বলাগড়, 21 জুন: পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের প্রকাশ্যে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ৷ এবার টিকিট নিয়ে গণ্ডগোলের জের ৷ ক্ষোভে সোশাল মিডিয়ায় দলীয় পদ থেকে ইস্তাফা দেওয়ার ঘোষণা করলেন বলাগড়ের তৃণমূলের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী ৷ হুগলি জেলার 2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটির সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন তিনি ৷ তবে এখনই বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না বলে জানিয়েছেন ৷
এই তৃণমূল বিধায়ক বুধবার সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, "এই দুটি দলীয় পদ থেকে ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করলাম ৷ বিধায়ক পদ থেকেও ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল । কিন্তু যেহেতু আমি একটি চাকরি করতাম নির্বাচনে দাঁড়াবার জন্য সেটি ছাড়তে হয়েছিল ! দু'বছরের অধিক সময় হয়ে গেল 50 বার ছোটাছুটি করেও যার পেনশন ও গ্র্যাচুইটির কিছুই পাইনি, তাই এই মুহূর্তে বিধায়ক পদ ছাড়তে পারছি না । তাহলে খাব কী ? যেদিন পেনশন পেতে আরম্ভ করব এই পদ থেকেও সরে দাঁড়াব ।"
এর আগেও তিনি বলাগড় ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে টিকিট বিক্রির অভিযোগ এনেছেন । এবার দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী । বলাগড় ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মূলত মনোরঞ্জন ব্যাপারীর অভিযোগ, তিনি টাকা নিয়ে টিকিট বণ্টন করেছেন । বিধায়ককে যে টিকিট দেওয়ার কথা ছিল সেই টিকিট তাঁকে দেওয়া হয়নি । বলাগড়ে তেরোটি ও তাঁর বিধানসভার মগড়ায় চারটি পঞ্চায়েত রয়েছে ।
আরও পড়ুন: বিরোধী শূন্য ব্লক চেয়ে সোশাল মিডিয়ায় উদয়নের বিতর্কিত পোস্ট
মনোরঞ্জন ব্যাপারী জানান, দলীয় প্রতীক একজন প্রার্থীকেই দেওয়া হয় । এক একটি আসনের জন্য । তাহলে বলাগড়ে যতজন কে প্রার্থী করা হয়েছে ততগুলি দলীয় প্রতীক দেওয়া উচিত । বিধায়কের অভিযোগ, তা না করে দুটি করে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়েছে । এমনকী পানের দোকান থেকে প্রতীক বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি । দলের নির্দেশ ছিল, নামের তালিকা প্রকাশের পর মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে ৷ কিন্তু ব্লক সভাপতি 224টি আসনে আগেই মনোনয়ন জমা করেছিলেন । মঙ্গলবার ছিল মনোনয়ন তোলার শেষ দিন । সেখানে প্রথমে যে মনোনয়ন জমা দিয়েছিল সেই দলের টিকিট পেয়েছে বলে দাবি এই বিধায়কের ।
মনোরঞ্জন ব্যাপারী ইটিভি ভারত বলেন, "বিজেপি-সিপিএম সবার সঙ্গে লড়াই করব ৷ কিন্তু নিজের দলের লোকেদের সঙ্গে আর লড়াই করতে চাই না । আমাদেরও দলীয় প্রতীক দিয়েছে ৷ ওদেরও দলীয় প্রতীক দিয়েছে । আমরা অপেক্ষা করেছিলাম তালিকায় কখন নাম আসবে সেই নাম গুলি মনোনয়ন দেব । নবীন গঙ্গোপাধ্যায় সবকটি আসনে মনোনয়ন করেছে । তালিকায় নাম আসার পরেই আমরা সেই নাম মনোনয়ন করাই । এরপর দল নবীন ও আমাদেরকেও টিকিট দিয়েছে । যেহেতু আমরা পরে নমিনেশন দিয়েছি, তাই তাদের প্রার্থীরাই প্রাধান্য পেয়েছে । তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এত অতিরিক্ত প্রতীক পান দোকান থেকে বিক্রি হল কী করে? এত অতিরিক্ত প্রতীক ব্লক সভাপতি পেল কীভাবে? বিধায়কের আশংকা, এখন তাঁর পক্ষে 20 থেকে 25টা প্রার্থী থাকে কি না সেটাই সন্দেহ ।"
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত সমিতির আসন হাতছাড়া, প্রার্থী দিতে পারল না তৃণমূল
মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন, "বিধানসভায় যারা আমার হয়ে লড়াই করেছে তাদের সব নাম কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছে । সেখানে নবীনের দলের লোকেদের প্রার্থী করা হয়েছে । মগরা ব্লকে আমাকে একটিও টিকিট দেওয়া হয়নি ৷ অনেক লড়াই করে হোয়ড়া দিকসুইয়ে কয়েকটা আসন বার করতে পেরেছি । চন্দ্রহাটি, মগড়াতে কয়েকটি আসন পেয়েছি ৷ যেন মনে হচ্ছে ভিক্ষা দিচ্ছে । অনেকবার উচ্চ নেতৃত্বকে জানিও কিছু হয়নি । আমাদের শুধু সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে । দলীয় নেতৃত্ব এর সঙ্গে সম্পূর্ণ যুক্ত রয়েছে । আমি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম ৷ তাঁর কাছে পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলাম । আমাকে সেই সময়ও দেওয়া হয়নি ।"
হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অরিন্দম গুঁইন বক্তব্য, আমরা তাঁর লেখা চিঠি কিছু পাইনি ৷ ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন তিনি ৷ দলকে লিখিত কিছু জানাননি । কী কারণে ইস্তফা দিচ্ছেন জানা নেই । সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ দায়িত্ব আছে দলকে জেতানোর ৷ হয়তো অন্য কোন চাপ না রেখে বিধায়ক পদটা রেখে দলের কাজ করে তৃণমূলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান । আমাকে ইস্তফা পত্র দিলে আমি দলকে সেটা পাঠিয়ে দেব । দল একটা নিয়মে চলে ৷ ওঁনারো উচিৎ দলের নিয়ম মেনে চলা । ওঁনার যদি কোন অসুবিধা হয় তাহলে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করুক । উনি বলেছেন সাহিত্যক মানুষ ৷ রাজনীতি ওনার জন্য নয় ।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে টিকিট বন্টনের অভিযোগ চোপড়ার তৃণমূল বিধায়কের
পেনশন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী ৷ সে নিয়ে অরিন্দম গুঁইন বলেন, "পেনশনের ক্ষেত্রে অনেক সময় কাগজপত্র ঠিক না থাকলে সমস্যা হয় । ইচ্ছা করে আটকে রাখার ব্যাপার নেই । পঞ্চায়েত ভোটের আগে এতে কোন সমস্যা হবে না, কারণ তিনি দলের পদ ছাড়ছেন ৷ এর সঙ্গে ভোটের কোন সম্পর্ক নেই ।"