মগরাহাট, 9 এপ্রিল: মগরাহাটের মাগুরপুকুর এলাকায় শনিবার সকালে এক সিভিক ভলান্টিয়র-সহ দু'জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে খুনের ঘটনায় ফের রাজ্যের আইনৃশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল ৷ এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসছে জানে আলম মোল্লা নামে এক ব্যক্তির (Jane Alam Mollah accused of Magrahat double murder case) ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জানে আলম দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারণামূলক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত । 10 বছর আগে এলাকার বিভিন্ন মানুষকে চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকার জালিয়াতি করে সে ৷ একটি বেসরকারী লগ্নি সংস্থার মালিকও সে । এলাকায় এই অভিযুক্তের যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে । এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে তার ৷
সম্প্রতি পশুর হাড় থেকে জৈব সার তৈরির ব্যবসা শুরু করেছিল জানে আলম । স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বিভিন্ন পণ্যের ভুয়ো সংস্থা রয়েছে তার ৷ ভুয়ো এয়ারলাইন্স সংস্থার নাম করেও সে টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ ৷ জানে আলমের ভাই জাহাঙ্গীর আলাম মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান । ভাইয়ের রাজনৈতিক যোগ থাকাতেই জানে আলমের এই দুষ্কর্মের এই রমরমা বলে অনেকে মনে করেন ৷ মাগুরপুকুর এলাকায় তার যে গোডাউনটি রয়েছে সেটি আসলে তার বাগান বাড়ি । যা আবার আলম গ্রাম নামে এলাকায় পরিচিত ৷ এছাড়াও দক্ষিণ 24 পরগনার এই অভিযুক্তের একাধিক জায়গায় বেশকিছু ফ্ল্যাট ও বাগানবাড়ি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে ।
আরও পড়ুন : সিভিক ভলান্টিয়ার ও তাঁর বন্ধুকে নৃশংস খুন, মগরাহাটে ধুন্ধুমার
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে ভাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হওয়ার কারণেই কি এলাকায় এতো দাপট জানে আলমের ? নইলে অর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পরেও সে এত বেপরোয়া কী করে ? শনিবারের ঘটনার পর থেকে স্থানীয় মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তালা ঝুলছে । নেই জানে আলামের ভাই জাহাঙ্গীর আলাম । জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি ।
জানা গিয়েছে, ইমারতি বিভিন্ন জিনিস সরবরাহ করাকে কেন্দ্র এদিন অশান্তির সূত্রপাত ৷ জানে আলম মোল্লা নামে ওই ব্যক্তি নাকি কম দামে ইমারতি সামগ্রি সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে গ্রামের অনেকের থেকে আগাম টাকা নিয়েছিল ৷ কিন্তু ওই টাকার বিনিময় কিছুতেই আর সামগ্রী দিতে রাজি হচ্ছিল না সে ৷ শুক্রবার রাতে এই নিয়ে এলাকায় একদফা অশান্তি হয় বলে খবর ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জানে আলাম শনিবার আমড়াতলা হাড়ের কারখানায় আসতে বলেছিল ওই মৃত সিভিক ভলান্টিয়ার বরুণ চক্রবর্তীকে। সেখানেই তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে । কিন্তু সকালে বরুণ ও তাঁর বন্ধু মলয় মাকাল কারখানায় যাওয়ার পরেও টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়নি জানে আলম ৷ শুরু হয় দুপক্ষের তুমুল বচসা ৷ অভিযোগ, এরপরেই গুলি করে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দু'জনকে খুন করা হয় ৷
পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত জানে আলমের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে । পাশাপাশি, কারখানার মধ্যে এদিন আর কেউ ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখছে ডায়মন্ডহারবার পুলিশ । খবর পেয়ে এদিন ঘটনাস্থলে যান মগরাহাট পূর্ব বিধানসভার বিধায়ক নমিতা সাহা । মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি । নমিতা সাহা বলেন, "অভিযুক্ত জানে আলাম এর ফাঁসি চাই । লুকিয়ে কোনও লাভ নেই । পুলিশের হাতে ধরা পড়তেই হবে অভিযুক্তকে ।"