বালুরঘাট, 11 ডিসেম্বর : সরকার মনোনীত নতুন পৌর বোর্ড গঠন হতেই এবার জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন বালুরঘাট পৌরসভার প্রাক্তন তৃণমূল বোর্ডের চেয়ারম্যান রাজেন শীল । এই নিয়ে গতকাল সকালে বালুরঘাট পৌরসভার নতুন 18 নম্বর ওয়ার্ডের ডানলোপ মোড় এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি । সেখানেই রাজেনবাবু জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হন । বলেন, "ইচ্ছে করেই তাঁকে ওই কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি । এমনকী এমসিআইসি'র কেউই সুযোগ পায়নি । বালুরঘাটবাসীকে নিয়ে খেলা হচ্ছে । এর প্রভাব আসন্ন পৌরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে পড়বেই ৷ বালুরঘাট পৌরসভা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, তাই যেটা করবে সেটাই মেনে নিতে হবে । তৃণমূল বোর্ড থাকাকালীন বালুরঘাট শহরের 31টি নতুন প্রকল্প করা হয়েছিল । কিন্তু, পৌরবোর্ড আসার পর থেকেই কোনও উন্নয়ন হয়নি । এমনকী সাধারণ কোনও সার্টিফিকেটের জন্য শহরবাসী হয়রানির শিকার হয়েছে। জেলা নেতৃত্ব ও বালুঘাটের শীর্ষ নেতারা এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে । যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের কাজ বুঝতেই সময় চলে যাবে, কোনও উন্নয়ন হবে না । "
অন্যদিকে, গঙ্গারামপুর পৌরসভার বোর্ড নিয়ে সরব হয়েছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও পৌর প্রশাসক অমলেন্দু সরকার । আজই গঙ্গারামপুর পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন বিপ্লব অনুজ প্রশান্ত মিত্র । আর প্রশান্ত মিত্রের সঙ্গে অমলেন্দু সরকারের দ্বন্দ্ব বহু পুরনো ৷ এর ফলে বলাই বাহুল্য জেলার দু'টি পৌরসভার পৌরভোট নিয়ে জেলার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে ৷
প্রসঙ্গত, বালুরঘাট পৌরসভার তৃণমূল ভোটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে 2018 সালের 23 অক্টোবর । তারপর থেকে প্রশাসক পৌরসভার শীর্ষে রয়েছে । সম্প্রতি, সরকারের পক্ষ থেকে 11 জনকে নিয়ে পৌর প্রশাসক বোর্ড করা হয়েছে । যার চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়েছে বালুরঘাট হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক হরিপদ সাহাকে । এছাড়াও 10 জন সদস্য রয়েছে ৷ শাসক দলের পক্ষ থেকে নিজেদের ভাবমূর্তি পালটাতে অরাজনৈতিক বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ।
আরও পড়ুন : নজরে 21, নাড্ডার পর এবার শাহ, 19 শে কলকাতায়
এবিষয়ে সাংবাদিক বৈঠকে রাজেন শীল বলেন, " বালুরঘাট ছাড়া প্রায় সমস্ত পৌরসভায় প্রশাসক বোর্ডে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । এমনকী প্রাক্তন চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরদেরই এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । একমাত্র বালুরঘাটের ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি । বালুরঘাট পৌরসভা ছেলে খেলার জায়গা নাকি । যাদের নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের কাজকর্ম বুঝতে, জানতেই বছর পার হয়ে যাবে । তাদের দ্বারা কোনও কাজ হবে না । যেমন প্রশাসকরা প্রায় আড়াই বছর ক্ষমতায় থাকলেও একটাও নতুন প্রজেক্ট করে উঠতে পারেনি । এমনকী পরিষেবা পর্যন্ত সঠিকভাবে দিতে পারেনি । মানুষকে বঞ্চনা করা হয়েছে । যার দায় শাসক দলকে নিতে হচ্ছে । এমন অবস্থায় এমন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে এসে পরিচালনা করার মতো সিদ্ধান্ত ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছুই নয় । "
অন্যদিকে এবিষয়ে তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর সুভাষ চাকি বলেন, " এটা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা । তাই এই সিদ্ধান্ত সকল তৃণমূল কর্মীর মেনে নেওয়া উচিত । " যারা পৌর বোর্ডের সদস্য হয়েছেন তাঁদের ভেবে চিন্তেই মাননীয়া দায়িত্ব দিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন এবং তাঁরা ভালো কাজ করবেন বলেও আশা রাখেন । অন্যদিকে, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, " যাদের প্রশাসক বোর্ডে বসানো হয়েছে সেই সমস্ত মানুষ গণ্যমান্য ও ভালো মানুষ । অনেকের মতামত না নিয়েই, তাঁদের কাছে না শুনেই, এভাবেই শহরের ভালো মানুষগুলোকে রাখা হয়েছে বোর্ডে । তৃণমূলের পাপের ভাগীদার বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এই ভালো মানুষগুলিকে ৷ "