শিলিগুড়ি, 24 ডিসেম্বর: মহিলাদের প্রতি আসক্তি! আর সেই আসক্তিতেই পর্ন সাইটে ঢুকে পড়েছিল গুড্ডু । আর সেটাই হল কাল । সেখান থেকেই তাকে 'টার্গেট' করে টাকার লোভ দেখিয়ে কাজে নামায় আইএসআই । কিছুদিন পর কাজ বন্ধ করতে চাইতেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেল । আর ব্ল্যাকমেল করেই তাকে সেনাবাহিনীর গতিবিধি জানাতে বিহার থেকে পাঠানো হয় শিলিগুড়ি । তদন্তে এমনটাই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের হাতে (RAW Received Shocking Information) ৷
বুধবার শিলিগুড়ির 24 নম্বর ওয়ার্ডের একটি কলোনি থেকে আইএসআই চর সন্দেহে এসটিএফের হাতে গ্রেফতার হয় গুড্ডু কুমার নামে এক ব্যক্তি । তারপর থেকেই গোটা রাজ্যে তো বটেই, দেশে শোরগোল পড়ে যায় । তদন্তের কিনারা করতে শুক্র ও শনিবার এসটিএফ কার্যালয়ে তাকে টানা জেরা করে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (Research and Analysis Wing) অর্থাৎ 'র' এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের তিন অফিসার । এবার ধৃতকে বিহারে নিয়ে গিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে গোয়েন্দা বিভাগ । আগামী এক দু'দিনের মধ্যেই তাকে বিহারে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে । আইএসআই এজেন্ট সন্দেহে গ্রেফতারির পরই সমান্তরাল তদন্ত শুরু করেছে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো । যদিও ধৃতের স্ত্রী শোভা সিংয়ের দাবি, তাঁর স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে ।
এসটিএফ (Special Task Force) সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম থেকেই নারীদের প্রতি আসক্তি ছিল গুড্ডুর । বিয়ের পরেও তা কমেনি । বিহারের চম্পারনের বাসিন্দা পেশায় গৃহশিক্ষক গুড্ডু কুমারের সঙ্গে শোভা সিংয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় 2010 সালে । স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার । বিয়ের পরেও মেয়েদের প্রতি আসক্তি থাকায় মাঝেমধ্যেই পর্ন সাইটে ঢুকতো গুড্ডু । বছর তিনেক আগেও একটি নিষিদ্ধ সাইটে ঢুকে পরে গুড্ডু । সেখানেই তার নম্বর আদানপ্রদান হয় । এরপরই তাকে টার্গেট করে ফেলে পাকিস্তানের আইএসআই । টাকার প্রলোভন দেখিয়ে শুরু হয় কাজ হাসিল করানো ।
আরও পড়ুন: শিলিগুড়ির টোটো চালক আইএসআই এজেন্ট, গ্রেফতার করল এসটিএফ
এদিকে তার নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণ পত্র, আধার, ভোটার-সহ ব্যক্তিগত নথি নিয়ে নেয় আইএসআই । বছর দুয়েক আগে গুড্ডু বুঝতে পারে সে দেশ বিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল গুড্ডু কুমার । আর তারপরই শুরু হয় তাকে ব্ল্যাকমেল করা । তার গুপ্তচরবৃত্তির কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় । এরপরই ভয়ে বাড়ি ছাড়ে গুড্ডু । বছর দুয়েক চলে আসে।শিলিগুড়ি । শিলিগুড়ির পাশে থাকা সুকনা, ব্যাংডুবি, শালুগাড়া, বিন্নাবাড়ি ও কালিম্পংয়ের সেনাছাউনির খবরা খবর পাঠাতে বলা হত গুড্ডুকে । তদন্তকারী সেনাছাউনির ছবি ও ভিডিয়ো সবই পাঠানো হতো হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে । তার পরিবর্তে দশ থেকে বারো হাজার টাকা করে পেত গুড্ডু কুমার ।
সেনাছাউনির তথ্য সংগ্রহ করতে শালুগাড়াস্থিত সেনাছাউনির কাছে একটি মিষ্টি দোকানেও কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার বলে জানা গিয়েছে । বেশ কয়েকটি সেনাছাউনির ছবি পাঠানো হয়েছে বলে স্বীকার করেছে সে । তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো নেট কলিংয়ের মাধ্যমে । কী কী তথ্য গুড্ডু এখনও পর্যন্ত পাচার করেছে সেসবই এখন জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা ।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের এজেন্টকে পোখরানে ভারতীয় সেনার অবস্থানের ছবি পাঠিয়েছিল সুরাতের আইএসআই ইনফর্মার