দার্জিলিং, 3 নভেম্বর: বাড়িতে বন্যপ্রাণীর দেহাংশ দিয়ে তৈরি সামগ্রী মজুত রেখে তারপর পাচার ! এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ও বন বিভাগের তদন্তে । শুক্রবার এসওজি'র অভিযানে উদ্ধার হয়েছে কোটি টাকার হরিণের সিংও। গ্রেফতার করা হয়েছে দুই পাচারকারীকে । ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শিলিগুড়ি শহরে ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গোপনসূত্রে খবর পেয়ে শিলিগুড়ি সংলগ্ন বাগডোগরা এলাকায় অভিযান স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ । গোপনসূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সন্দেহভাজন দুই পাচারকারীকে ফাঁদ পেতে পাকড়াও করা হয় । তবে প্রথমে পাচারকারীরা পালাতে গেলে ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের সঙ্গে । পরে ওই দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ ধৃতদের নাম গোবিন্দ মণ্ডল ও প্রীতম রায় । ধৃত পাচারকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি হরিণের সিং।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দ মণ্ডল আমবাড়ি এবং প্রীতম রায় আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার বাসিন্দা । ধৃতরা একটি ব্যাগে করে হরিণের সিংগুলিকে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছিল বলে জানা গিয়েছে । ধৃতদের শুক্রবার শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিনের আবেদন খারিজ করে তাদের তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন । পরবর্তী তদন্তের জন্য পুলিশ মামলাটি বাগডোগরা বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে ।
এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর বলেন, "গোপনসূত্রে পাওয়া খবরের তথ্য ধরে স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ও বাগডোগরা থানার পুলিশ ফাঁদ পেতে ওই দুই পাচারকারীকে ধরে । এই ঘটনার তদন্তে পুলিশ বনবিভাগকে সাহায্য করবে ।" কার্শিয়াং বনবিভাগের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার হরেকৃষ্ণন পিজে বলেন,"দু'জন পাচারকারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । শিলিগুড়িতে বিক্রির উদ্দেশ্যে ওই সিংগুলি নিয়ে আসা হয়েছিল । ঘটনায় আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।"
আরও পড়ুন: চরম নৃশংসতা! দাঁত কেটে মুণ্ডহীন হাতির দেহ নদীতে ভাসাল শিকারীরা
এদিকে, ধৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি সংলগ্ন আমবাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে ওই সিংগুলি মজুত রাখা হয়েছিল । জলপাইগুড়ি জেলার বনাঞ্চল, ডুয়ার্স এবং অসম থেকে ওইধরনের বন্যপ্রাণ সেখানে এনে আগে মজুত রাখা হতো । এরপর ক্রেতা পেলে তারপর তা বিক্রি করা হতো । স্থানীয় বা ডুয়ার্সের জঙ্গলের হরিণ মেরে তার চামড়া এবং সিং আলাদা করা হতো । এরপর তার হরিণের মাংস খেয়ে ফেলা হতো বা মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো । এবারও একটি সিংয়ের টুকরো দু'লক্ষ টাকায় বিক্রি করার জন্য পাচারকারীদের সঙ্গে রফা হয়েছিল । সেইজন্য নমুনা দেখাতে ওই সিংগুলি নিয়ে গিয়েছিল পাচারকারীরা । কিন্তু তার আগেই সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় পুলিশ ও বনবিভাগ।