চন্দননগর, 17 সেপ্টেম্বর : বিশ্বকর্মা পুজো ৷ আর তাই দেদার বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের সুতো ও ঘুড়ির । চুঁচুড়া, চন্দননগর ও শ্রীরামপুর সহ একাধিক শহরে রাস্তার ধারে রয়েছে অস্থায়ী ঘুড়ির দোকান । সেই দোকানগুলিতে কাগজের ঘুড়ির বদলে প্লাস্টিক ঘুড়ি ও সুতির সুতোর বদলে প্লাস্টিক সুতোর চাহিদাও বেড়েছে । বাচ্চা থেকে বড় সকলেই সুতির সুতোর বদলে কিনে নিয়ে যাচ্ছে টেঁকসই ও কম দামের প্লাস্টিকের ঘুড়ি ও সুতো । এই প্লাস্টিক সুতোর কারণেই প্রতি বছর দুর্ঘটনা লেগেই থাকে । এই ধারালো সুতোর জন্য বিপদে পড়েছে পাখিরাও ৷ পাখি ছাড়াও শীতের শুরুতেই পরিযায়ী পাখির আসে গোটা হুগলি জুড়ে । বাসা বাঁধে বিভিন্ন গাছে । এই প্লাস্টিক সুতো সেইসব গাছে থেকে যায় । তাই পাখিরা গাছে বসতেই পায়ে জড়িয়ে মারা যাচ্ছে । ঘুড়ি ওড়ানোর সময় এই প্লাস্টিক সুতোতে গলাও কাটছে ।
অন্যদিকে প্লাস্টিক ব্যবহার বাড়ায় বাড়ছে দূষণও । তবে, প্রশাসনের তরফে সেভাবে কোনও তৎপরতা নেই বললেই চলে । ঘুড়িপ্রেমীদের কেউ কেউ সচেতন হলেও বেশিরভাগই দাম কমের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এই সুতো ও ঘুড়ি । দোকানদারদের দাবি, ''প্লাস্টিক সুতোর চাহিদা বেশি তাই বিক্রি করছি । বন্ধ করতে হলে কারখানা বন্ধ করতে হবে ।''
প্রশাসনিক তরফে হুগলির জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর বলেন, ''এগুলির জন্য সচেতনতা প্রয়োজন । জোর করে প্লাস্টিক সুতো ও ঘুড়ি বা অন্য যে কোনও কিছু ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না । এলাকার পৌরসভা বা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে বন্ধ করতে হবে এর বিক্রি ।''
এক বিক্রেতা পূজা ঘোষ জানান, মোবাইলের আসক্তি কমাতে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে তাঁর সন্তান । তাই প্লাস্টিক ঘুড়ি ব্যবহার নিয়ে তিনি সচেতন হলেও সন্তানের জন্য তা কিনেছেন । এক দোকানদার রোহিত সাউ বলেন, ''প্লাস্টিক ঘুড়ি ও সুতো বাজারে খুব চলছে । সুতির সুতো চলছেই না । প্লাস্টিক সুতো 40 টাকা থেকে 100 টাকায় বিক্রি হচ্ছে । সে জায়গায় সুতির সুতো 250 টাকা থেকে শুরু । দাম বেশি হওয়ার জন্য সুতোর বিক্রিও কম ।''
পশুপ্রেমী চন্দন ক্লেমেন্ট সিং বলেন, ''সুতির সুতোর বদলে মাঞ্জা দেওয়া প্লাস্টিক সুতো বিক্রি হচ্ছে বাজারে । এই সুতো সম্পূর্ণ বাইরে থেকে কম পয়সায় আসছে । সমস্যা হচ্ছে এই চাইনিজ সুতো নষ্ট হচ্ছে না । হুগলি জেলার যে সমস্ত জায়গায় গাছপালা রয়েছে সেখানে ঘুড়ি কেটে সুতো থেকে যাচ্ছে । সেই সুতোতে ডানা কেটে যাচ্ছে পাখিদের ।'' তাঁর কথায়, তাতেই পাখিরা বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে । পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । প্রিভেন্স অফ ক্রুয়েলটি আইনে কোনও পশু-পাখি নির্যাতন করা যাবে না । এই সুতো ও ঘুড়ি বন্ধ করে দেওয়া দরকার ।
পরিবেশপ্রেমী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ''প্রধানমন্ত্রী প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন । সে জায়গায় প্লাস্টিক সুতোর ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা করা উচিত । শব্দবাজি নিয়ে আইন করে বন্ধ করা হয়েছে । এক্ষেত্রে আইন তৈরি করা উচিত প্রশাসনের । '' চুঁচুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, '' আমাদের আবেদন থাকছে উৎসবের দিনে কোনওরকম দুর্ঘটনা না ঘটে ।''