পাণ্ডুয়া, 22 সেপ্টেম্বর: রাতের অন্ধকারে পঞ্চায়েতের দফতরে ঢুকে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ প্রাক্তন তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে। শুক্রবার এমনই লিখিত অভিযোগ করেন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের এক সদস্য বর্ণালী দাস। প্রাক্তন প্রধানকে ঘেরাও করে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা ৷ খবর পেয়ে পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ এলে তাদের সামনেই প্রাক্তন প্রধান মিন্টু রায়কে চড় মারেন মহিলা সদস্য বর্ণালী দাস। পালটা চড়াও হন প্রাক্তন প্রধানও। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে পাণ্ডুয়ার দ্বারবাসীন গ্রাম পঞ্চায়েতে।
শুক্রবার পঞ্চায়েতে অডিট হওয়ার কথা। কিন্ত তার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতের অন্ধকারে পঞ্চায়েতে আসে প্রাক্তন প্রধান মিন্টু রায়-সহ বেশ কয়েকজন। অনেক রাত পর্যন্ত পঞ্চায়েতে কাজ হওয়ায় সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। পঞ্চায়েতে কাগজপত্র সরানোর অভিযোগ তুলে মিন্টু রায়কে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসীরা। এরপর খবর পেয়ে পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে প্রাক্তন প্রধানকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, বর্তমান প্রধানের ডাকেই এসেছিলেন প্রাক্তন প্রধান মিন্টু রায়। অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। সঠিকভাবে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখার পরই তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি ।
বর্তমান পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বর্ণালী দাসের অভিযোগ, অডিটের জন্য কাগজপত্র সরিয়ে ফেলতেই এসেছিলেন প্রাক্তন প্রধান। এতেই প্রাক্তন প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় ৷ বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পর পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ এসে প্রাক্তন প্রধানকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেই মুহূর্তে পঞ্চায়েতের গেট দিয়ে পুলিশ প্রাক্তন প্রধানকে নিয়ে বেরোনোর সময় এক বর্ণালী দাস তাঁকে সপাটে চড় মারেন। এরপর প্রাক্তন প্রধানও চড়াও হন তাঁর উপর। তৃণমূলের একাংশ ও গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন প্রাক্তন প্রধান। পুলিশ কোনওভাবে তাঁকে গাড়িতে তুলে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় ।
বর্তমান সদস্য বর্ণালী দাস বলেন, "নতুন প্রধানের অনুপস্থিতিতে প্রাক্তন প্রধান অফিসের ভিতরে বসে ছিলেন। আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করি তিনি কেন এখানে রয়েছেন । তিনি জানান, আগামিকাল অডিট আছে, তাই আইপ্যাক তাঁকে থাকতে বলেছে । আমাদের জানা নেই অডিটের আগে কেউ এভাবে অফিসে থাকতে পারেন কি না। আর আইপ্যাক প্রাক্তন প্রধানকে এখানে পাঠিয়েছে এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।"
আর এই ঘটনায় বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ বলেন, "অডিটের আগের রাতে প্রাক্তন প্রধান পঞ্চায়েতে গিয়েছেন। তার মানে গত পাঁচ বছরে যা লুটপাট করেছেন সেই সব তথ্য লোপাট করতেই গিয়েছিলেন। এখন তৃণমূলে সদস্যরাই পঞ্চায়েত ঘেরাও করেছেন। লুঠের ভাগ নিয়ে রাস্তায় মারপিট হচ্ছেও তৃণমূলের মধ্যে। নিজেদের ছাড়া মানুষের জন্য এরা ভাবে না ।"
পাণ্ডুয়ার তৃণমূল নেতা তথা দলের হুগলি জেলা সম্পাদক অসিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, "মিন্টু রায় যদি কোনও অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। দলীয়ভাবেও আমরা কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যেই বিষয়টি দলের নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে । কিন্তু বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে আমাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বলে। এর তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্তদের দলে ঠাঁই হবে না ।"
আরও পড়ুন : পাণ্ডুয়ায় তরুণীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার তৃণমূলের যুবনেতা