ETV Bharat / state

Durga Puja 2023: রাজ্যে চাকরি নেই, পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ার হয়েও প্রতিমা তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন প্রদীপ - রাজ্যে চাকরি নেই তাই প্রতিমা তৈরি করছেন ইঞ্জিনিয়ার

তাঁর কাছে কোনও কাজই ছোট নয় ৷ তাই সরকারি কলেজ থেকে পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেও আজ মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন হুগলির প্রদীপ ৷ দুর্গা, কালী, মনসা ও বিশ্বকর্মারাই আজ তাঁর সংসারের হাল ধরেছে ৷

Etv Bharat
প্রতিমা বানাচ্ছেন পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 15, 2023, 8:03 PM IST

প্রতিমা বানাচ্ছেন পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ

বৈঁচিগ্রাম, 15 সেপ্টেম্বর: পলিটেকনিকে ইঞ্জিনিয়ার হয়েও রাজ্যে চাকরি পাচ্ছেন না । মিললেও তাতে বেতন অনেক কম । তাই দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেই রোজগার করছেন প্রদীপ কুমার মণ্ডল । বাড়ি হুগলির সিমলাগড়ের চাঁপাহাটিতে । বর্তমানে চাকরির আশা ছেড়ে বৈঁচিগ্রামে ঘর তৈরি করে প্রতিমা গড়ছেন প্রদীপ ৷ লকডাউনের সময় চাকরির সুযোগ এলেও ভিনরাজ্যে যাওয়া সম্ভব হয়নি । তার উপর বাবা অসুস্থ । তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই রোজগারের আশায় প্রতিমা তৈরিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন প্রদীপ । এই বছর থেকেই শুরু ৷ আর প্রথম বছরেই দুর্গা, কালী ও বিশ্বকর্মা ঠাকুর বানিয়ে ভালো টাকার অর্ডার পেয়েছেন তিনি । আগামিদিনে প্রতিমা শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কর্মসংস্থান করতে চান প্রদীপ ।

মাটির প্রতিমা তৈরির কাজ সেভাবে কারোর কাছে শেখা হয়নি । ছোটবেলা থেকেই স্কুল থেকে এসে ঠাকুর তৈরি করার ইচ্ছে হত ৷ সবরকম ঠাকুরই তখন তৈরি করতেন । বড় হওয়ার পরও সেই শখ রয়ে গিয়েছে । বাড়িতে একাধিক মাটির ঠাকুর বানানোর পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন প্রদীপ । স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে পলিটেকনিকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আরামবাগের সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ আসে । 2020 সালে তিন বছরের কোর্স করে ট্রেনিংও নিয়েছিলেন প্রদীপ । সেই সার্টিফিকেটও রয়েছে ৷ করোনাকালে চেন্নাইয়ে একটি সোলার কোম্পানিতে চাকরির সুযোগও আসে । কিন্তু লকডাউন ও করোনার কথা ভেবে পিছিয়ে এসেছিলেন । তার উপর পরিবারে বাবা অসুস্থ ৷ রোজগারও সেভাবে নেই । বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করে গোটা পরিবার টানা অসম্ভব । কোনও পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাই প্রতিমা শিল্পী হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত হতে চান প্রদীপ । আগের বছর বাড়িতে কয়েকটি ঠাকুর বানালেও এবছর বৈঁচিগ্রামে জিডি রোডের পাশে দোকান ভাড়া করে দুর্গা, বিশ্বকর্মা, কালী ও মনসা-সহ একাধিক ঠাকুর বানাচ্ছেন । সেই মতো তিনটি বড় দুর্গার অর্ডারও এসেছে । আর ভালো দামেও বিক্রি হচ্ছে তাঁর বানানো প্রতিমা ৷ প্রদীপের ইচ্ছে আগামী দিনে এই প্রতিমা শিল্পের উপর নির্ভর করে আরও বেশ কয়েকটি ছেলের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া ।

আরও পড়ুন : হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন, চূড়ান্ত ব্যস্ততায় প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পীরা

