শিলিগুড়ি, 10 ডিসেম্বর: চাকরি প্রার্থীদের লাগাতার আন্দোলনে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি । মামলায় বিচারপতির একের পর এক রায়ে ঝড় উঠেছে শিক্ষামহলে । আর এসবের মাঝে প্রাথমিকে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ মামলায় এখন চর্চার কেন্দ্রে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly) ।
শনিবার তাঁকে নিয়েই ঘটে গেল একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা । হাতের কাছে হাইকোর্টের বিচারপতিকে পেয়ে চাকরির নিয়োগে অনৈতিক ও অনিয়মের অভিযোগ জানাতে পৌঁছে গেলেন চাকরি প্রার্থী । যা নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে শিলিগুড়িতে ৷
অন্যদিকে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এদিন অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই বললেন, "আমি বিচারব্যবস্থাকে গরিব ও পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই । এটা তাঁদের অধিকার ৷ আর আমি সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি । অনেক গরিব মানুষ অভাবের কারণে হাইকোর্টে যেতে পারেন না । কিন্তু বিচারব্যবস্থা সবার জন্য সমান ।"
শনিবার শিলিগুড়ি (Siliguri) সংলগ্ন সুকনার একটি বেসরকারি আইন কলেজের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay) । সেখানে ইয়ুথ পার্লামেন্টের (Youth Parliament) সূচনা করেন তিনি । আর সেই অনুষ্ঠানেই বিচারপতিকে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ জানাতে হাজির হন এক চাকরি প্রার্থী ।
জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি সংলগ্ন নকশালবাড়ি ব্লকের গঙ্গারাম চা-বাগানের সুকান্তপল্লির বাসিন্দা মারিয়া আসুন্তা তিরকে । 2010 সালে ওই ব্লকেরই সেন্ট পিটার্স গয়াগঙ্গা হাইস্কুলে হিন্দি বিষয়ে সহকারি শিক্ষিকার পদে আবেদন করেন তিনি । আবেদনের পর তাঁর নাম প্যানেলে এক নম্বরে আসে । কিন্তু অভিযোগ, তৎকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষক তাঁর পরিবর্তে প্যানেলে থাকা দ্বিতীয়স্থানে থাকা চাকরি প্রার্থীকে চাকরি দিয়ে দেন ।
এরপর 2012 সালে মারিয়া হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন । সেই মামলা এখনও চলছে । কিন্তু এদিন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শিলিগুড়িতে আসার খবর পেয়ে তাঁর দ্বারস্থ হন ওই চাকরি প্রার্থী । তিনি তাঁর নিয়োগের অনিয়ম ও মামলা সংক্রান্ত নথি-সহ ন্যায়ের দাবি জানিয়ে একটি চিঠিও দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে ।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সবটা শোনার পর বিষয়টি তাঁর এক্তিয়ারে নেই বলে জানান । কারণ, তিনি প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার (Primary Recruitment Scam) শুনানি দেখছেন এবং চাকরি প্রার্থী উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত মামলা করেছেন । সেজন্য তিনি মারিয়ার মামলার তথ্য বর্তমান উচ্চশিক্ষার মামলার দায়িত্বে থাকা বিচারপতির কাছে পাঠাতে বলে দেন ।
মারিয়া তিরকে বলেন, "আমার মামলা এখনও চলছে । সেজন্য আমি খবর পেয়ে বিচারপতির দ্বারস্থ হই । তিনি অবশ্য আমার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বর্তমান উচ্চশিক্ষার মামলার বিচারপতির কাছে আবেদন করতে বলেন ।" প্রার্থীর জামাইবাবু নরেন ভদ্র বলেন, "প্যানেলে এক নম্বরে নাম থাকলেও মারিয়াকে সরিয়ে অন্য আরেকজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল । সেজন্য বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এসেছিলাম ।"
আরও পড়ুন: 'ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব', 2016-র পুরো প্যানেল বাতিলের হুঁশিয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের