শ্রীরামপুর, 3 জানুয়ারি: আগামী 22 জানুয়ারি অযোধ্যার রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে বিশাল আয়োজন চলছে ৷ সেই আবহে এবার 270 বছরের পুরনো জরাজীর্ণ ও অবহেলিত হুগলির শ্রীরামপুরের রাম মন্দির সংস্কার ও হেরিটেজের দাবি উঠেছে ৷ পরিস্থিতি এমনই যে, মন্দিরের পলেস্তেরা খসে বেরিয়ে এসেছে চুন-সুড়কির ঢালাই ৷ বর্তমানে শেওড়াফুলি রাজ পরিবারের উদ্যোগে এই মন্দিরকে পুনর্নির্মাণ ও হেরিটেজের স্বীকৃতির আবেদন করা হয়েছে ৷ রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যে শ্রীরামপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পুনর্নির্মাণের কথা হচ্ছে ৷
শ্রীরামপুরের রাম-সীতা মন্দিরের ইতিহাস
ইতিহাসের পাতা উল্টোলে পাওয়া যায়, 1753 খ্রিস্টাব্দে শেওড়াফুলির রাজা রাজচন্দ্র রায় শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাম-সীতা মন্দির ৷ অতি প্রাচীন কষ্টি পাথরের রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও হনুমানের মূর্তি রয়েছে সেখানে ৷ রাম-সীতার সেবার জন্য শ্রীপুর, গোপীনাথপুর ও মোহনপুর নিয়ে মোট তিনশো বিঘা জমি দান করেন রাজচন্দ্র রায় ৷ এই জায়গা থেকে কর আদায় করে চলত মন্দিরের সেবা ৷ দীর্ঘ দিনের পুরনো জরাজীর্ণ এই মন্দির ৷ চারদিকের দেওয়াল ও মূল মন্দিরের দেওয়ালে অসংখ্য ফাটল ৷ বর্ষায় গর্ভগৃহের ছাদ থেকে জল পড়ে ৷ এমন পরিস্থিতি মূর্তি বেদী থেকে সরিয়ে রাখতে পর্যন্ত হয়েছিল ৷
সাত পুরুষ ধরে শ্রীরামপুর রাম মন্দিরের সেবা করে আসছে রায় পরিবার ৷ এখনও রামের জন্মদিন ও রাম দোল পালন করা হয় এখানে ৷ বিশেষ পুজো হয় এই অনুষ্ঠানের দিনগুলিতে ৷ প্রতিদিন নিত্যসেবা করে রায় পরিবারের বংশধর তথা পুরোহিত রাজ শেখর রায় ৷ তিনি বলেন, "শেওড়াফুলি রাজ পরিবারের যখন সাহায্য আসা বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনশো বিঘা জমির কর আদায় থেকেই মন্দিরের যাবতীয় খরচ চলত ৷ ইংরেজ শাসন আসার পর শ্রীরামপুর পৌরসভার গঠন থেকেই অধিকাংশ জমি অধিগ্রহণ হয়ে যায় ৷ কোনও টাকা পাওয়া যেত না ৷ পরবর্তী সময়ে বংশপরম্পরায় আমাদের পরিবার এই মন্দিরের দায়ভার সামলে আসছে ৷ বর্তমানে এই মন্দির ভগ্নপ্রায় অবস্থা ৷ ছাদ থেকে জল পড়ে ৷ আমরাও চাই এর সংস্কার হোক ৷ রাজ পরিবার চিন্তাভাবনা করছে ৷ এই মন্দির হেরিটেজ স্বীকৃতি পাক সকলেই চাই আমার ৷"
শেওড়াফুলি রাজ পরিবারের রাজারা হুগলি-হাওড়া মিলিয়ে একাধিক রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ শ্রীরামপুরের মন্দিরের নামে তিনটি গ্রাম দান করা হয়েছিল সেই সময় ৷ বর্তমানে এই মন্দিরের পরিস্থিতি জরাজীর্ণ ৷ সেই কথা মাথায় রেখে সংস্কারের জন্য রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ও সরকারের কাছে আবেদন করেছে রাজ পরিবার ৷ তাদের মধ্যেই এক নতুন প্রজন্মের বংশধর সৌরদীপ ঘোষ বর্মন বলেন, "আমাদের কথা হচ্ছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ও শ্রীরামপুর পৌরসভার সঙ্গে ৷ যৌথভাবে তত্ত্বাবধান করে একজন বাস্তুকারের সাহায্যে এই মন্দির পুনর্নির্মাণ করার কথা ৷ অধিগৃহিত জমির কিছুটা ফিরিয়ে দিলে মন্দিরের সেবা চালাতে সুবিধা হয় ৷ সেই সঙ্গে সরকারের কাছে আবেদন হেরিটেজের তকমা যাতে পাওয়া যায় ৷"
আরও পড়ুন: