ETV Bharat / state

ঐতিহাসিক বানগড়কে সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ঐতিহাসিক বানগড়কে সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি পর্যটক থেকে ইতিহাসবিদদের। কথিত রয়েছে বান রাজার নাম থেকেই বানগড় নাম হয়েছে। বান বাজার মেয়ে ঊষার সঙ্গে নাকি সম্পর্ক ছিল শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধের। কিন্তু রাক্ষস বংশের রাজা বান অনিরুদ্ধকে মেনে নেননি । ঊষাকে অপহরণ করে যেই রাস্তা দিয়ের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । তাই সেই রাস্তাটি "ঊষাহরণ" রাস্তা নামে পরিচিত।

historic place bangarh
ঐতিহাসিক বাণগড়
author img

By

Published : Aug 12, 2020, 4:58 AM IST

গঙ্গারামপুর, 10 অগস্ট : দুই বাংলার কাঁটাতারের বাঁধন মেনে এগিয়েছে তিন নদী ৷ টাঙ্গন, পুনর্ভবা আর আত্রেয়ী। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে শিববাটি ৷ এই রাস্তাটা ক্রমশ উত্তরে গিয়েছে পুনর্ভবাকে প্রায় যেন স্পর্শ করে ৷ এই পথে পথে ইতিহাস কথা বলে ৷ অনাদি অতীত যেন সামনে হাজির হয় ৷ উত্তরের এই পথ ধরে কিছুদূর এগোলেই আর্কিওলজিকাল সার্ভের নীল সাইনবোর্ড ৷ আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছে, পৌঁছে গিয়েছেন ইতিহাস প্রতিদ্ধ বানগড়ে ৷ বানগড়, সেই ঐতিহাসিক সময় থেকে এর অস্তিত্ব

historic place bangarh
গঙ্গারামপুর শহর থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বানগড়

এখানে এলেই পাল সেন যুগ-সহ বিভিন্ন যুগের স্থাপত্য নজরে আসে। গঙ্গারামপুর শহর থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বানগড়। পায়ে হেঁটে ও গাড়ি করে খুব সহজেই বানগড়ে যাওয়া যায়। কথিত রয়েছে বান রাজার নাম থেকেই এর নাম হয়েছে। বান বাজার মেয়ে ঊষার সঙ্গে নাকি সম্পর্ক ছিল শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধের। কিন্তু রাক্ষস বংশের রাজা বান অনিরুদ্ধকে মেনে নেননি। ঊষাকে অপহরণ করে যেই রাস্তা দিয়ের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই রাস্তাটি "ঊষাহরণ" রাস্তা নামে পরিচিত। ঊষা অনিরুদ্ধের বিয়ের ছাদনা তলার চারটি কলা গাছ পাথর স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। যা এখন পবিত্র স্থান বলে পরিচিত। আরও কথিত রয়েছে 1937 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কুঞ্জ গোবিন্দ গোস্বামী নেতৃত্বে বানগড়ে প্রথম খনন কার্য হয়। সেই সময় মাটির নিচ থেকে ইতিহাসের নানান ধ্বংসাবশেষ মেলে। তার থেকে গুপ্ত, মৌর্য, পাল ও সেন যুগের এবং মুসলিম আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য সামনে আসে । পরবর্তীতে 2007, 2008 এবং 2009 সালেও বানগড়ে খননকার্য চালানো হয়। খননকার্যে পাল সেন বংশ সহ অন্য বংশের নানা মূর্তি এবং মুদ্রা উদ্ধার হয়। তবে তারপর আর খননকার্য চালানো হয়নি। এবিষয়ে ইতিহাসবিদ সমিত ঘোষ জানান, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুরাতত্ত্বের আঁতুড়ঘর। আর বানগড়ে সব থেকে বেশি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন মেলে। এই বানগড়কে নিয়ে সেখানে ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে রয়েছে। শুঙ্গ, গুপ্ত, অম্বজ, পাল, সেন এবং মুসলিম আমলের নানা স্থাপত্য সেখানে চোখে পড়ে। এই বানগড়ে যে খনন কার্য শুরু হয় তা 1938 থেকে 1941 সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুঞ্জ গোবিন্দ গোস্বামীর নেতৃত্বে। সে সময় ছটি অধি বসতি স্তর পাওয়া যায়। তখনই পাল ও সেন যুগের তথ্য সামনে এসেছে। এরপর দীর্ঘদিন বানগড়ে খননকার্য বন্ধ ছিল। 2007 সালে পাটনা এক্সাবেশন ব্রাঞ্চ থ্রির অধীনে অধ্যাপক সতীশ স্মরণের নেতৃত্বে খনন হয়। তখনও সেই কারণে বেশ কিছু নিদর্শন উঠে আসে। পরবর্তীতে 2008 এবং 2009 সালে ফের খননকার্য করা হয়। বিভিন্ন সময় খননকার্যে মূর্তি মুদ্রাসহ নানান নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার বেশির ভাগ বালুরঘাট কলেজ ও জেলা মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।

historic place bangarh
গঙ্গারামপুর শহর থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বানগড়

