দার্জিলিং, 14 জুলাই : জিটিএ (GTA)-র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই দুর্নীতি ও অনুন্নয়ন নিয়ে শেষবারের মতো চরম হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Bengal Governor Jagdeep Dhankhar) ।
বৃহস্পতিবার দার্জিলিংয়ের ভানুভবনে জিটিএ-র নব নির্বাচিত মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক, সহকারি কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও চেয়ারম্যান পদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয় । আর সেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই জিটিএ নিয়ে বিগত দিনের একাধিক অভিযোগ, আর্থিক দুর্নীতি, অনুন্নয়ন ও অডিট নিয়ে সরব হন রাজ্যপাল ।
শুধু তাই নয়, অডিট না হলে আর্থিক দুর্নীতিতে যারা জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি (Governor warns of Action against Corruption Underdevelopment in GTA Swearing in Ceremony) । পাশাপাশি কোনোভাবেই যাতে তার ক্ষমতা ও সহ্যের সীমা লঙ্ঘন না করা হয়, তাও সাফ জানিয়েদেন রাজ্যপাল । মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের মাঝেই ফের একবার রাজ্য ও রাজ্যপালের সংঘাত প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিকমহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে ।
তবে শপথ গ্রহণের দিনই জিটিএ যাতে স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করা হয়, প্রতি বছর যেন অডিট করা হয় এবং নতুন বোর্ড যাতে পাহাড়ের রাস্তা, পানীয় জলের সমস্যা-সহ সমস্ত সমস্যার সমাধান করে পর্যটনের দিক দিয়ে পাহাড়কে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরে, সেই বার্তা দেন রাজ্যপাল ।
রাজ্যপাল ধনকড় বলেন, "পাহাড়ের উন্নয়নই প্রধান । এই জিটিএ নির্বাচনটি তৃতীয় হওয়া উচিত ছিল, দুর্ভাগ্যবশত এটি দ্বিতীয়বার হল । যখন প্রথম নির্বাচন হয়েছিল, তখন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং পাহাড়ে উপস্থিত ছিলেন । এটা খুব ভালো বিষয় । আমি শুভেচ্ছা জানাই নির্বাচিতদের ।’’
এর পরই তিনি নানা অভিযোগ নিয়ে সরব হন ৷ ধনকড় বলেন, ‘‘আমি তিন বছরে দেখেছি উন্নয়নে অনেক খামতি রয়েছে । 2019 সাল থেকে যেসব সমস্যা আমার কাছে উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে প্রধান পানীয় জলের সংকট, বেহাল রাস্তা, জিটিএ-র চুক্তি লঙ্ঘন করা, আর্থিক তছরুপ, হিসেবে গোলমাল, অস্বচ্ছতা । একবারের জন্যও অডিট হয়নি, যেটা প্রতি বছর হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল । আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে, এবার যাতে সেগুলি কোনোভাবেই তা না হয় । প্রত্যেকে নিজের প্রতিজ্ঞা রাখবেন । আর নিজের রাজ্যপালকে ভরসা করুন ।"
এরপরই হুঁশিয়ারি দেন রাজ্যপাল । তিনি বলেন, "হাজার কোটি টাকার হিসেব, দুর্নীতি ও আর্থিক গরমিলের কিনারা করা হবে । প্রতি বছর অডিট করতে হবে । যারা যারা আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতি করেছে, তাদের প্রকাশ্যে আনা হবে । আপনারা আমার পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন । একজন রাজ্যপাল কী করতে পারেন, তাঁর সহ্যের পরীক্ষা নেবেন না । আমি বারবার প্রত্যেক প্রশাসককে বলেছি, তাঁরা যাতে তাঁদের দায়িত্ব সঠিকমতো পালন করেন । কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে বিফল হয়েছেন । একজনকেও ছাড়া হবে না ।’’
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অপরাধ পদ বোঝে না, কেউ উঁচু পদে হতে পারে, কিন্তু কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় । নিজেদের দায়িত্ব স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করুন । বিগতদিনের ভুল শুধরে নিতে হবে । না হলে এমনভাবে সেই অপরাধ দমন করা হবে, যেমন গঙ্গা পাপ ধুয়ে দেয় ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি প্রতিবার অভিযোগ, তথ্য ও প্রমাণ পেয়েছি । জিটিএ দুর্নীতি, পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপোষন, আইনলঙ্ঘনের আখড়া হয়ে উঠেছিল । আর প্রশাসন নীরব ছিল । এগুলো কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না । আমার কোনও কথা যেন হালকাভাবে না নেওয়া হয় । যদি শপথ নিয়েছেন তা মেনে চলুন । না হলে এবার আগের থেকেও কড়া ও দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে ।"