ETV Bharat / state

Durga Puja 2022: 157 বছরেও উজ্জ্বল বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

ডায়মন্ড হারবারের বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো এ বার 157 বছরে পড়ল ৷ 1866 সালে এই পুজো শুরু করেছিলেন জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডল (Bardron zamindar house Durga Puja)৷

Bardron zamindar house organising Durga Puja for 157 years
157 বছরেও উজ্জ্বল বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো
author img

By

Published : Sep 21, 2022, 10:21 PM IST

ডায়মন্ড হারবার, 21 সেপ্টেম্বর: বিশুদ্ধ নন্দীকেশ্বর রীতি মেনে পুজো হয় ডায়মন্ড হারবারের বারদ্রোণ গ্রামের দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2022)৷ জমিদারির সময় এই পুজোয় একাধিক নিয়মরীতি ছিল ৷ যা বর্তমান পরিস্থিতি এবং আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে দেবীর আরাধনায় খামতি রাখেন না বর্তমান বংশধরেরা (South 24 Parganas)৷

1866 সালে ডায়মন্ড হারবারের তৎকালীন হাজিপুরের বারদ্রোণ গ্রামের দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডল ৷ এ বছর সেই পুজো 157 বছরে পড়ল ৷ আগের মতো জাঁকজমক না হলেও, নিয়ম মেনে দেবীর আরাধনা করেন মণ্ডল বাড়ির সদস্যরা ৷ বিশুদ্ধ নন্দীকেশ্বর রীতি মেনে পুজো হয় দেবী দুর্গার ৷ আগে এই পুজোয় নবমীতে পাঁঠা বলি এবং অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় গুলি ছোড়ার রীতি ছিল ৷ জমিদারি প্রথার বিলুপ্তির সঙ্গেই সেই সব রীতিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷

Bardron zamindar house organising Durga Puja for 157 years
বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

প্রসঙ্গত, তৎকালীন বাংলার নবাব ছিলেন হুসেন শাহ ৷ অবিভক্ত বাংলার নবাব থাকাকালীন লবণ ও তাঁতের ব্যবসার রমরমা ছিল ৷ তৎকালীন হাজিপুরের (বর্তমান ডায়মন্ড হারবার) বারদ্রোণ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন অযোধ্যা রাম মণ্ডল ৷ তিনি ওই লবণ ও তাঁতের ব্যবসা করে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হন ৷ ব্যবসার টাকায় বারদ্রোণ, মন্দিরবাজার, ঘটকপুর, হটুগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, মথুরাপুর, নামখানা-সহ একাধিক এলাকায় জমিদারি শুরু করেন ৷ সেই অযোধ্যা রামের বংশধর ছিলেন জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডল ৷ তিনিই 1866 সালে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন ৷

বারদ্রোণের জমিদার বাড়িতে সুবিশাল দালান বাড়ি তৈরি করেন তিনি ৷ অতীতে মণ্ডলদের জমিদার বাড়িতে পুজোর 4 দিন গ্রামবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য কবি গানের আসর বসত ৷ মহাসপ্তমীতে এলাকায় ব্রাহ্মণ ভোজন ও মহানবমীতে কুমারী পুজোর চল ছিল ৷ কুমারী পুজো হলেও, বন্ধ হয়ে গিয়েছে ব্রাহ্মণ ভোজনের রীতি ৷ জমিদারি থাকাকালীন মহানবমীতে পাঁঠা বলির রেওয়াজ ছিল ৷ আর প্রতিদিনই গ্রামবাসীদের ভোজনের ব্যবস্থা করা হত জমিদার বাড়িতে ৷ জমিদার বাড়ির সামনে সুবিশাল সিংহদুয়ার রয়েছে ৷ জমিদারি প্রথায় সেই সিংহদুয়ারে দিনরাত পাহারায় থাকতেন দু’জন দারোয়ান ৷ জানা যায়, সেই সময় বন্দুকের গুলির আওয়াজে শুরু হত সন্ধিপুজো ৷ বর্তমানে সেই প্রথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷

বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

আরও পড়ুন: অন্য দুর্গা ! ছেলের মঙ্গলে প্রতিমা গড়ছেন নবতিপর কমলা

কালের নিয়মে জমিদারি প্রথার অবসানের সঙ্গে সিংহদুয়ারে দারোয়ানও আজ নেই ৷ মণ্ডলদের জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় জন্মাষ্টমীর দিন থেকে ৷ ওইদিন গঙ্গা মাটি দিয়ে দেবীর কাঠামোর পুজো হয় ৷ মহালয়ার আগে কাঠামোতে খড় বাঁধা, মাটি দেওয়া-সহ সব কাজ শেষ করে ফেলা হয় ৷ মহালয়ার দিন দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয় ৷ নিয়ম মেনে এই প্রথা চলে আসছে ৷ এই মণ্ডল বাড়ির পুজোয় বংশ-পরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করে আসছেন মৃৎ শিল্পীরা ৷ ঢাকিরাও বংশ পরম্পরায় ঢাক বাজান এই পুজোতে ৷ পুরোহিতের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চলে আসছে ৷

পরিবারের সদস্য নচিকেতা মণ্ডল জানান, ‘‘জমিদারি প্রথার ধীরে ধীরে অবসান ঘটার পর পঞ্চাশের দশক থেকে বন্ধ হয়ে যায় পাঁঠা বলি ৷ এখন শুধু নিয়মরক্ষার পুজো হয় ৷ এই পুজোর বিশেষত্ব হচ্ছে, বিশুদ্ধ নন্দীকেশ্বর মতে এই পুজো করা হয় ৷ সপ্তমীর দিন যে হোম-অগ্নি জ্বলে, তা নেভানো হয় দশমীর দিন ৷’’