প্রদীপের কথায়, "আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন স্কুল থেকে এসে খেলা করতে করতে দুর্গা ঠাকুর তৈরি করি । দুর্গা মূর্তি বানিয়েছি বলে মা রাগ করে জলে ফেলে দেয় । জেদের বশে আবার ওইবেলার মধ্যেই নতুন করে দুর্গা ঠাকুর বানিয়েছিলাম । তখন থেকেই আমার হাতে খড়ি প্রতিমা শিল্পে । নিজে দেখে দেখে শিখেই ঠাকুর তৈরি করার নেশা । আমি আরামবাগে সরকারি কলেজ থেকে পলিটেকনিকে তিন বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করি । পরে সল্টলেক থেকে সোলারের ট্রেনিংও নিয়েছি । লকডাউনের সময় আমার চাকরির সুযোগও এসেছিল । কিন্তু সেই সময় লকডাউন আর বাবার শরীর খারাপের জন্য চেন্নাইয়ে যেতে পারিনি । পুরো এক বছর বাড়িতেই বসেছিলাম । ভিনরাজ্যে ছাড়া আমাদের রাজ্যে সেভাবে কোনও চাকরি নেই । বেসরকারি যে কোম্পানিগুলি রয়েছে সেখানে 8 থেকে 10 হাজার টাকার বেতন দিচ্ছে । সেই বেতনে সংসার চালানো খুবই দুষ্কর । রেল-সহ একাধিক জায়গায় পরীক্ষাও দিয়েছি । আর কোনও পথ না পেয়ে প্রতিমা শিল্পের কাজে লেগেছি । বর্তমানে সব ধরনের ঠাকুর তৈরি করতে পারি । আমি নিজে হাতে ঠাকুরের মুখ বানাই । অনেকগুলি দুর্গাঠাকুরের অর্ডার এসেছিল কিন্তু লোকের অভাবে ছেড়ে দিয়েছি । আমি মনে করি কোনও কাজই ছোট নয়, খারাপ নয় । চাকরি করতে গেলে বাবা-মাকে ছেড়ে ভিন রাজ্যে যেতে হবে । বাড়িতে থেকে কাজের সুযোগ নেই । তাই শিল্পী হয়েই আগামী দিনে কাজ করতে চাই ।

প্রদীপের বাবা দীপক কুমার মণ্ডলের বক্তব্য,"শরীর খারাপের জন্য সেভাবে কাজ করতে পারি না । আমাদের রাজ্যে চাকরি পেলে অবশ্যই করবে । ভিন রাজ্যে হলে যাওয়া সম্ভব নয় ওর পক্ষে । এখন তাই বসে না থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ করছে । ছোটবেলা থেকে শখ ঠাকুর তৈরি করা । আমাদের বাড়িতে ওর হাতে তৈরি দুর্গা ছাড়া প্রায় সব ঠাকুরের মূর্তি রয়েছে ।ইঞ্জিনিয়ার নাই হোক, প্রতিমা শিল্পী হিসাবে নাম হবে । চাকরির চেয়েও এই কাজে স্বাধীনতা আছে । সরকারি চাকরি না থাকায় এই পথকেই বেছে নিয়েছে যখন এটাই করুক ।"

আরও পড়ুন : পুজোর মরশুমে মাটির সমস্যায় জেরবার কুমোরটুলি, চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা

প্রতিমা বানাচ্ছেন পলিটেকনিক ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ

বৈঁচিগ্রাম, 15 সেপ্টেম্বর: পলিটেকনিকে ইঞ্জিনিয়ার হয়েও রাজ্যে চাকরি পাচ্ছেন না । মিললেও তাতে বেতন অনেক কম । তাই দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেই রোজগার করছেন প্রদীপ কুমার মণ্ডল । বাড়ি হুগলির সিমলাগড়ের চাঁপাহাটিতে । বর্তমানে চাকরির আশা ছেড়ে বৈঁচিগ্রামে ঘর তৈরি করে প্রতিমা গড়ছেন প্রদীপ ৷ লকডাউনের সময় চাকরির সুযোগ এলেও ভিনরাজ্যে যাওয়া সম্ভব হয়নি । তার উপর বাবা অসুস্থ । তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই রোজগারের আশায় প্রতিমা তৈরিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন প্রদীপ । এই বছর থেকেই শুরু ৷ আর প্রথম বছরেই দুর্গা, কালী ও বিশ্বকর্মা ঠাকুর বানিয়ে ভালো টাকার অর্ডার পেয়েছেন তিনি । আগামিদিনে প্রতিমা শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কর্মসংস্থান করতে চান প্রদীপ ।

