শিলিগুড়ি, 15 এপ্রিল: আজ পয়লা বৈশাখ ৷ নতুন বছর ভালো কাটুক, সুন্দর কাটুক, সমৃদ্ধশালী হোক, এই কামনায় চলছে পুজোপাঠ, অনুষ্ঠান ৷ এমন দিনে আসুন মন ভালো করা এক 'গল্প' শোনাই আপনাদের ! এই গল্পের নায়ক এক ছাপোষা কৃষক ৷ যিনি চাইলে গড়পড়তা একটা জীবনে মোটের উপর সুখী থাকতে পারতেন ! কিন্তু, তাঁর দু'চোখে স্বপ্ন ! মনে সেই স্বপ্ন সত্যি করার সংকল্প ! সেই কোন কিশোর বয়সে কলকাতার পুজোমণ্ডপে দেখেছিলেন টাইটানিকের আদল ৷ তখনই ঠিক করে নিয়েছিলেন, বাড়ি যদি কোনওদিন বানাতেই হয়, তাহলে তা হবে এক্কেবারে টাইটানিকের মতো ! সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে আকার নিচ্ছে বাস্তবের মাটিতে ! সেদিনের সেই কিশোর আজকের মধ্যবয়সী একজন মানুষ ৷ শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ফাঁসিদেওয়া ব্লকের নিজবাড়ি গ্রামে 'নিজের টাইটানিক' গড়ে তুলছেন মিন্টু রায় ৷ পাশে পেয়েছেন স্ত্রী ইতি ও দুই ছেলেমেয়েকে ৷
মিন্টুরা আদতে উত্তর 24 পরগনার হেলেঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা ৷ প্রায় 20-25 বছর আগে বাবার হাত ধরে শিলিগুড়ি আসেন তিনি ৷ তারপর থেকে এখানেই বাস ৷ নিজবাড়ি গ্রামে একর খানেক চাষের জমির রয়েছে মিন্টুর ৷ সেই জমিতে সবজি চাষ করেন তিনি ৷ ফসল বেচে চলে চারজনের সংসার ৷ সেই খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়েই টাইটানিকের আদলে তিনতলা বাড়ি তৈরি করছেন মিন্টু ৷
ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিলেন নির্মীয়মাণ রায়বাড়ির অন্দরে ৷ এখনও সেখানে অনেক কাজ বাকি ৷ মিন্টু জানালেন, প্রাথমিকভাবে কিছু টাকা জোগাড় করে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন ৷ কিন্তু, টাইটানিকের আদলে বাড়ি তৈরি করা হবে শুনে কোনও ইঞ্জিনিয়রই নকশা আঁকতে রাজি হননি ৷ মেলেনি মনের মতো কোনও রাজমিস্ত্রী ৷ তাও হাল ছাড়েননি মিন্টু ৷ অনেক খেটে নিজেই তৈরি করেছেন বাড়ির 'ব্লু প্রিন্ট' ৷ নেপালে গিয়ে, সেখানে কয়েক বছর থেকে শিখে এসেছেন রাজমিস্ত্রীর কাজও ৷
এরপর নিজেই বাড়ির তৈরির কাজ শুরু করেন মিন্টু ৷ সেটা ছিল 2010 সাল ৷ আর এখন 2023 ! 9.5 ডেসিমেল জমির উপর তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের এই টাইটানিক ! উচ্চতা 30 ফুট ৷ বাড়িটি লম্বায় 39 ফুট এবং চওড়ায় 13 ফুট ৷ তিনতলা এই বাড়ির একাংশেই থাকেন রায় পরিবারের সদস্যরা ৷ বাকিটার কাজ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ৷ এখনও পর্যন্ত এই বাড়ি তৈরি করতে 10 লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে ৷ আরও অনেক টাকা দরকার ৷ তার জোগান যখন যেমন হচ্ছে, সেভাবেই এগোচ্ছে বাড়ি তৈরির কাজ ৷
আরও পড়ুন: বাড়িতেই হেলিকপ্টার তৈরি করে তাক লাগালেন পঞ্চম শ্রেণিতে ফেল করা রেজাউল
মিন্টু যখন এই কাজে হাত দিয়েছিলেন, তখন অনেকেই তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করেছিলেন ৷ এখন তাঁদের কাছেই এই জাহাজবাড়ি এলাকার 'ল্যান্ডমার্ক' ! এই মুহূর্তে একজন রাজমিস্ত্রীকে সাহায্যের জন্য সঙ্গে রেখেছেন মিন্টু ৷ তাঁর পরিকল্পনা, বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হলে তাঁর 'টাইটানিকের সামনের কেবিনে' একটি ছোট রেস্তোরাঁ বানাবেন ৷ তাতে পকেটে কিছুটা রেস্তও আসবে ! তবে, সেই স্বপ্ন কবে পূরণ হবে, জানা নেই মিন্টুর ৷ কিন্তু, মুহূর্তটা যে একদিন আসবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত তিনি ৷ বছর শুরুর দিনে এমন 'কাহিনি' সত্যিই অনুপ্রেরণা জোগায় ৷ নয় কি ?