শিলিগুড়ি, 5 সেপ্টেম্বর: চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে চন্দ্রযান । এবার সূর্যর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে আদিত্য এল-১ মহাকাশ যান । চন্দ্রযানের সঙ্গে গবেষণায় নাম জুড়েছিল রাজ্যের একাধিক গবেষক ও বিজ্ঞানীর । যাঁরা সারা দেশে বাঙালির নাম উজ্জ্বল করেছেন । এবার আদিত্য এল-1 এর সঙ্গে নাম জুড়ল উত্তরবঙ্গ তথা রাজ্যের ।
শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা জন্মেজয় সরকার আদিত্য এল-1 অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি পর্যবেক্ষণের জন্য ওই অভিযানে যে টেলিস্কোপ ইসরো ব্যবহার করছে, সেই টেলিস্কোপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জন্মেজয় । এল-1 পয়েন্টের কাছে হ্যালো অরবিটে সৌর-মহাকাশযানটি পৌঁছানোর পর ওই টেলিস্কোপের মাধ্যমে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করা হবে । আর সেই গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের দলে রয়েছেন জন্মেজয় সরকার ।
উল্লেখ্য, 2 সেপ্টেম্বর সূর্যর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে আদিত্য এল-1 । মঙ্গলবার সকালে দ্বিতীয় কক্ষপথে প্রবেশ করেছে ভারতের সৌরযান । ইসরোর তৈরি ওই মহাকাশযানটিই ভারত থেকে প্রথমবার সূর্য অভিযানে গিয়েছে । আগামী চার মাস দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে ল্যাগরানজিয়ান পয়েন্ট এল-1 পয়েন্টে পৌঁছাবে ওই মহাকাশযান ৷ ওই অভিযান সফল হলে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে ইসরো । আর সেই পর্যবেক্ষণে অবদান থাকবে শিলিগুড়ির জন্মেজয়ের ৷
ছোটবেলায় শিলিগুড়ির জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত ক্লাব ‘সোয়ান’–এর সদস্য হিসেবে আকাশ দেখায় ‘হাতেখড়ি’ জন্মেজয়ের । বাবা দেবাশিস সরকারের হাত ধরেই টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারা, গ্রহ, গ্রহণের প্রতি আকর্ষণ জন্মায় জন্মেজয়ের । ভারতে প্রথমবার এইচ আলফা টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্যগ্রহণের ছবি তোলেন জন্মেজয় । শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি স্কুলে ও কলেজে পড়া শেষের পর তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে অসমের তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন । সেখান থেকেই মহাকাশ পদার্থবিদ্যা বা অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে চর্চা শুরু করেন ।
এরপর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান পুনের ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা ইইউকা-তে । 2019-এ সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার টেলিস্কোপটি তৈরির কাজে জন্মেজয়কে বাছাই করেন বিজ্ঞানীরা ৷ ওই টেলিস্কোপ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রাখবে । ইসরোর এই সূর্য অভিযানে বিভিন্ন সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়েছে ইসরো । তার মধ্যে অন্যতম হল ইইউকা । মহাকাশচর্চায় বিশ্বের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানের ওপরই দায়িত্ব ছিল আদিত্য এল-1 এর সোলার আলট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (এসইউআইটি বা সুট) তৈরির ।
আরও পড়ুন: গন্তব্য সূয্যিমামার দেশ, মহাকাশে পাড়ি দিল ইসরোর আদিত্য-এল1
শিলিগুড়ির জন্মেজয় এই টেলিস্কোপ তৈরির দলে প্রথম থেকেই ছিলেন । জানা গিয়েছে, চন্দ্রযানের থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি পথ পাড়ি দেবে আদিত্য এল-1 । 40 দিনের যাত্রাপথের শেষে কার্যত হ্যালো পয়েন্টে মহাকাশযানটিকে স্থাপন করতে হবে ইসরোর বিজ্ঞানীদের । স্বভাবতই ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সরকার পরিবার । দেবাশিস সরকার বলেন, "খুব ভালো লাগছে যে এরকম একটি অভিযানের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে আমার ছেলে রয়েছে । তবে আসল কাজটা শুরু হবে হ্যালো পয়েন্টে পৌঁছানোর পর । সেই ক’টা দিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ।"