ভাঙড় (দক্ষিণ 24 পরগনা), 16 জুন: মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষদিনে অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ের দৃশ্য দেখে শিউড়ে উঠেছিল সারা বাংলার মানুষ ৷ 24 ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই সেই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক শওকত মোল্লার সরাসরি যোগ থাকার অভিযোগ উঠেছে ৷ শুক্রবার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে ৷ সেই ভিডিয়োয় এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, তাঁকে ও তাঁর মতো আরও বেশ কয়েকজনকে গোলমাল পাকানোর জন্য টাকা দিয়ে ভাঙড়ে নিয়ে আসেন শওকত মোল্লা ৷ এই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই হইচই ফেলেছে রাজ্য রাজনীতিতে ৷ ইটিভি ভারত এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ৷ অন্যদিকে শওকত মোল্লা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৷
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষদিন ৷ ওই দিন দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড়-2 ব্লকের কার্যালয়ের কাছে ব্যাপক গোলমাল হয় ৷ বোমাবাজি হয় ৷ গুলি চলে ৷ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় ৷ গুলিতে তিনজন নিহত হন ৷ তাঁদের মধ্যে দু’জন তৃণমূলের ৷ আর একজন আইএসএফের ৷ গুলিতে জখম হয়ে আরও কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গিয়েছে ৷
এই নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে ৷ তৃণমূলের তরফে পুরো ঘটনার দায় আইএসএফের উপর চাপানো হয়েছে ৷ অন্যদিকে আইএসএফ অশান্তির জন্য তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তুলেছে ৷ আর এই অভিযোগ, পালটা অভিযোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে শুক্রবার ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়ো ৷
আরও পড়ুন: ভাঙড় থেকে সন্ত্রাসমুক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রাজ্যপালের
সেখানে দেখা যাচ্ছে যে এক ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে ৷ তিনি ক্যামেরার সামনে দাবি করেন, তাঁর নাম গোবিন্দ নস্কর৷ তাঁর বাড়ি হাটগাছা ৷ তাঁকে 5 হাজার টাকা দিয়ে শওকত মোল্লা বৃহস্পতিবার এনেছিলেন ৷ তাঁর কাছে বন্দুক ও গুলি দেওয়া হয় ৷ তাঁদের আইএসএফ কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ গোবিন্দর আরও দাবি, তিনি ভিড়ের মধ্যে গুলি চালিয়েছেন ৷ কারও শরীরে লেগেছে কি না, তিনি জানেন না ৷
একই সঙ্গে তিনি জানান, একটি গাড়িতে তাঁদের আনা হয় ৷ সবমিলিয়ে জনা তিরিশেক লোক তাঁর আসেন ৷ প্রত্যেককেই অর্থের বিনিময়ে গুলি চালানোর জন্য নিয়ে আসা হয় ৷ গুলি চালানোর পর পালানোর সময় চাষের খেতে তিনি বন্দুক ফেলেও দেন দাবি করেছেন গোবিন্দ ৷
তবে তাঁকে কারা ধরল, কারা তাঁকে গাছে বেঁধে রেখে এই ভিডিয়ো তৈরি করল, সেই প্রশ্নের উত্তর অধরা ৷ ফলে সত্যিই ওই ব্যক্তি তৃণমূল বিধায়কের কথায় এই কাজ করেছেন কি না, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় ৷ এরই মধ্যে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তৃণমূলের শওকত মোল্লা বলেন, ‘‘প্রথমত ওকে চিনি না ৷ হাটগাছায় আমি কখনও যাইনি ৷ যেভাবে বেঁধে রেখে মারধর করে বলানো হচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিকল্পিত করে এরা আমাদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা এর সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই ৷ ইতিমধ্যে আমাদের দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে শান্তিপূর্ণ ভোট চাই ৷ আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে ৷ ভোট নিশ্চিতভাবে শান্তিপূর্ণ হবে ৷ ভোট শান্তিপূর্ণ হলে তৃণমূল কংগ্রেস সারা বাংলায় জিতবে ৷’’
আরও পড়ুন: অশান্ত ভাঙড়ে রাজ্যপালের কনভয় আটকে বিক্ষোভ আইএসএফ কর্মীদের