শিলিগুড়ি, 30 মে : লকডাউনের প্রথম ধাক্কাই সামলে উঠতে পারেনি পর্যটন মহল । ফের রাজ্যে কার্যত লকডাউন জারি হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসা । পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবহণ ব্যবসায়ী এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে ৷ দুর্বিষহ পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে হোম স্টে-র সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের । সারা বছর উত্তরবঙ্গ তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্যটন কেন্দ্র এবং ধর্মীয় পীঠস্থানগুলির পর্যটনের উপর আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি নির্ভর করে । উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সের মানুষের একটা বড় অংশ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে । কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসায় কোনওভাবেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারছে না পর্যটন ব্যবসা ৷
উত্তরবঙ্গের প্রায় কুড়ি লাখ মানুষ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত । কিন্তু বারবার করোনার ধাক্কায় সেখানকার পর্যটন শিল্প আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা সে বিষয়ে সন্দিহান পর্যটন মহল । উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্যটন শিল্প নির্ভর করে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যটকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের উপরেও । সব স্বাভাবিক থাকলে পরে প্রতিদিন গড়ে নয় কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে । যা এখন প্রায় শূন্যের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে । পর্যটনের সঙ্গে জড়িত পরিবহণ ব্যবসায়ী এবং হোটেল ব্যবসায়ীদের পরিস্থিতি শোচনীয় ৷ প্রায় কুড়ি হাজার ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী এবং প্রায় দশ হাজার হোটেল ও হোম স্টে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে ।
প্রতি বছর গড়ে প্রায় দশ লাখ মানুষ উত্তরবঙ্গে বেড়াতে যান ৷ এর মধ্যে প্রায় দেড় থেকে দু লাখ বিদেশি পর্যটক থাকে । এই করোনা আবহে বিদেশি পর্যটক তো দূর অস্ত, রাজ্যের পর্যটকদেরও দেখা নেই ৷ উত্তরের পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম বেঙ্গল সাফারি পার্ক, গজলডোবা ভোরের আলো, বোদাগঞ্জের ভ্রামরী দেবীর মন্দির, মহানন্দা অভয়ারণ্য, জলদাপাড়া অভয়ারণ্য, সিকিমের নাথুলা, দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক, টাইগার হিল সহ একাধিক জায়গা এখন পর্যটকশূন্য । পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা এখন চাষাবাদ অথবা বেসরকারি সংস্থার চাকরিতে যোগ দিতে শুরু করেছেন ।
আরও পড়ুন : ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে ফিশারি ফার্ম, দুর্গাপুরে কর্মসংস্থানের দিশা দেখাচ্ছেন অভিজিৎ
এই বিষয়ে হিমালায়ান হসপিটালিটি ট্যুর ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "প্রথম লকডাউনে প্রায় একশো কোটি টাকার পর্যটন শিল্পে ক্ষতি হয়েছিল । সেই ক্ষতি এখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি । এরই মধ্যে দ্বিতীয় লকডাউনে পর্যটন ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে । কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকার সহযোগিতা না করলে পর্যটন শিল্পকে আর দাঁড় করানো সম্ভব হবে না ৷" অ্যাসোসিয়েশন ফর কন্সেরভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের কনভেনার রাজ বসু বলেন, "পরিবহণ এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি সমস্যার মুখে পড়েছেন । পাশাপাশি ধর্মীয় পীঠস্থানগুলিকে কেন্দ্র করে যে ব্যবসাগুলি চলত সেগুলিও মুখ থুবড়ে পড়েছে । প্যাকেজ ট্যুরের জন্য যত বুকিং হয়েছিল তার সমস্তটাই বাতিল হয়ে গিয়েছে ।"
এই বিষয়ে শিলিগুড়ি ট্রান্সপোর্ট অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয়ন্ত মজুমদারের বক্তব্য, "পর্যটক তো দূর অস্ত স্থানীয় মানুষও আসছেন না ৷ ব্যবসা না হলেও গাড়ির কিস্তি এবং বীমার টাকা আমাদের দিতেই হয় । ফলে গাড়ির মালিক এবং চালকদের সংসার চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।" গ্রেটার হোটেলিয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, "লকডাউনের কারণে উত্তরের সমস্ত হোটেল বন্ধ । প্রায় 75 হাজার হোটেলের ঘর এখন সম্পূর্ণ ফাঁকা পড়ে রয়েছে । প্রায় 20-22 হাজার হোটেল কর্মীদের বাধ্য হয়ে ছাড়িয়ে দিতে হয়েছে ৷ আনলকের সময় কর্মীদেরকে আর ফিরে পাওয়া যাবে কিনা সেই বিষয়েও সংশয় রয়েছে ।"