বংশীহারী, 19 জুলাই : জল থই থই চারদিক । বাড়ি থেকে বেরোনো দায় । তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই । হাতে ক্যান, পিঠে ব্যাগ - জল পেরিয়েই আসছে ওরা । স্কুলে ক্লাস হবে না । পোকামাকড়ের ভয় । তাই, ওদের গন্তব্য মন্দির চত্বর । ম্যাডাম আগেই এসে গেছেন । ওরা এল কিছুক্ষণ পর । ওই 10টা নাগাদ । জনা কয়েক । শুরু হল পড়াশোনা । ম্যাডামের শেখানো, 'অ-আ-ক-খ' আউড়ে যেন তৃপ্তি ।
বুনিয়াদপুর পৌরসভার 6 নম্বর ওয়ার্ডের ধূমপাড়ার হালদারপাড়া । এখানেই চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র । খাতায় কলমে যার নাম টেগোর সোসাইটি- সেন্টার নম্বর 82 । ছাত্র-ছাত্রী 90 । স্কুল বিল্ডিংয়েই আছে মিড-ডে-মিলের ব্যবস্থা ।
টানা বৃষ্টিতে জল বেড়েছে টাঙন নদীর । দক্ষিণ দিনাজপুরের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত । ঘরে ঘরে জল ঢুকে একাকার অবস্থা । মঙ্গলবার পর্যন্ত সেন্টারের কাছে জল অতটা ছিল না । তবে, বুধবার থেকে পরিস্থিতি বদলায় । এলাকায় বাড়তে থাকে জল । বর্তমানে গ্রাম প্রায় বানভাসি । স্কুল বিল্ডিংয়ে জল ঢোকেনি । কিন্তু, চারিদিক জলে ঘেরা । দেখলে মনে হবে, পুকুরের মাঝে তৈরি হওয়া কোনও এক বাড়ি ! এই অবস্থায় স্কুলে পড়াশোনা অসম্ভব । পোকামাকড়, সাপের ভয় গ্রাস করে প্রতিনিয়ত । তাহলে কী হবে ? পড়াশোনার পাঠ কি শিকেয় উঠবে ? না । তা হতে দেননি অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের ম্যাডামরা । সামনেই একটু উঁচু এলাকায় রয়েছে একটি মন্দির । সেখানেই ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেন । ক্লাস করলেই হবে না । চালাতে হবে পেটও ! মিড-ডে-মিলের ব্যবস্থা করা হয় পাশের বাড়িতে ।
এবিষয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা জয়িতা রায় বলেন, "স্কুলে জল ঢোকেনি । কিন্তু, চারিদিকে জল জমে আছে । বাচ্চাগুলোকে নিয়ে যাব কীভাবে ? পোকামাকড়, সাপেরও ভয় আছে । কিছু যদি হয়ে যায় ! তাই, মন্দিরে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছি । ওরাও চলে আসে । পড়াশোনার টানে । আমরাও না গিয়ে পারি না ।" জল যদি মন্দিরে প্রবেশ করে ? শুনে কিছুটা আতঙ্কিত জয়িতা । বললেন, "জানি না তখন কী হবে । খুব চিন্তায় আছি । আমি নিজে ফোন করে স্যার, সুপারভাইজ়ার, BDO-কে জানিয়েছি । ওঁরা নিশ্চয়ই কিছু ব্যবস্থা নেন ।"
বংশীহারী ব্লকের CDPO (চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট অফিসার) মেঘনাথ মিস্ত্রি বলেন, "সেন্টারে এখনও জল প্রবেশ করেনি । তবে, শুনেছি ক্লাস করাতে অসুবিধা হচ্ছে । পাশে ক্লাস হচ্ছে । একটি বাড়িতে মিড-ডে-মিল চলছে । এটা চালাতেই হবে । আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি ।"
ওদের অবশ্য এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই । ম্যাডামের নির্দেশে ছড়া বলে চলেছে । ক্লাস শেষে মন্দির চত্বরেই একটু খেলে নেওয়া । খেয়ে-দেয়ে জল পেরিয়ে হাসিমুখেই বাড়ির পথ ধরা । এই পথ ধরে কাল আবার আসতে হবে যে !