মাটির প্রতিমা তৈরির কাজ সেভাবে কারোর কাছে শেখা হয়নি । ছোটবেলা থেকেই স্কুল থেকে এসে ঠাকুর তৈরি করার ইচ্ছে হত ৷ সবরকম ঠাকুরই তখন তৈরি করতেন । বড় হওয়ার পরও সেই শখ রয়ে গিয়েছে । বাড়িতে একাধিক মাটির ঠাকুর বানানোর পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন প্রদীপ । স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে পলিটেকনিকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আরামবাগের সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ আসে । 2020 সালে তিন বছরের কোর্স করে ট্রেনিংও নিয়েছিলেন প্রদীপ । সেই সার্টিফিকেটও রয়েছে ৷ করোনাকালে চেন্নাইয়ে একটি সোলার কোম্পানিতে চাকরির সুযোগও আসে । কিন্তু লকডাউন ও করোনার কথা ভেবে পিছিয়ে এসেছিলেন । তার উপর পরিবারে বাবা অসুস্থ ৷ রোজগারও সেভাবে নেই । বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করে গোটা পরিবার টানা অসম্ভব । কোনও পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাই প্রতিমা শিল্পী হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত হতে চান প্রদীপ । আগের বছর বাড়িতে কয়েকটি ঠাকুর বানালেও এবছর বৈঁচিগ্রামে জিডি রোডের পাশে দোকান ভাড়া করে দুর্গা, বিশ্বকর্মা, কালী ও মনসা-সহ একাধিক ঠাকুর বানাচ্ছেন । সেই মতো তিনটি বড় দুর্গার অর্ডারও এসেছে । আর ভালো দামেও বিক্রি হচ্ছে তাঁর বানানো প্রতিমা ৷ প্রদীপের ইচ্ছে আগামী দিনে এই প্রতিমা শিল্পের উপর নির্ভর করে আরও বেশ কয়েকটি ছেলের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া ।

আরও পড়ুন : হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন, চূড়ান্ত ব্যস্ততায় প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পীরা

প্রদীপের কথায়, "আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন স্কুল থেকে এসে খেলা করতে করতে দুর্গা ঠাকুর তৈরি করি । দুর্গা মূর্তি বানিয়েছি বলে মা রাগ করে জলে ফেলে দেয় । জেদের বশে আবার ওইবেলার মধ্যেই নতুন করে দুর্গা ঠাকুর বানিয়েছিলাম । তখন থেকেই আমার হাতে খড়ি প্রতিমা শিল্পে । নিজে দেখে দেখে শিখেই ঠাকুর তৈরি করার নেশা । আমি আরামবাগে সরকারি কলেজ থেকে পলিটেকনিকে তিন বছরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করি । পরে সল্টলেক থেকে সোলারের ট্রেনিংও নিয়েছি । লকডাউনের সময় আমার চাকরির সুযোগও এসেছিল । কিন্তু সেই সময় লকডাউন আর বাবার শরীর খারাপের জন্য চেন্নাইয়ে যেতে পারিনি । পুরো এক বছর বাড়িতেই বসেছিলাম । ভিনরাজ্যে ছাড়া আমাদের রাজ্যে সেভাবে কোনও চাকরি নেই । বেসরকারি যে কোম্পানিগুলি রয়েছে সেখানে 8 থেকে 10 হাজার টাকার বেতন দিচ্ছে । সেই বেতনে সংসার চালানো খুবই দুষ্কর । রেল-সহ একাধিক জায়গায় পরীক্ষাও দিয়েছি । আর কোনও পথ না পেয়ে প্রতিমা শিল্পের কাজে লেগেছি । বর্তমানে সব ধরনের ঠাকুর তৈরি করতে পারি । আমি নিজে হাতে ঠাকুরের মুখ বানাই । অনেকগুলি দুর্গাঠাকুরের অর্ডার এসেছিল কিন্তু লোকের অভাবে ছেড়ে দিয়েছি । আমি মনে করি কোনও কাজই ছোট নয়, খারাপ নয় । চাকরি করতে গেলে বাবা-মাকে ছেড়ে ভিন রাজ্যে যেতে হবে । বাড়িতে থেকে কাজের সুযোগ নেই । তাই শিল্পী হয়েই আগামী দিনে কাজ করতে চাই ।

প্রদীপের বাবা দীপক কুমার মণ্ডলের বক্তব্য,"শরীর খারাপের জন্য সেভাবে কাজ করতে পারি না । আমাদের রাজ্যে চাকরি পেলে অবশ্যই করবে । ভিন রাজ্যে হলে যাওয়া সম্ভব নয় ওর পক্ষে । এখন তাই বসে না থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ করছে । ছোটবেলা থেকে শখ ঠাকুর তৈরি করা । আমাদের বাড়িতে ওর হাতে তৈরি দুর্গা ছাড়া প্রায় সব ঠাকুরের মূর্তি রয়েছে ।ইঞ্জিনিয়ার নাই হোক, প্রতিমা শিল্পী হিসাবে নাম হবে । চাকরির চেয়েও এই কাজে স্বাধীনতা আছে । সরকারি চাকরি না থাকায় এই পথকেই বেছে নিয়েছে যখন এটাই করুক ।"

আরও পড়ুন : পুজোর মরশুমে মাটির সমস্যায় জেরবার কুমোরটুলি, চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.