বংশীহারী, 28 অগাস্ট : বাবা-মা থেকেও আশ্রয়হীন নাবালক তিন ভাই ৷ আস্তানা বলতে আছে স্থানীয়দের বাড়ির উঠোন অথবা কারও দোকানের চালা ৷ তাদের বয়স বারো, দশ ও আট ৷ এই তিনজনের মধ্যে তিন দিন আগে একজন হঠাৎকরে উধাও হয়ে যাওয়ায় চিন্তিত এলাকাবাসী ৷ বংশীহারী ব্লকের ব্রজ বল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা এই তিন ভাই হল রাম, কার্তিক ও গণেশ ৷ এই তিন ভাইয়ের যাতে সুব্যবস্থা হয় সেজন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দারা ৷
আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা বুধু সোরেন ৷ ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন ৷ তাঁর স্ত্রী শান্তি হাঁসদা স্বামী-সংসার ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় তাঁদের তিন সন্তান রাম, কার্তিক ও গণেশের আশ্রয় জুটেছিল দিদার কাছে ৷ ছেলেদের দেখাশোনার জন্য আরও একটি বিয়ে করেন বুধু সোরেন ৷ কিন্তু বিয়ের ছ'মাস যেতে না যেতেই সৎমা তিন ভাইয়ের দিক থেকে মুখ ফেরায় ৷ ফলে বাধ্য হয়েই দিদার কাছেই থাকতে শুরু করে তিন ভাই ৷ কিন্তু দিনকয়েক আগে দিদা মারা যাওয়ায় মাথার উপর থাকা ছাদটাও সরে যায় কার্তিক-গণেশের ৷ বাবা কাজের সূত্রে ভিনরাজ্যে থাকেন ৷ সৎমা তাদের দায়িত্ব না নেওয়ায় তারা এখন অনাথ ৷ ফলে পাড়ায় কোনও ব্যক্তির দোকান অথবা খড়ের গাদা অথবা গাছতলাতেই রাত কাটে তিন ভাইয়ের ৷ এলাকার মানুষের দয়ায় জুটত খাবার ৷ আবার কোনও কোনও দিন এমনও গেছে যে দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও তিন ভাই দাঁতে কাটেনি কিছুই ৷ এই অবস্থা গত তিন-চার দিন আগে বড় ভাই বছর বারোর রাম হঠাৎই উধাও হয়ে যাওয়া চিন্তিত এলাকাবাসী ৷ তাদের দাবি, অন্তত কার্তিক-গণেশের দায়িত্ব যাতে প্রশাসন নেয় ৷ তারা যেন সুন্দর ভবিষ্যৎ পায় ৷
আরও পড়ুন: রাতের অন্ধকারে চলছে অসামাজিক কাজকর্ম, অভিযোগ গঙ্গারামপুরে
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ওই তিন নাবালকের বিষয়টি চোখে পড়লেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ৷ স্থানীয় ববিতা মণ্ডল জানান, ছেলেগুলোর নির্দিষ্ট কোনও আশ্রয় নেই ৷ হাটখোলা, বদলপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় ৷ কখনও ধান ভাঙা মিলের মধ্যে রাত কাটায় আবার কখনও কারও দোকানের বারান্দায় ৷ এলাকার কোনও লোকের যদি মায়া হয় তবেই এদের খাবার জোটে ৷ কেউ জামাকাপড় আবার কেউ খাওয়ারের জন্য দশ-বিশ টাকা দেন । এরা অনাথের মতো জীবনযাপন করছে । আমরা চাইছি এরা মানুষের মতো মানুষ হোক ৷ বংশীহারী ব্লকের BDO সুদেষ্ণা পাল জানান, ব্রজ বল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুত ওই নাবালকদের যাতে চাইল্ড লাইনে দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা হবে ।