এই বানগড়কে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারত । কিন্তু রাজ্য হেরিটেজ কমিশন বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কোনওদিনই সেভাবে কোনওরকম উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অধ্যাপক কুঞ্জ গোবিন্দ গোস্বামীর আমলে একখানি বোর্ড লাগানো হয়েছিল, যাতে উল্লেখ করা হয়েছিল এই অঞ্চলের কোনও কিছু ব্যবহার করা যাবে না। তবে সেইসব নির্দেশ বা নির্দেশিকাকে অমান্য করেই বানগড়ে মাটি খনন থেকে শুরু করে জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উদ্যোগী হলেই বানগড় তার হৃতগৌরব ফিরে পাবে। এবং একে নিয়ে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে জেলায়। অন্যদিকে কালিয়াগঞ্জ থেকে বানগড়ে আসা পর্যটক নারায়ণ সরকার জানান, "আজ বোল্লা কালীমন্দিরে সপরিবারে পুজো দিতে এসেছিলেন। তাই পুজো শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাণগড় ঘুরতে আসেন তারা। তিনি এর আগেও বাণগড় দেখে গেছেন। তবে তার পরিবারের অন্যরা কেউ সেভাবে দেখেননি। তাই সকলকে নিয়ে এসেছেন।" বাণগড়কে সাজিয়ে তুললে এখানে ভালো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে বলে নারায়ণবাবু জানিয়েছেন। এবিষয়ে গঙ্গারামপুরের বিধায়ক গৌতম দাস জানান, বান কোটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ। তাই তাঁরা চাইলেও কিছু করতে পারছেন না। তবে বানগড়ে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে সবরকম চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

historic place bangarh
ঐতিহাসিক বানগড়কে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি

এই বানগড়কে নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিল বর্তমান রাজ্য সরকার। এনিয়ে বানগড়ে শুরু হয়েছিল খননকার্য। তবে কিছুদিন চলার পর তা অজানা কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বানগড়ের বেশিরভাগ জমি বেদখল হয়ে গেছে। এর ফলে বাণগড়ে দিনদিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। এই অবস্থায় পর্যটক থেকে জেলার ইতিহাসবিদদের দাবি, অবিলম্বে বানগড়কে সংস্কার করে গড়ে তোলা হোক পর্যটন কেন্দ্র।

বানগড়কে সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি...

গঙ্গারামপুর, 10 অগস্ট : দুই বাংলার কাঁটাতারের বাঁধন মেনে এগিয়েছে তিন নদী ৷ টাঙ্গন, পুনর্ভবা আর আত্রেয়ী। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে শিববাটি ৷ এই রাস্তাটা ক্রমশ উত্তরে গিয়েছে পুনর্ভবাকে প্রায় যেন স্পর্শ করে ৷ এই পথে পথে ইতিহাস কথা বলে ৷ অনাদি অতীত যেন সামনে হাজির হয় ৷ উত্তরের এই পথ ধরে কিছুদূর এগোলেই আর্কিওলজিকাল সার্ভের নীল সাইনবোর্ড ৷ আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছে, পৌঁছে গিয়েছেন ইতিহাস প্রতিদ্ধ বানগড়ে ৷ বানগড়, সেই ঐতিহাসিক সময় থেকে এর অস্তিত্ব

historic place bangarh
গঙ্গারামপুর শহর থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বানগড়

