হুগলি, 18 জুলাই : নদীর জল কখনও লাল, কখনও বেগুনি আবার কখনও কালো হয়ে যাচ্ছে । রঙিন দূষিত জলে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ । বর্ধমানের জামালপুর থেকে হুগলি জেলার সিঙ্গুর হয়ে বয়ে যায় এই ঘিয়া নদী । এই যাত্রাপথের মধ্যেই একাধিক কারখানার নোংরা জল এসে পড়ছে ৷ তাতেই বাড়ছে দূষণ ৷ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে ।
হুগলির গুড়াপ, ধনেখালি, পোলবা, সিঙ্গুর-সহ একাধিক এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঘিয়া । এসব এলাকার বহু মানুষ নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করেন এই নদীর জল ৷ সে চাষবাস হোক বা মাছ ধরা, এর জলের উপর নির্ভর করে অনেক মানুষের জীবিকাও ৷ গবাদি পশুদের স্নান করানো তো বটেই বাসিন্দাদের অনেকেই নিজেরাও স্নান সারেন নদীর জলে ৷ কিন্তু সাম্প্রতিক দূষণে সমস্যায় পড়েছেন গুড়াপ, ধনেখালি, পোলবা, সিঙ্গুরের মানুষজন ৷ এই বিস্তৃর্ণ এলাকায় রয়েছে একাধিক কারখানা ৷ রয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট নদীও ৷ তবে সংস্কারের অভাবে সবক'টিই প্রায় বিলুপ্ত ৷ মজে যাওয়া খালের আকার ধারণ করেছে সেগুলি ৷ পোলবার বিয়ার কারখানার পাশাপাশি ধনেখালি ব্লকেও রয়েছে একাধিক গেঞ্জি কারখানা ৷ এসব কারখানার বর্জ্য খালের মাধ্যমে ঘিয়ায় মিশছে প্রতিদিন ৷ কারখানা মালিকদের এই কীর্তির জন্য স্বাভাবিকত্ব হারাচ্ছে নদী ৷
নদীর দূষিত জলে ক্ষতি হচ্ছে চাষের ৷ মাছও বাঁচছে না এই জলে ৷ তার উপর পচা জলে চর্মরোগের সমস্যাও প্রকট হচ্ছে দিন দিন ৷ আগামীতেও এইভাবে কারখানার দূষিত জল নদীতে মিশতে থাকলে ফসল, নদীর মাছ, পশুপাখি তো মারা যাবেই, মানুষেরও ক্ষতি হবে প্রবল বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের ৷ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট যাবে ।
কারখানার বিষাক্ত জল নদী বা পুকুরে ছাড়ার নিয়ম নেই ৷ তাও গেঞ্জি বা বিয়ার কারখানার দূষিত জল বেমালুম ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ঘিয়ায় ৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, একাধিক পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ বিধায়ক বা মন্ত্রী- সকলেই উদাসীন । সব কিছু জানা সত্ত্বেও প্রতিকারের জন্য কেউ কোনও পদক্ষেপ করছেন না ৷ তবে পোলবা ব্লকের এক বিয়ার ফ্যাক্টরির ম্যানেজার এস কে পট্টনায়কের দাবি, তাঁর কারখানার জল পরিশ্রুত করেই নদীতে ছাড়া হচ্ছে । এবিষয়ে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় । তবে স্থানীয় গ্রামবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সমস্যার দিকে আগে লক্ষ্য দেয়নি প্রশাসন ।
পোলবা ব্লকের মাকালপুর হাসানা গ্রামের মানুষ এই দূষিত জলই চাষ ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন । কৃষক রবি দাস বলেন, "নদীতে নীল, লাল, কালো রংয়ের নোংরা জল আসছে । এতে চাষের ক্ষতি হচ্ছে । ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে ৷ স্থানীয়রা জলে নেমে স্নান করতে পারছেন না । গায়ে চুলকানি হচ্ছে । একে তো করোনা ভাইরাস থেকে মানুষ বাঁচতে চাইছে, তার ওপরে এভাবে কারখানার নোংরা জলে এলে আমাদের আর বাঁচতে হবে না ৷ দূষিত জল পরিষ্কার করে ফেলতে কারখানার মালিকদের খরচ হবে । সেই খরচ না করে নোংরা জলই নদীতে ফেলে দিচ্ছে তারা । তিন বছর ধরে সমস্যা চলছে ৷ এর প্রতিবাদ জানানোর কেউ নেই ।"
ধনেখালি ব্লকের অভিজিৎ রায় বলেন, "এই ঘিয়া নদীর আশপাশে একাধিক গেঞ্জি কারখানা ও বিয়ার কারখানা রয়েছে ৷ ওইসব কারখানার দূষিত সমস্ত জলেই এই নদীর মধ্যে দিয়ে যায় ৷ কারখানার দূষিত জল ফিল্টার করে নদীতে ফেলা উচিত কিন্তু সেসব করে না তারা ৷ কেমিক্যাল মিশ্রিত জলে চাষের প্রচণ্ড ক্ষতি হচ্ছে ৷ এই নদী থেকেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত যারা তারা এখন সমস্যার মধ্যে পড়েছে ।"
আরও পড়ুন : পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমায় হরিপালে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা
হুগলি জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী বলেন, "ঘিয়া নদীতে দূষণের বিষয়টি আমি দেখেছি ৷ এক্ষেত্রে চাষিরা অসহায় ৷ কারখানার বর্জ্য যাতে নদী না ফেলা হয় তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা জেলাশাসকের সঙ্গে কথাও বলেছি ৷ পরিবেশ মন্ত্রী রত্না দে নাগের সঙ্গেও কথা বলেছি ৷ আমরা সমস্যার কথা লিখিত আকারে জানিয়েছি তাঁকে ৷ কারখানার মালিকপক্ষ যাতে দূষণ পর্ষদের নিয়ম মানে তার জন্য আমাদের তরফে যা যা করার তা করা হয়েছে ।"
আরও পড়ুন : নদীর স্রোতে ভেসে গিয়েছে সাঁকো, বিপাকে খানাকুলবাসী