জয়নগর, 26 মে: খাঁচা থেকে বাবুদের পাখি ওড়ানোর দিন গিয়েছে বহু আগেই ৷ তারপর এসেছে অন্দরমহলে মহিলাদের কথা বলার সঙ্গী কাকাতুয়া-টিয়া-ময়না ৷ তাও এখন অতীত ৷ বন্যেরা বনে সুন্দর ৷ আর তাই পাখিরা মিলতে পেড়েছে মুক্ত বিহঙ্গ ৷ তবে সেই খাঁচা যাঁরা তৈরি করতেন, আজ তাঁদের পেটে পড়েছে টান ৷ খাঁচা আর বিক্রি হয় না, ফলে নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে সেই সব পরিবারের ৷
দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগর থানা এলাকার দক্ষিণ বারাসাতের বৃত্তিপাড়া গ্রামের কয়েকটি পরিবার বংশপরম্পরায় পাখির খাঁচা তৈরি করে নিজেদের সংসার চালিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন গৃহস্থের বাড়িতে পাখি পোষার রেওয়াজ বহুদিনের। প্রায় প্রতি বাড়িতেই দেখা যেত খাঁচাই বদ্রি, টিয়া, লাভ বার্ড, ফিঞ্চ, ময়না-সহ নানা ধরনের পাখি। এই পাখি পুষতে গেলে বাঁশের খাঁচার প্রয়োজন। এই বাঁশের খাঁচা বানিয়ে তা বাজারে যোগান দিয়ে পরিবারগুলো জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল ৷
কিন্তু সরকারি নির্দেশে গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্য কোনও পশু-পাখি আর খাঁচায় বন্দি করে রাখা যাবে না। তাদেরকে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে দিতে হবে। তাছাড়া ব্যস্ত জীবনে পোষ্য সামলানোর ঝক্কি এখন আর কেউ নিতে চান না ৷ স্বভাবতই গৃহস্থের বাড়িতে পাখি পুষতে এখন আর দেখা যায় না। যার জেরে চরম আর্থিক সংকটে দিন গুনছেন খাঁচা তৈরি কারিগরেরা।
এই প্রসঙ্গে খাঁচা কারিগর গোবিন্দ হালদার বলেন, "বাপ-ঠাকুরদার সময় থেকে খাঁচা বানানোর কাজ করে আসছি ৷ প্রায় 40 বছর হতে চলল ৷ কিন্তু এখন এই কাজে আর লাভের মুখ দেখা যায় না ৷ খাঁচার বিক্রি নেই ৷ সবসময় কাজও থাকে না ৷ বছরের এক-দু'মাস কাজ থাকে কখনও কখনও ৷ ফলে এখন আর্থিক সংকট নিয়েই সংসার চালাতে হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন: সঙ্কটে নদিয়ার ঝুড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত একাধিক পরিবার
তিনি আরও বলেছেন, বাঁশের তৈরি খাঁচার দিকে সেভাবে আর মানুষ ঘুরেও তাকাচ্ছেন না ৷ বর্তমানে সেই জায়গায় নতুন ধরনের খাঁচা বাজার দখল করেছে ৷ মূল্যবৃদ্ধির কারণে লাভের অংক অনেক কমে যাওয়ায় নতুন প্রজন্মও এই কাজে উৎসাহ হারিয়েছেন। তাই এই গ্রামীণ কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাটাই এখন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।