গঙ্গাসাগর, 8 ডিসেম্বর: গঙ্গার কড়াল গ্রাসে প্রাচীন কপিলমুনির মন্দির । সমুদ্র একটু একটু করে এগিয়ে আসছে । অথচ এই গঙ্গাসাগরমেলাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ নদী ভাঙনের গ্রাসে মেলা প্রাঙ্গণও (Kapil Muni Temple in Danger Due to Ganges Erosion)৷ গঙ্গাসাগরের ভাঙন রোধে পরিকল্পনা শুরু করেছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বর্তমান কপিলমুনির মন্দিরের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে ৷ যদিও দক্ষিণ 24 পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা জানান, আপাতত কপিলমুনি মন্দিরের সামনে 2 নম্বর রাস্তা থেকে 4 নম্বর রাস্তা পর্যন্ত কংক্রিটের কাজ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মন্দিরের সামনে সমুদ্রতটের পাড় ভাঙার সমস্যা দীর্ঘদিনের। ভাঙনের জেরে গঙ্গাসাগর মেলার মাঠের আয়তন ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে । প্রতিবছর গঙ্গাসাগরে 100-200 ফুট এলাকা সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতট বরাবর 1 নম্বর রাস্তা থেকে 5 নম্বর রাস্তা পর্যন্ত প্রায় 1 কিলোমিটার এলাকায় সারিবদ্ধ ভাবে নারকেল গাছ পুঁতেছিল প্রশাসন । সম্প্রতি ভাঙনের কবলে পড়ে নারকেল গাছগুলিও সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছে । এই মন্দরি এলাকায় ছোট ছোট ব্যবসায়ী আছেন ৷ যাদের রুটি- রুজি জোগাড় হয় মন্দিরে আসা পুণ্যার্থীদের কেনা বেচাতেই ৷ এইরকমই এক ব্যবসায়ী অর্পিতা তামাং বলেন, "বর্তমানে মেলাপ্রাঙ্গন নদী গ্রাসে অনেকটাই চলে গিয়েছে ৷ ফলে সাগর মেলা প্রাঙ্গনও ছোট হয়ে যাচ্ছে ৷ এইভাবে চলতে থাকলে আগামি দিনে দোকান তুলে দিতে হবে ৷"
আরও পড়ুন: গত বছরের আতঙ্ক উস্কে ফের শুরু গঙ্গা ভাঙন, সামসেরগঞ্জে তলিয়ে গেল বাড়ি
রাজ্য সরকার ভাঙন রোধের জন্য দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে পরিকল্পনা করছে । প্রশাসন সূত্রের খবর, 2019 সালে ভাঙন ঠেকাতে গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ এবং রাজ্যের পৌরদফতর যৌথভাবে কাজ শুরু করে । ম্যাকিন্টোজ বার্ন সংস্থাকে ক্ষয় আটকানোর পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে বলা হয় । বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে পরামর্শের পরে চেন্নাই আইআইটির দ্বারস্থ হয় রাজ্য । গঙ্গাসাগরের ভাঙন সমস্যা কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তার পরিকল্পনা করে চেন্নাই আইআইটি । কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষও সংশ্লিষ্ট ভাঙনপ্রবণ এলাকার সমীক্ষায় সহযোগিতা করে । জলের তলার মাটি কীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, সেই রিপোর্টও প্রস্তুত করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য প্রায় 141কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ঠিক হয়, এর মধ্যে 67 কোটি টাকা দেবে রাজ্য সরকার, বাকিটা দেবে কেন্দ্র । প্রকল্পের কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে । যদিও সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।
এই প্রসঙ্গেই সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, "ভাঙন রুখতে পরিকল্পনা তৈরি । প্রশাসনিক অনুমোদন-সহ সবই প্রস্তুত । কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সিআরজেডের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না । কেন্দ্রীয় সরকারও এই প্রকল্পের জন্য টাকা দিতে চাইছে না । তাই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। রাজ্য সরকারের পক্ষে একা 141 কোটি টাকা দিয়ে এই কাজ শুরু করা সম্ভব নয়, যদি না কেন্দ্র সাহায্য করে।”