কোন্নগর, 30 মে: পেশায় টোটো চালক অরূপ ৷ পেটের তাগিদে টোটো চালানোর ফাঁকেই যাত্রীদের একটু আনন্দ দিতে গান শোনান তিনি ৷ তাঁর সেই গানই এখন ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায় । এর দৌলতে সবার মুখে মুখে ফিরছে অরূপের নাম ৷ তবে গান নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে থাকলেও পরিস্থিতির কাছে হার মেনেছেন তিনি ৷ ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে অরূপের ভেতরের শিল্পী সত্ত্বা ৷ টোটোতে বসে নিজের জীবন যুদ্ধের সেই কথাই শোনালেন তিনি ৷
হুগলির কোন্নগরের বাসিন্দা অরূপ দাস । বাড়িতে মা, বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁদের ছোট্ট সংসার । উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর থেকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল তাঁকে । বর্তমানে প্রায় সাত বছর ধরে কোন্নগর উত্তরপাড়া বালি এই অঞ্চলে টোটো নিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেন । তবে যাত্রীদের বাড়তি পাওনা অরূপের কাঁচা সুরের গান । বছর 40 এর অরূপের সংগীতে হাতে খড়ি হয় বাবা গদাধর দাসের থেকে । বাবা একজন ভালো তবলচি ছিলেন । বিভিন্ন জায়গায় শাস্ত্রীয় সংগীতের আসরে তবলা বাজানোর জন্য ডাক পড়ত তাঁর । ছোটো থেকেই বাবার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন অরূপ । সেই থেকেই সংগীত চর্চার মধ্যে আশা তাঁর ।
ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে গান শেখা । এরপর বিভিন্ন গান ও নাটকের দলে গান গাওয়া তাঁর । মূলত হিন্দি ও ভাটিয়ালি গান করেন তিনি । কিন্তু পরিবারে রোজগার করার সেরকম কেউ নেই । বর্তমানে বাবা ও অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী । বেকারত্বের জ্বালায় বাধ্য হয়ে টোটো চালিয়ে কোনরকমে দিন গুজরান করছেন অরূপ । কিন্তু প্রতিভা চাপা রাখা যায় না । যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার সময় মাঝে মধ্যেই তিনি গান ধরেন ৷ কখনও লোকগান তো কখনও হিন্দি । আর সেই গান শুনে অভিভূত হন অনেক যাত্রীরা । এখন তার গলার গান বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলেও এখনও তিনি সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন । যদি কোন সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ বা সংস্থা সুযোগ দেন তাঁকে তাহলে অরূপ ফিরে পাবেন তাঁর শিল্পী সত্ত্বাকে ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানে ব্রাত্য স্রষ্টা, সিউড়ির বৃদ্ধের স্বীকৃতি আদায়ে উদ্যোগী ইটিভি ভারত
টোটো চালানো একইসঙ্গে গান গাওয়া নিয়ে অরূপ জানান, গান গাইতে তার বরাবরই ভালো লাগে । একই সঙ্গে ভালো লাগে বিভিন্ন লোকের গলা নকল করতে । এক সময় তিনি ভেবেছিলেন এই করেই জীবনযাপন করবেন । তবে বর্তমান সময়ে গান করে জীবন ধারণ করার অবকাশ তাঁর নেই । অরূপ বিয়ে করেছেন ৷ বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ মা বাবা ৷ তাই রোজগারের তাগিদে প্রতিদিন সকাল হতে না হতেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অরূপ । আর গান তো তার সারা জীবনের সঙ্গী । তাই সর্বদা প্রাণোচ্ছল মানুষটি নিজের কাজ করতে করতেই গুনগুন করে গান গান এবং তার সুরেই মুগ্ধ হন যাত্রীরা ।