রিষড়া, 3 এপ্রিল: "রবিবার রাতে যখন অশান্তি শুরু হল, তখন কেমন ছিল এলাকার পরিস্থিতি ?" ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির মুখে এই প্রশ্ন শুনে আর ক্য়ামেরা দেখে অনেকেই মুখে কুলুপ আঁটলেন ! কেউ কেউ আবার পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন আড়ালে ! এদিকে, সরু গলিপথে ঠিকমতো পা ফেলাই দায় ! কারণ, তখনও সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে কাচের বোতলের টুকরো, পোড়া কাপড়, ঢিল, ইট, পাথর ! গলিপথের দুই ধারে সার দিয়ে রয়েছে টালির চালের বাড়ি ৷ সেই টালিতে তখনও স্পষ্ট পোড়া দাগ ! পোড়া ক্ষত দগদগ করছে বহু বাড়ির দরজায়, জানলার পাল্লায় ! সোমবার সকালে এটাই ছিল হুগলির রিষড়ার এক বসত এলাকার ছবি ! রবিবার রাতে এখানেই রামনবমীর শোভাযাত্রা যাওয়ার সময় ছড়ায় অশান্তি ৷ তারপর থেকে থমথমে সারা এলাকা ৷ ভয়ে ঘর-বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছেন বহু বাসিন্দা ৷ যাঁরা থেকে গিয়েছেন, তাঁদের চোখে-মুখেও আতঙ্ক স্পষ্ট !
এলাকার এক বাসিন্দা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হলেন ৷ তিনি জানান, এমনটা যে ঘটতে চলেছে, তা আগে থেকে কিছুই আঁচ করতে পারেননি তাঁরা ৷ এলাকা দিয়ে রামনবমীর শোভাযাত্রা যাচ্ছিল ৷ তখনই হঠাই করে হামলা শুরু হয় ৷ কে হামলা করছে, কেন হামলা করছে, কোনও কিছুই বোঝার উপায় ছিল না ৷ বাসিন্দারা শুধু দেখলেন, পাশের বহুতল থেকে ছোড়া হচ্ছে একের পর এক পেট্রল বোমা ! উড়ে আসছে ইট, পাটকেল, ঢিল ! প্রাণ বাঁচাতে সবাই তখন দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দিয়েছেন ! ঘরে ঢুকে দরজা এঁটে সারারাত ভয়ে কেঁপেছেন বাসিন্দারা ৷
ঘটনার সময়েই পুলিশের আধিকারিকদের ফোন করা হয় ৷ তাঁরা এলাকায় বাহিনীও পাঠান ৷ কিন্তু, তাতে বিশেষ কোনও লাভ হয়নি বলেও অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা ৷ কারণ, হামলাকারীরা পুলিশকেও রেয়াত করেনি ! পেট্রল বোমা ছোড়া হয়েছে তাদের দিকেও ! এই ঘটনার জন্য এলাকারই এক কাউন্সিলরকে কাঠগড়ায় তুলছেন বাসিন্দারা ৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই কাউন্সিলরের বাড়ি থেকেই ছোড়া হয়েছে পেট্রল বোমা !
আরও পড়ুন: 'সত্য চাপতেই আমাদের আটকানো হচ্ছে' ! রিষড়ায় ঢুকতে না পেরে তোপ সুকান্তর
রবিবারের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷ চড়ছে রাজনীতির পারদ ৷ কিন্তু, তা নিয়ে বাসিন্দারা খুব একটা ভাবতে চান না ৷ কারণ, তাঁরা দেখেছেন, আপদকালীন সময় কেউ পাশে থাকে না ! প্রাণ নিয়ে টানাটানি হয় তাঁদেরই ! তাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা ৷ ভাবছেন ক'টা দিন অন্য় কোথাও গিয়ে থাকবেন ৷ তাতে প্রাণটা অন্তত বাঁচবে ৷ কিন্তু, বাড়ি-ঘর পুরোপুরি ছেড়ে যাওয়ারও সাহস পাচ্ছেন না অনেকে ! ভুক্তভোগীদের আর্তি, রাজনীতি রাজনীতির মতো হোক, কিন্তু, আইনের রক্ষাকর্তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করুন ৷ শাস্তি পাক প্রকৃত দোষীরা ৷ এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করুক পুলিশ প্রশাসন ৷