছর এগারোর মেয়ে তিতলি নেটমাধ্যমে একটি ভিডিয়োয় কাতর আবেদন জানায় ৷ আর তার সেই আবেদনে সাড়া দেন সাংসদ অভিনেতা দেব ৷ টুইট করে তিতলির পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন ৷ দেব ছাড়াও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আরও অনেকে ৷
তিতলির বাবা, সন্দীপ দত্ত বছর তিনেক অসুস্থ ৷ লিভার ও কিডনির রোগে আক্রান্ত ৷ প্রথমে তাঁর অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা ধরা পড়ে ৷ হাই সুগার থাকায় লিভার ও কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয় ৷ ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়ে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেন ৷ অগ্ন্যাশয়ে অস্ত্রোপচারে খরচ সাড়ে ছয় লাখ, যা দত্ত পরিবারের দেওয়া অসাধ্য ৷ তাই বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয় সন্দীপবাবুকে ৷
চলতি বছরের মার্চ মাসে কয়েকজনের আর্থিক সহায়তায় হায়দরাবাদে গিয়ে চিকিৎসা করান সন্দীপবাবু ৷ হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, অস্ত্রোপচার করলেও সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় নেই ৷ তাই ফের সেখান থেকে ফিরে আসতে হয় তাঁকে ৷ অবশেষে সন্দীপবাবুকে কলকাতার শিশুমঙ্গল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, হাইসুগারের কারণে কোমরের নিচ পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়িয়েছে ৷ অস্ত্রোপচার হয় ৷ তারপর থেকে তিনি শয্যাশায়ী ৷ আপাতত চলছে ওষুধ ৷
আরও পড়ুন : দিদি আমার বাচ্চাকে কোলে নিলেন, সাহস পেলাম ; বললেন নিহতের স্ত্রী
চুঁচুড়ার অন্তার বাগানে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন সন্দীপ দত্ত ৷ সল্টলেকের একটি গাড়ি সংস্থায় কাজ করতেন সন্দীপ বাবু ৷ অসুস্থতার কারণে চাকরিটা হারান তিনি ৷ তারপর থেকেই সন্দীপ বাবুর স্ত্রী মুনমুন কাগজের ঠোঙা তৈরি করে কোনও ক্রমে সংসার চালান ৷ সন্দীপবাবুর জন্য প্রতিমাসে ওষুধ বাবদ লাগে চার হাজার টাকা ৷ দুবেলা খাবার জোটানো এখন মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
অগত্যা সন্দীপ ও মুনমুনের মেয়ে তিতলি নেটমাধ্যমে বাবার অসুস্থতার কথা ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করে ৷ তার আবেদন, "দু-তিন বছর ধরে আমার বাবা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে ৷ অর্থ সঙ্গতি না থাকায় আমরা চিকিৎসা করাতে পারেনি ৷ আমার বাবার অগ্ন্যাশয়, লিভার, কিডনি তিনটিই ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে ৷ আমার বাবা খুবই অসুস্থ ৷ আমাদের ওষুধ কেনার কোনও পয়সা নেই ৷ দুবেলা দুমুঠো খেতেই পাই না ৷ ওষুধ কোথা থেকে কিনব ?"
তিতলির করুণ আবেদনে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার এবং একটি শিক্ষকদের সংগঠন ৷