রিষড়া, 4 এপ্রিল: উত্তপ্ত রিষড়া আজও কিছুটা থমথমে ৷ রবিবারের পর সোমবার রাতে ফের অশান্তির ঘটনা ঘটে হুগলির এই এলাকায় ৷ রামনবমীর সন্ধ্যায় শিবপুর ও ডালখোলায় একপ্রস্থ অশান্তির ঘটনা ঘটেছে ৷ তার রেশও কাটেনি ৷ বারবার এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ মঙ্গলবার সকালে দার্জিলিংয়ে তাঁর নির্ধারিত কর্মসূচিতে বদল এনে দ্রুত কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ৷ কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ৷ তিনি বলেন, "মানুষের শান্তিতে থাকার অধিকার আছে ৷ দোষীরা ছাড় পাবে না ৷" এরপরই রিষড়ায় যান ৷
রিষড়ায় পৌঁছে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ৷ গতকাল রাতে 4 নং রেলগেট সংলগ্ন এলাকা অশান্ত হয়ে ওঠে ৷ পুলিশের ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে ৷ পুলিশও পালটা ইট ছুড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ আজ সেই 4নং রেলগেটে গেলেন রাজ্যপাল ৷ পুলিশ কমিশনার-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি ৷ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে ঘিরে রেখেছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী ৷ রেলগেট এলাকায় তখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইটের টুকরো, পাথর, ভাঙাচোরা কাঠের টুকরো ৷ এসব কিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন রাজ্যপাল ৷
এলাকা পরিদর্শন শেষে গাড়িতে ওঠার আগে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন ৷ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চান ৷ সেখানে তিনি প্রথমে সবাইকে শান্ত হওয়ার নির্দেশ দেন ৷ রাজ্যপাল বলেন, "আমার এখানে আসা তথ্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে ৷ আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, প্রথমে আমি দেখব, বিশ্লেষণ করব, মূল্যায়ন করব এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেব ৷ কড়া পদক্ষেপ নেবে তদন্তকারী সংস্থাগুলি ৷ আমরা দুষ্কৃতীদের রেয়াত করব না ৷ কোনও তাণ্ডব হতে দেব না ৷ তারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবে, এটা হবে না ৷ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেবে ৷ এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে ৷ বাংলার মানুষের শান্তিতে বসবাসের অধিকার আছে ৷ সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ৷ দীর্ঘদিন ধরে বাংলা এ ধরনের মেরুকরণের রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা সহ্য করে আসছে ৷ এবার তা শেষ হবে ৷ এ বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ নেই ৷ ভারত সরকার, রাজ্য সরকার, রাজনৈতিক দলগুলি, সংবাদমাধ্যম, সাধারণ মানুষ, যে বিশাল সংখ্যক মানুষ চুপ করে আছে- তারা সবাই একসঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে ৷ এই গণতান্ত্রিক রাজ্যে অব্যবস্থা তৈরি হয়েছে ৷ ভারতের বিদ্বেষী মানসিকতার লোকজন ভারতকে ভাগ করতে চাইছে ৷ দেশের বিরুদ্ধে কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে ৷ তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আত্মনির্ভর ভারতের উন্নয়নের গতি রুখতে চাইছে ৷ আত্মনির্ভর ভারতের অন্যতম অংশ আত্মনির্ভর বাংলাও ৷ আমরা একসঙ্গে কাজ করে অশুভ শক্তির নাশ করব৷ শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে ৷ অপরাধীদের কারাগারে পাঠানো হবে ৷ এই মহান রাজ্যে ফের এধরনের ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না ৷"
আরও পড়ুন: বোমাবাজি-পুলিশের গাড়িতে আগুন, উত্তপ্ত রিষড়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