বারুইপুর, 23 নভেম্বর: ছেলেকে নিজে হাতে মার্শাল আর্ট শিখিয়েছিলেন উজ্জ্বল চক্রবর্তী । উদ্দেশ্য ছিল, ছেলে যাতে আত্মরক্ষা করতে পারে । গত 12 নভেম্বর সেই ছেলের হাতেই খুন হয়েছেন প্রাক্তন নৌসেনা কর্মী । টাকা নিয়ে বচসা হওয়ায় স্ত্রী, ছেলে তাঁকে খুন করার পর দেহ 6টি টুকরো করে । ঘটনায় এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি নৌসেনা কর্মীর কাটা হাত । ঘটনায় একটি করাত উদ্ধার করেছে তদন্তকারীরা । মৃতের ছেলে জয় চক্রবর্তী পলিটেকনিকের ছুতোর শিল্পের (পড়ুন কাঠমিস্ত্রি) ছাত্র । সেখান থেকেই সে করাত চালানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছে । ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা।
প্রতিবেশী তুষার সরকার বলেন, “আমরা তাঁকে (উজ্জ্বল চক্রবর্তী) ছেলেকে প্রশিক্ষণ দিতে দেখেছি । ছোটবেলা থেকেই জয় (উজ্জ্বলের ছেলে) ওর বন্ধুদের সাথে মারামারি করত । আশ্চর্যের বিষয়, বাবা-মা দু'জনেই ওকে প্রশ্রয় দিত । একবারও ছেলেকে সতর্ক করেনি, শাস্তিও দেয়নি । নিজের জীবন দিয়ে মূল্য চোকাতে হয়েছে ।" আরেক প্রতিবেশী বলেন, “প্রতিবেশীদের সঙ্গে ওদের পরিবারের খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না । বাবা-ছেলের মধ্যে মাঝেমাঝেই টাকা নিয়ে ঝগড়া হত । কিন্তু জয় যে বাবাকে খুন করবে, এটা বিশ্বাস করাটা খুব কঠিন । হয়তো রাগের মাথায় এই কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে ।"
যদিও পুলিশ জানিয়েছে, খুন এবং খুনের পর সময় নিয়ে দেহ 6 টুকরো করা দীর্ঘ পরিকল্পনার ফল । সাময়িক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে এই কাজ করা অবিশ্বাস্য । আমরা মা ও ছেলে, দু'জনের কল ডিটেলস চেক করছি । জয় চক্রবর্তীর কিছু বন্ধুর উপরও করা নজর রাখা হচ্ছে । একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার বলেন, “খুনটি যেভাবে করা হয়েছে তা দীর্ঘ পরিকল্পনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মৃতদেহ কাটার জন্য কাঠের করাত ব্যবহার করা একটু অদ্ভুত । আমরা খুনের মোটিভ বোঝার জন্য মনোবিজ্ঞানীদের সাহায্য নেওয়ার কথাও ভাবছি ।”
আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার জেরে বাবার প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা, কীভাবে দেহ কাটা যায় অনলাইনে শেখেন ছেলে
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের পর জয় ও তার মা শ্যামলী মাত্র দু-তিনজনকে ফোন করেন । এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, “নিখোঁজ ডায়েরি করতে থানায় আসার পাশাপাশি শ্যামলী অর্থসাহায্য চেয়ে ভাইকে ফোন করেছিলেন । অন্যদিকে, প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলা জয় সেদিন শুধু দুই বন্ধুকে ফোন করেছিল ।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, 3000 টাকা নিয়ে বচসা শুরু হয় । তারপরেই প্রাক্তন নৌসেনা কর্মীকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় । ছেলে সাইকেলে করে 6টি ট্রিপে প্লাস্টিকের মধ্যে মোড়ানো অঙ্গগুলি খাসমল্লিক ও দেহিমেদান মাল্লা এলাকায় প্রায় 500 মিটার দূরে ফেলে দেয় ।