হুগলি, 7 এপ্রিল : "রাজ্য পুলিশকে দিয়ে ভোট করানো মানছি না। ভোটকর্মীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না।" আজ ভোটকর্মীরা হুগলির আরামবাগ, শ্রীরামপুর ও ভদ্রেশ্বরে তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন। আজ তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দাবি জানান।
আজ আরামবাগ গার্লস স্কুল ও বয়েজ় স্কুলে ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ ছিল। সেখানে ভোটকর্মীরা প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হন এবং বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তাঁরা ভোটের ডিউটি করে বেঁচে ফিরতে চান। একজন বয়স্ক ভোটকর্মী শেখ মহম্মদ জিয়ামউদ্দিন বলেন, "আমি রিটায়ার করতে চলেছি, তার আগেও আমায় ভোটের ডিউটি দিয়েছে। আমি বয়স্ক মানুষ ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে আমরা কী করে ভোট করাব, কী করে সব সামলাব? রাজ্য পুলিশ থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে। রাজ্য পুলিশ বুথে ঘুমায়।"
এই একই ছবি দেখা গেছে শ্রীরামপুর ইউনিয়ন স্কুলে। সেখানে ABTA- র পক্ষ থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এক ভোটকর্মী বলেন, "আমরা চাই ভোটটা সুষ্ঠুভাবে হোক। বুথগুলোতে CRPF জওয়ান থাকুক। প্রত্যেকটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে। প্রত্যেকটি ভোটকর্মীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। আমাদের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, প্রত্যেকটি বুথে 4 জন করে CRPF জওয়ান থাকবে। কারণ আমরা কেউই চাই না আবার একটা রাজকুমার রায় হোক। নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি না দিলে আমরা পরবর্তী ট্রেনিংয়ে যাব না। আমরা এর আগে শুনেছিলাম প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কিন্তু পরে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে যে 40 শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে থাকবে। তাই আমাদের এই আন্দোলন।"
এবিষয়ে শ্রীরামপুর মহকুমা শাসক তনয়দেব সরকার বলেন, "শুনেছি ভোটকর্মীরা কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছেন। এখনই এ ব্যাপারে বলা সম্ভব নয়। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। আশা করছি সমস্যা মিটবে।"
ভদ্রেশ্বরেও আজ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখিয়ে ডেপুটেশন দেন ভোটকর্মীরা। নিজেদের দাবিতে ভোটকর্মীরা সেখানে রাস্তা অবরোধ করেন। তাঁরা বলেন, "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমরা এই আন্দোলন করছি না। আমাদের সুরক্ষার জন্য আমাদের এই পদক্ষেপ।"
উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায় ভোটের ডিউটি করতে গিয়েছিলেন। তাঁর ডিউটি ছিল রায়গঞ্জের রূপাহারের একটি বুথে। কিন্তু বুথের অদূরে রেললাইন থেকে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ পাওয়া যায়। তিনি রহতপুর হাই মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। রাজকুমার রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়ায় বাকি ভোটকর্মীদের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, "আমরা কেউ আর দ্বিতীয় রাজকুমার হতে চাই না।"