এখানে এলেই পাল সেন যুগ-সহ বিভিন্ন যুগের স্থাপত্য নজরে আসে। গঙ্গারামপুর শহর থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বানগড়। পায়ে হেঁটে ও গাড়ি করে খুব সহজেই বানগড়ে যাওয়া যায়। কথিত রয়েছে বান রাজার নাম থেকেই এর নাম হয়েছে। বান বাজার মেয়ে ঊষার সঙ্গে নাকি সম্পর্ক ছিল শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধের। কিন্তু রাক্ষস বংশের রাজা বান অনিরুদ্ধকে মেনে নেননি। ঊষাকে অপহরণ করে যেই রাস্তা দিয়ের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই রাস্তাটি "ঊষাহরণ" রাস্তা নামে পরিচিত। ঊষা অনিরুদ্ধের বিয়ের ছাদনা তলার চারটি কলা গাছ পাথর স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। যা এখন পবিত্র স্থান বলে পরিচিত। আরও কথিত রয়েছে 1937 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কুঞ্জ গোবিন্দ গোস্বামী নেতৃত্বে বানগড়ে প্রথম খনন কার্য হয়। সেই সময় মাটির নিচ থেকে ইতিহাসের নানান ধ্বংসাবশেষ মেলে। তার থেকে গুপ্ত, মৌর্য, পাল ও সেন যুগের এবং মুসলিম আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য সামনে আসে । পরবর্তীতে 2007, 2008 এবং 2009 সালেও বানগড়ে খননকার্য চালানো হয়। খননকার্যে পাল সেন বংশ সহ অন্য বংশের নানা মূর্তি এবং মুদ্রা উদ্ধার হয়। তবে তারপর আর খননকার্য চালানো হয়নি। এবিষয়ে ইতিহাসবিদ সমিত ঘোষ জানান, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুরাতত্ত্বের আঁতুড়ঘর। আর বানগড়ে সব থেকে বেশি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন মেলে। এই বানগড়কে নিয়ে সেখানে ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে রয়েছে। শুঙ্গ, গুপ্ত, অম্বজ, পাল, সেন এবং মুসলিম আমলের নানা স্থাপত্য সেখানে চোখে পড়ে। এই বানগড়ে যে খনন কার্য শুরু হয় তা 1938 থেকে 1941 সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুঞ্জ গোবিন্দ গোস্বামীর নেতৃত্বে। সে সময় ছটি অধি বসতি স্তর পাওয়া যায়। তখনই পাল ও সেন যুগের তথ্য সামনে এসেছে। এরপর দীর্ঘদিন বানগড়ে খননকার্য বন্ধ ছিল। 2007 সালে পাটনা এক্সাবেশন ব্রাঞ্চ থ্রির অধীনে অধ্যাপক সতীশ স্মরণের নেতৃত্বে খনন হয়। তখনও সেই কারণে বেশ কিছু নিদর্শন উঠে আসে। পরবর্তীতে 2008 এবং 2009 সালে ফের খননকার্য করা হয়। বিভিন্ন সময় খননকার্যে মূর্তি মুদ্রাসহ নানান নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার বেশির ভাগ বালুরঘাট কলেজ ও জেলা মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।

historic place bangarh
গঙ্গারামপুর শহর থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বানগড়

এই বানগড়কে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারত । কিন্তু রাজ্য হেরিটেজ কমিশন বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কোনওদিনই সেভাবে কোনওরকম উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অধ্যাপক কুঞ্জ গোবিন্দ গোস্বামীর আমলে একখানি বোর্ড লাগানো হয়েছিল, যাতে উল্লেখ করা হয়েছিল এই অঞ্চলের কোনও কিছু ব্যবহার করা যাবে না। তবে সেইসব নির্দেশ বা নির্দেশিকাকে অমান্য করেই বানগড়ে মাটি খনন থেকে শুরু করে জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উদ্যোগী হলেই বানগড় তার হৃতগৌরব ফিরে পাবে। এবং একে নিয়ে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে জেলায়। অন্যদিকে কালিয়াগঞ্জ থেকে বানগড়ে আসা পর্যটক নারায়ণ সরকার জানান, "আজ বোল্লা কালীমন্দিরে সপরিবারে পুজো দিতে এসেছিলেন। তাই পুজো শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাণগড় ঘুরতে আসেন তারা। তিনি এর আগেও বাণগড় দেখে গেছেন। তবে তার পরিবারের অন্যরা কেউ সেভাবে দেখেননি। তাই সকলকে নিয়ে এসেছেন।" বাণগড়কে সাজিয়ে তুললে এখানে ভালো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে বলে নারায়ণবাবু জানিয়েছেন। এবিষয়ে গঙ্গারামপুরের বিধায়ক গৌতম দাস জানান, বান কোটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ। তাই তাঁরা চাইলেও কিছু করতে পারছেন না। তবে বানগড়ে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে সবরকম চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

historic place bangarh
ঐতিহাসিক বানগড়কে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি

এই বানগড়কে নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিল বর্তমান রাজ্য সরকার। এনিয়ে বানগড়ে শুরু হয়েছিল খননকার্য। তবে কিছুদিন চলার পর তা অজানা কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বানগড়ের বেশিরভাগ জমি বেদখল হয়ে গেছে। এর ফলে বাণগড়ে দিনদিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। এই অবস্থায় পর্যটক থেকে জেলার ইতিহাসবিদদের দাবি, অবিলম্বে বানগড়কে সংস্কার করে গড়ে তোলা হোক পর্যটন কেন্দ্র।

বানগড়কে সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি...
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.