বকখালি, 26 মে : যশ এখনও আছড়ে পড়েনি ৷ তবে সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টির জেরে ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে উপকূলবর্তী মানুষ । ঝড়ের পাশাপাশি উত্তাল নদী ও সমুদ্রের জলস্ফীতির জেরে এক বছর আগের আমফানের স্মৃতি যেন ফিরে এল এক লহমায় ৷ মঙ্গলবার সরকারি উদ্যোগে একের পর এক এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে পার্শ্ববর্তী ফ্লাড সেন্টার, হাইস্কুল এবং হোটেল ও লজে । এখানে নিরাপদ আশ্রয়ে এলেও পিছু ছাড়ছে না ভয় ।
মঙ্গলবার নামখানার একটি প্রাইমারি স্কুলে এসে রয়েছেন সমুদ্র উপকূলের লক্ষ্মীপুরের বেশ কিছু বাসিন্দা । তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই আমফানের ধাক্কা কাটিয়ে সবেমাত্র উঠে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ এবার যশ-এর তাণ্ডবে তাদের হয়তো উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরতে হবে, জানালেন সুজিত, হরিপদ, ভগবতী ও চম্পাদের মতো শ'য়ে শ'য়ে মানুষ।
বছর দেড়েকের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে একদৃষ্টে জানালার দিকে তাকিয়েছিলেন ভগবতী দাস (35) । স্থানীয় লক্ষ্মীপুরে বাঁধের ধারেই মাটির ছোট্ট বাড়ি রয়েছে তাঁদের । তাঁর স্বামী পেশায় মৎস্যজীবী। গত বছর আমফানের সময় পুরো বাড়িটাই ভেঙে পড়েছিল । অনেক কষ্টে এবার ছোট্ট চার দেওয়ালের ঘরের উপর অ্যাসবেসটাসও লাগিয়েছিলেন তাঁরা । কিন্তু যশ আছড়ে পড়লে কি সেই ঘর টিকে থাকবে ? সারাক্ষণ এই কথা ভেবে চলেছেন ভগবতী । তিনি বলেন, 'পরিবারে অভাব নিত্যসঙ্গী । অনেক কষ্ট করে আমফানের পর ঘর তৈরি করেছিলাম । এবারের ঝড়ে কী হবে জানি না । ঘর ভেঙে পড়লে এবার পথে বসতে হবে । ছোট্ট দুধের শিশুকে কী খাওয়াব জানি না ।"
পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন বছর ষাটের হরিপদ মণ্ডল । গ্রাম সম্পর্কে বউমা ভগবতীকে শান্ত থাকার জন্য বারংবার বোঝাচ্ছিলেন তিনি । তিনি বলেন, "মাত্র কয়েক বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছি । ভেবেছিলাম যা ফসল উঠবে, তা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করব । কিন্তু ঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করে দিলে না খেতে পেয়ে মরা ছাড়া কোনও গতি থাকবে না । তার উপর ছোট্ট দু'কামরার মাটির ঘর আমার । ঝড় এলে হয়তো শেষ আশ্রয়টুকুও হারাব ।"
এলাকার আরেক বাসিন্দা বছর কুড়ির সুজিত মাইতি ফ্লাড সেন্টারের বারান্দায় পায়চারি করছিলেন । চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ৷ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। গতবার আমফানেকাঁচা ঘর ভেঙে পড়তে দেখেছেন তিনি । তাই অন্যদের মতো তিনিও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন । তাঁর কথায়, "জানি না কী হবে । পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে (আশ্রয় কেন্দ্রে) উঠে এসেছি । গত বছর ঘর জলমগ্ন হয়ে পড়ায় প্রচুর নথি নষ্ট হয়েছিল । এবারে সব নথি সঙ্গে নিয়ে এসেছি। জানি না ঝড় কতটা ভয়ানক হতে চলেছে ।"