সিঙ্গুর, 28 নভেম্বর: খেত থেকে আমন ধান ওঠার পরই শুরু হয়েছে আলুর চাষ ৷ বাংলায় আলু একটি অর্থকরী ফসল ৷ তাই প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে আলু চাষ হয় ৷ তবে পরিকল্পনার অভাবে কয়েক লক্ষ মেট্রিক টন আলু হিমঘরে থেকে যায় ৷ আর এই আলু স্টোর করা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয় ৷ এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷ রাজ্যজুড়ে হিমঘরগুলিতে প্রায় 10 লক্ষ মেট্রিক টন আলু রয়েছে ৷ এ নিয়েই সংকটে পড়েছে আলু চাষের সঙ্গে জড়িত কৃষক থেকে ব্যবসায়ীরা ৷
হিমঘর মালিকরা আগেই ঘোষণা করেছে 30 নভেম্বর হিমঘর থেকে সব আলু বের করে দেওয়া হবে ৷ এই বিশাল পরিমাণ আলু যদি হিমঘর থেকে বের করে দেওয়া হলে সবাই সংকটে পড়বে ৷ লক্ষ লক্ষ টন আলু হিমঘর থেকে বের করে দিলে তা বিক্রির সময়টুকুও পাবেন না ব্যবসায়ীরা ৷ মাত্র 10 দিনের মধ্যেই সেগুলি পচে যাবে, খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে ৷ পাশাপাশি এই মুহূর্ত আলুর যেটুকু দাম বেড়েছিল, তাও এক ধাক্কায় কমে যাবে ৷
অন্যদিকে আলু পচে গেলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বাজারে আলুর আকাল দেখা দেবে ৷ কারণ নতুন আলু বাজারে আসতে আসতে জানুয়ারি মাস ৷ স্বভাবতই এতে বাজারের অচলাবস্থা তৈরি হবে ৷ আলু চাষের আগে বহু চাষি এই আলু বিক্রি করে খরচ জোগান ৷
এখনই যদি হিমঘর থেকে আলু বাইরে বার করে দেওয়া হয় ৷ তাহলে সেই আলু নষ্ট হয়ে যাবে ৷ তাই সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতি ও চাষিরা ৷ হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ বৃদ্ধি করার দাবি জানান হয়েছে ৷ যদিও হিমঘর মালিকদের পক্ষ থেকে এই দাবি আগেই নাকচ করা হয়েছে ৷
হিমঘরের বক্তব্য, এই দাবি মানা সম্ভব নয় ৷ রাজ্য সরকার যদি বাধ্য করে, তাহলে তাদের বর্ধিত ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ৷ এই জটিল পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না ৷ তিনি বলেন, "প্রতিবছর এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ আমাদের কাছে বিভিন্ন তরফে আবেদন এসেছে ৷ সার্বিকভাবে সব দিক বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা পদক্ষেপ নেব ৷ রাজ্যের স্বার্থে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷"
আর সেদিকেই তাকিয়ে আছে হুগলি-সহ রাজ্যের কৃষক, ব্যবসায়ী ৷ সিঙ্গুরের এক কৃষক সমীর বেড়া বলেন, "বর্তমানে আলুর দাম কিছু বেড়েছে ৷ যদি আলু আরও কিছুদিন থাকে, তাহলে দাম ঠিক থাকবে ৷ এর জন্য সরকারি পদক্ষেপ করা দরকার ৷ রাজ্যে যা আলু আছে, তাতে ডিসেম্বর 15 তারিখ পর্যন্ত হিমঘরে থাকলে অনেকটাই খালি হবে ৷ আগাম আলু উৎপাদনে সময় লাগবে জানুয়ারি মাস ৷ এই সময় হিমঘর মালিকরা যদি কিছু টাকা বেশি নেয়, তাহলেও হিমঘর মালিক থেকে কৃষক সবাই বাঁচবে ৷ তাতে টাকা দিতে হবে ৷ নাহলে সরকারকে ভরতুকি দিতে হবে ৷"
এই বিষয়ে হিমঘরে আলুর একই ভাড়ায় মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি করেছেন আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য লালু মুখোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "নভেম্বর শেষ দিন হলেও 10 লক্ষ মেট্রিকটন আলু কোনও মতেই হিমঘর থেকে বার করে দেওয়া সম্ভব নয় ৷ আমরা বিভাগীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে আবেদন করেছি, একই ভাড়ায় 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু রাখার ৷ নাহলে আলু নষ্ট হয়ে যাবে এই বিপুল আলু ৷ এখনও সরকারি তরফে কিছু সিদ্ধান্ত হয়নি ৷ আগামিদিনে কী সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছি ৷"
রাজ্য হিমঘর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পতিত পাবন দে বলেন, "বর্ধিত ভাড়া না দিলে আমাদের পক্ষে অতিরিক্ত এক মাস হিমঘর চালানো সম্ভব নয় । এছাড়াও আগেই হিমঘর শ্রমিকরা বর্ধিত টাকা দাবি করেছে ৷ 9 মাস পর্যন্ত 168 থেকে 172 টাকায় (প্রতিমাসে) ভাড়ায় আলু রাখতে হয় ৷ অন্য রাজ্যের মতো নয়, বাংলায় সরকার নিয়ন্ত্রিত ভাড়ায় হিমঘর চালাতে হয় ৷ তারপর বিদ্যুৎতের দাম বাড়ছে ৷ ডিসেম্বরের জন্য অতিরিক্ত খরচ আমরা কোথা থেকে পাব ? যদি চালাতে হয়, তাহলে অতিরিক্ত ভাড়া না-হলে আমরা অপারগ ৷"
আরও পড়ুন: