সিঙ্গুর, 31 মার্চ : দেড় দশক আগে রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থানের অন্যতম অনুঘটক ছিল সিঙ্গুরের আন্দোলন ৷ বুধবার সেই আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে নির্বাচনের প্রচার করতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে চলে এল সেদিনের নানা কথা ৷
কিন্তু সেদিন তাঁর আন্দোলনের সঙ্গী এখন তাঁর প্রতিপক্ষ শিবিরে ৷ সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবার বিজেপির হয়ে সিঙ্গুরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন ৷ স্বাভাবিক ভাবেই তাই মাস্টারমশাইয়ের প্রসঙ্গ এসেছে মমতার ভাষণে ৷
তৃণমূল নেত্রী প্রশ্ন তুলেছেন যে কেন হঠাৎ বিজেপির হয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামলেন মাস্টারমশাই ? মমতার দাবি, সিঙ্গুর থেকে একাধিকবার জিতেছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ৷ কিন্তু বয়সের কারণে তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি ৷ কিন্তু ভোটের পর তাঁকে কোনও একটা কমিটির চেয়ারম্যান করে দেওয়া হত ৷ সেখানে সম্মানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেতেন সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই ৷
একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন যে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের জন্য তিনি সিঙ্গুরে ভোটে লড়তে পারেননি ৷ মমতার দাবি, গতবার তিনি সিঙ্গুর থেকে ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন ৷ দলের বিধায়ক বেচারাম মান্নাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু বেচারাম তাঁকে জানিয়েছিলেন যে এতে মাস্টারমশাই আপত্তি করবেন ৷
তাই দলের নির্বাচনী সভার মঞ্চ থেকে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে সরাসরি বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘মাস্টারমশাই আপনি বাড়িতে থেকে সম্মান বাঁচান ৷ আপনি ভালো থাকুন ৷ সুস্থ থাকুন ৷ সুস্থজীবন কামনা করছি ৷’’ একই সঙ্গে সিঙ্গুরের মাস্টারমশাইয়ের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘বেচাকে (বেচারাম মান্না) জেতানোর জন্য আশীর্বাদ করুন ৷’’
উল্লেখ্য, সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন 2006 সাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক জমি ফিরিয়ে দিয়েছিল ৷ তার আগের দু’টি নির্বাচন - 2004 সালের লোকসভা ও 2006 সালের বিধানসভায় খুব খারাপ ফল করেছিল তৃণমূল ৷ কিন্তু প্রথমে সিঙ্গুর ও পরে নন্দীগ্রামের আন্দোলনে ভর করে 2008 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই ভালো ফল করতে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ যে সাফল্য একেবারে শীর্ষে পৌঁছায় 2011 সালে৷ সাড়ে তিন দশকের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হয় ৷ মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
আর ঠিক তার দশ বছর পর এবারের ভোটে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অন্যতম দু’জন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৷ একজন শুভেন্দু অধিকারী ৷ যাঁর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি নন্দীগ্রামে লড়াই করছেন ৷ অন্যদিকে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে যোগ দেন ৷ তার পর তাঁকেই সিঙ্গুরে বিজেপি প্রার্থী করেছে ৷
আরও পড়ুন : নন্দীগ্রাম, বাংলার আসল লড়াই
নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে যতটা চাঁচাছোলা ভাষায় মমতা আক্রমণ শানাচ্ছেন ৷ এদিন সিঙ্গুর থেকে মাস্টারমশাইকে অতটা ঝাঁঝালো আক্রমণ করেননি তৃণমূলনেত্রী ৷ তা সত্ত্বেও কেন তিনি রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে বাড়িতে থেকে সম্মান বাঁচাতে বললেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