কাজের সূত্রে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ভিনরাজ্যে এবং বিদেশে থাকেন ৷ তবে দুর্গা পুজোর দিনগুলিতে পরিবারের সবাই ডায়মন্ড হারবারের বারদ্রোণ গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হন ৷

ডায়মন্ড হারবার, 21 সেপ্টেম্বর: বিশুদ্ধ নন্দীকেশ্বর রীতি মেনে পুজো হয় ডায়মন্ড হারবারের বারদ্রোণ গ্রামের দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2022)৷ জমিদারির সময় এই পুজোয় একাধিক নিয়মরীতি ছিল ৷ যা বর্তমান পরিস্থিতি এবং আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে দেবীর আরাধনায় খামতি রাখেন না বর্তমান বংশধরেরা (South 24 Parganas)৷

1866 সালে ডায়মন্ড হারবারের তৎকালীন হাজিপুরের বারদ্রোণ গ্রামের দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডল ৷ এ বছর সেই পুজো 157 বছরে পড়ল ৷ আগের মতো জাঁকজমক না হলেও, নিয়ম মেনে দেবীর আরাধনা করেন মণ্ডল বাড়ির সদস্যরা ৷ বিশুদ্ধ নন্দীকেশ্বর রীতি মেনে পুজো হয় দেবী দুর্গার ৷ আগে এই পুজোয় নবমীতে পাঁঠা বলি এবং অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় গুলি ছোড়ার রীতি ছিল ৷ জমিদারি প্রথার বিলুপ্তির সঙ্গেই সেই সব রীতিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷

Bardron zamindar house organising Durga Puja for 157 years
বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

প্রসঙ্গত, তৎকালীন বাংলার নবাব ছিলেন হুসেন শাহ ৷ অবিভক্ত বাংলার নবাব থাকাকালীন লবণ ও তাঁতের ব্যবসার রমরমা ছিল ৷ তৎকালীন হাজিপুরের (বর্তমান ডায়মন্ড হারবার) বারদ্রোণ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন অযোধ্যা রাম মণ্ডল ৷ তিনি ওই লবণ ও তাঁতের ব্যবসা করে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হন ৷ ব্যবসার টাকায় বারদ্রোণ, মন্দিরবাজার, ঘটকপুর, হটুগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, মথুরাপুর, নামখানা-সহ একাধিক এলাকায় জমিদারি শুরু করেন ৷ সেই অযোধ্যা রামের বংশধর ছিলেন জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডল ৷ তিনিই 1866 সালে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন ৷

বারদ্রোণের জমিদার বাড়িতে সুবিশাল দালান বাড়ি তৈরি করেন তিনি ৷ অতীতে মণ্ডলদের জমিদার বাড়িতে পুজোর 4 দিন গ্রামবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য কবি গানের আসর বসত ৷ মহাসপ্তমীতে এলাকায় ব্রাহ্মণ ভোজন ও মহানবমীতে কুমারী পুজোর চল ছিল ৷ কুমারী পুজো হলেও, বন্ধ হয়ে গিয়েছে ব্রাহ্মণ ভোজনের রীতি ৷ জমিদারি থাকাকালীন মহানবমীতে পাঁঠা বলির রেওয়াজ ছিল ৷ আর প্রতিদিনই গ্রামবাসীদের ভোজনের ব্যবস্থা করা হত জমিদার বাড়িতে ৷ জমিদার বাড়ির সামনে সুবিশাল সিংহদুয়ার রয়েছে ৷ জমিদারি প্রথায় সেই সিংহদুয়ারে দিনরাত পাহারায় থাকতেন দু’জন দারোয়ান ৷ জানা যায়, সেই সময় বন্দুকের গুলির আওয়াজে শুরু হত সন্ধিপুজো ৷ বর্তমানে সেই প্রথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷

বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

আরও পড়ুন: অন্য দুর্গা ! ছেলের মঙ্গলে প্রতিমা গড়ছেন নবতিপর কমলা

কালের নিয়মে জমিদারি প্রথার অবসানের সঙ্গে সিংহদুয়ারে দারোয়ানও আজ নেই ৷ মণ্ডলদের জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় জন্মাষ্টমীর দিন থেকে ৷ ওইদিন গঙ্গা মাটি দিয়ে দেবীর কাঠামোর পুজো হয় ৷ মহালয়ার আগে কাঠামোতে খড় বাঁধা, মাটি দেওয়া-সহ সব কাজ শেষ করে ফেলা হয় ৷ মহালয়ার দিন দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয় ৷ নিয়ম মেনে এই প্রথা চলে আসছে ৷ এই মণ্ডল বাড়ির পুজোয় বংশ-পরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করে আসছেন মৃৎ শিল্পীরা ৷ ঢাকিরাও বংশ পরম্পরায় ঢাক বাজান এই পুজোতে ৷ পুরোহিতের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চলে আসছে ৷

পরিবারের সদস্য নচিকেতা মণ্ডল জানান, ‘‘জমিদারি প্রথার ধীরে ধীরে অবসান ঘটার পর পঞ্চাশের দশক থেকে বন্ধ হয়ে যায় পাঁঠা বলি ৷ এখন শুধু নিয়মরক্ষার পুজো হয় ৷ এই পুজোর বিশেষত্ব হচ্ছে, বিশুদ্ধ নন্দীকেশ্বর মতে এই পুজো করা হয় ৷ সপ্তমীর দিন যে হোম-অগ্নি জ্বলে, তা নেভানো হয় দশমীর দিন ৷’’

কাজের সূত্রে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ভিনরাজ্যে এবং বিদেশে থাকেন ৷ তবে দুর্গা পুজোর দিনগুলিতে পরিবারের সবাই ডায়মন্ড হারবারের বারদ্রোণ গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.