আরামবাগ, 5 মে: 2011 সালে মমতার স্লোগান ছিল বদলা নয় বদল চাই । 2016 সালেও ক্ষমতায় আসে তৃণমূল । এবারও 200-র বেশি আসন নিয়ে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, এবার গণনা শেষ হতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ধরা পড়ল হিংসার ছবি। সংঘর্ষে বাড়ছে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা । একই চিত্র ধরা পড়ল হুগলি জেলায় । আরামবাগ, ধনিয়াখালি, পাণ্ডুয়া, বলাগড়, হরিপাল সহ একাধিক জায়গায় পার্টি অফিস ভাঙচুর , খুন ও দুই দলের কর্মীরা গুরুতর আহত হয়েছেন । তবে শুধু বিজেপি কর্মীরাই মার খাচ্ছে তা নয়, একাধিক তৃণমূল কর্মীও আহত হচ্ছে । রাজনৈতিক নেতারা একে অপরকে দোষারোপ করছে । তবে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
পাণ্ডুয়ায় ভোট পরবর্তী বেশ কয়েকটি জায়গায় হিংসার চিত্র উঠে আসে । পান্ডুয়ায় নিয়ালার বিজেপির বুথ সভাপতির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয় । ছিঁড়ে ফেলা হয় মোদির ছবি, বুথ সভাপতি বিশ্বজিৎ প্রামানিকের বাবাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ । বাড়ির গ্রিলে ধাক্কা দেওয়া হয় । তারা প্রত্যেকেই বহিরাগত বলে অভিযোগ বিজেপির । অন্যদিকে কোটাল পুকুরে তিনটি দোকানে ভাঙচুর করা হয় । ঘটনা স্থানে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে । আহত একজন । পাণ্ডুয়া থানায় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী রুট মার্চ করছে । তৃণমূলের দাবি তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে নয় । বিজেপির পায়ের তলায় মাটি সরে গেছে তাই তারা নিজেদের মধ্যে এসব করছে ।
বলাগড়ের বারুজীবী কলোনিতে তৃণমূল সমর্থকদের পিকনিকে হামলা বিজেপির । ভোজালীর আঘাতে আহত পাঁচ জন গুরুতর আহত দুই । বাপ্পা ঘোষ নামে এক তৃনমূল কর্মিকে এস এস কে এম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । ঘটনায় গ্রেফতার চারজন বিজেপি কর্মী । পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,গতকাল রাতে শ্রীপুর বারুজীবীতে জয়ের আনন্দে পিকনিক করছিল জনা চল্লিশ তৃণমূল কর্মী সমর্থক। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ খাওয়া দাওয়া চলছিল ঝড় বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ চলে যায় এলাকায় । অন্ধকারে তৃনমূলের উপর হামলা চালায় বিজেপির কয়েকজন । ছুরি ভজালি নিয়ে এলোপাথারি মারতে থাকে । তৃণমূল কর্মী বাপ্পা ঘোষের পেটে ভোজালি ঢুকিয়ে দেয় । তাকে বাঁচাতে গেলে তার ভাই বাপন ঘোষকেও ছুরি মারে । আরও কয়েকজন ছুরিকাহত হয়, কান কেটে দেওয়া হয় । তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয় জিরাট হাসপাতালে । গুরুতর আহত দুজনকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ।
তৃণমূল নেতা শান্তনু ব্যানার্জি বলেন, "দলের কর্মীরা একটু পিকনিক করে আনন্দ করছিল। সেখানে অতর্কিতে হামলা চালায় বিজেপি। 30 জন তৃণমূল কর্মীদের মারধর করা হয়েছে বারুজীবীর ওই বুথে বিজেপি বরাবরই গন্ডগোল করে। বাপন ও তার ভাই আর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে । অনিমেষ দেবনাথ নামে এক বিজেপি কর্মী সহ কয়েকজন এই হামলা চালিয়েছে। বেচু নায়েক ও অলোক কুন্ডুর নির্দেশে। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। পুলিশকে বলেছি দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। শোচনীয় হারের পরেও এই হামলা। বিজেপি জিতলে আমাদের খুন করত৷ "
সকাল থেকেই নালিকুলে স্টেশন সংলগ্ন বিজেপির পার্টি অফিসে হামলা চালায় তৃণমূল । অভিযোগ বিজেপির পার্টি অফিসে ভেঙে মোদির ছবি, টিভি সহ জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয় । বেশ কয়েকজনকে মারধর করা হয় । হরিপাল বিধানসভার বিজেপির ইলেকশন এজেন্ট মনোজ সিংহ বলেন, গতকাল রাত 1 টা নাগাদ পার্টি অফিসের পিছনদিক থেকে ভাঙচুর করা হয় । পার্টি অফিসের ভিতর টিভি আলমারি, পাখা ভাঙচুর করা হয় । অনেক কাগজপত্র হারিয়ে গেছে। তাছাড়া হরিপালে 4 জন বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে । 10 জনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে । এই সমস্ত ঘটনা ঘটিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা । এই অভিযোগ অস্বীকার করেন তৃণমূল জয়ী প্রার্থী করবী মান্না ।
বিজেপি হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চ্যাটার্জি বলেন, "বিজেপিকে সব জায়গায় মারা হচ্ছে বিজেপি কোথাও মারেনি । বলাগড়ে একটা সংঘর্ষ হয়েছে তৃণমূল মেরেছে আমাদের ছেলেরাও মেরেছে । আমাদের কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে । এই ঘটনা সর্বত্র চলছে । বলাগড় থানার পুলিশ জানিয়েছে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।"
ধনেখালির তৃণমূল কর্মী অসীমা পাত্র বলেন, "2019 এর পর লকেট চ্যাটার্জি যেভাবে অশান্তি ছড়িয়ে ছিল । সেই অশান্তি আঁচ আজও আছে । বিজেপি সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করেছিল । এই ধনেখালি মানুষ ও তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা যথেষ্ট শান্ত আছেন । বিজেপি যদি বলে সন্ত্রাস হচ্ছে সেটা ভুল । যারা বলছেন ঘরছাড়া আছেন তাদের লিস্ট দিলে আমি তাদের ঘরে ঢুকিয়ে দেব। মমতা ব্যানার্জির আদর্শ আমরা কোনদিনই সন্ত্রাস করতে চাই না ।"