ভাঙড়, 21 জুন: মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অশান্তি এবং তার জেরে ভাঙড়ে গত 15 জুন তৃণমূল নেতা রাজু নস্কর খুনের ঘটনায় আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী-সহ মোট 68 জন আইএসএফ সমর্থকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করল কাশীপুর থানার পুলিশ ৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 (খুন) ধারা ছাড়াও 34 নম্বর ধারায় সংগঠিত অপরাধ এবং অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বুধবার নওশাদ জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে যারা অশান্তি পাকিয়েছিল তারাই আবার অভিযোগ করছে।
কিছুদিন আগে এই কাশীপুর থানাতেই তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এবং তাঁর ছেলে হাকিবুল ইসলাম-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। গত 15 জুন দক্ষিণ 24 পরগনার বারুইপুর জেলা পুলিশের অন্তর্গত ভাঙড় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অশান্তির সৃষ্টি হয়। তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মুহুর্মুহু বোমা, গুলিতে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভাঙড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ এই ঘটনায় তৃণমূলের দু'জন এবং আইএসএফের একজন মোট তিনজন রাজনৈতিক কর্মী সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।
এই ঘটনায় রাজ্য-রাজনীতিত তোলপাড় হয়ে যায়। কার্যত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি সাউথ বেঙ্গল সিদ্ধিনাথ গুপ্তা। পরপর তিনদিন অশান্ত হয়ে ওঠে ভাঙড় এলাকা। এরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ এমনকী রাজ্যপাল ভাঙড়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় যত্রতত্র তাজা বোমা পড়ে থেকতে দেখা যায় ৷ পরে পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এরিয়া ডমিনেশনের কাজে গেলে উন্মত্ত রাজনৈতিক কর্মী সমর্থকদের রোষের মুখে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঘটনার পর এবার ভাঙড়ের বিধায়ক-সহ একাধিক আইএসএফ কর্মীর বিরুদ্ধেই খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ ৷
আরও পড়ুন: ভোটে প্রাথমিক শিক্ষক-পার্শ্বশিক্ষকদের ফোর্থ পোলিং অফিসার হিসেবে ব্যবহারে 'না' কমিশনের
এদিন নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, "আমাদের কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কীভাবে এলাকায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাস চালিয়েছিল সেটা সবাই দেখেছে। নতুন করে আর বলার কিছু নেই। নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে বিডিও অফিসগুলি দখল নিয়ে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। মনোনয়নপত্র জমা দিতেই দিচ্ছিল না ৷ তারাই আবার অভিযোগ করছে। তবে ভারতীয় সংবিধান ও আইনের উপর আমার ভরসা আছে।"
আরও পড়ুন: বিরোধী শূন্য ব্লক চেয়ে সোশাল মিডিয়ায় উদয়নের বিতর্কিত পোস্ট
অন্যদিকে, ভাঙড়ের ঘটনার পর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় ৷ যেখানে দেখা যায়, এক ব্যক্তি স্বীকার করে যে, তাঁকে টাকার বিনিময়ে শওকত মোল্লা গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও শওকত মোল্লা জানান, রাজনৈতিকভাবে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বরং ঘটনার দিন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলামের গাড়িতেও উদ্ধার হয় তাজা বোমা। ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে কীভাবে পুলিশের নাকের ডগায় এত বড় আইন-শৃঙ্খলার অবনতির ঘটনা ঘটল এবং এই বিষয়ে কেন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারল না পুলিশ?