মৈপীঠ, 16 মে: গভীর জঙ্গল থেকে বাড়ি ফিরতে পারলে বনবিবির মন্দিরে যায় মানুষ ৷ মৈপীঠের জঙ্গলে দেবীর উদ্দেশ্যে মোরগ ছেড়ে মানত পূরণ করে তারা ৷ এমনটাই চলে আসছে বিগত ছ'দশকেরও বেশি সময় ধরে ৷ দেবীর মন্দিরও সাধারণ কোনও জায়গায় নয় ৷ একবারে জঙ্গলের মধ্যে ৷
গভীর জঙ্গলে দরমার বেড়া দেওয়া একটা সাদামাটা মন্দির ৷ এখানেই পূজিত হন জঙ্গলের দেবী বনবিবি ৷ প্রতি বছর বৈশাখের শেষ মঙ্গলবার বিশেষ পুজোর আয়োজন হয় ৷ পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা বসে ৷ মৈপীঠের এই মেলাকে স্থানীয় মানুষজন বলেন জঙ্গল মেলা ৷ এই পুজোর রীতি মেনে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা পুজো দিয়ে বনবিবির জঙ্গলে মোরগ ছেড়ে দেন ৷ মৈপীঠে শনিবারের বাজার থেকে বেশি কিছুটা এগিয়ে মাকড়ি নদী পেরিয়ে পৌঁছতে হয় ঘন ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে ৷ তার ভিতরে বনবিবির এই মন্দির ৷ স্থানীয়দের মতে, প্রায় 64 বছর আগে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল ৷ এমনিতে বনবিবির পুজো হয় মাঘ মাসে ৷
সুন্দরবন এলাকায় মানুষের জীবন জঙ্গল-নির্ভর ৷ বছরের ছ'ঋতু তো বটেই বিশেষত বর্ষার মুখে জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরতে যায় স্থানীয়রা ৷ মধুর সন্ধানও পাওয়া যায় এই ম্যানগ্রোভের গভীরে ৷ এদিকে এই বনেই যে বাঘের বাস ৷ তাও প্রাণের ভয়কে তুচ্ছ করে মানুষ বেরিয়ে পড়ে জঙ্গলের উদ্দেশ্যে ৷ ভরসা জঙ্গলের দেবী বনবিবি ৷ মানুষের বিশ্বাস, দেবী বনবিবি নিশ্চয় তাদের রক্ষা করবেন ৷ বেঁচে ফিরবেন জঙ্গলে যাওয়া মানুষটা ৷ তাই জঙ্গলে যাওয়ার আগে পুজোর আয়োজন করা হয় ৷ বনবিবিকে পুজো দিয়ে মানত রাখেন অনেকে ৷ জঙ্গল থেকে ফিরলে দেবীর উদ্দেশ্যে কথামতো মোরগ ছেড়ে দিতে হয় জঙ্গলে ৷
এবারও ধুমধাম করে পুজো ও মেলার আয়োজন হয়েছে ৷ মন্দিরকে ঘিরে ভিড় করেছেন কাতারে কাতারে মানুষ ৷ মাকড়ি নদী পেরনোর নৌকাগুলিতে তিল ধারণের জায়গা নেই ৷ এই এলাকায় নদী পারাপারের জন্য সে ভাবে কোনও ঘাটের ব্যবস্থা নেই ৷ ফলে কাদার উপর দিয়ে হেঁটে, হাঁটু বা কোমরসমান জলে নেমে নৌকায় উঠতে দেখা গেল অনেককেই ৷ ভিড় সামলাতে এ দিন বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল ৷ প্রস্তুত বিপর্যয় মোকাবিলা দল ৷
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বনবিবির উৎসব, বসেছে রামরুদ্রপুরের প্রাচীন বনবিবির মেলা