ভাঙড়, 11 জুলাই: ভাঙড়ে শাসকদলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা আরাবুল ইসলামের খাসতালুকে হারল তৃণমূল কংগ্রেস । হারের পর রেগে গণনাকেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি । ভাঙড়ের পোলেরহাট দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত ছাতছাড়া হল তৃণমূলের । গত পঞ্চায়েত ভোটেও তৃণমূলকে জোর লড়াই দিয়েছিল জমি রক্ষা বাস্তুতন্ত্র কমিটি । এ বার তারা আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট বেঁধে বাজিমাৎ করল ৷ মঙ্গলবার জয়ের প্রবণতা স্পষ্ট হতেই গণনাকেন্দ্র ছাড়েন আরাবুল ইসলাম । পোলেরহাট 2 নম্বর অঞ্চলে নিজের হার স্বীকারও করে নেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক ।
গণনাকেন্দ্র থেকে বেরনোর সময় আরাবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার বুথে আমরা জিতেছি । পোলেরহাটের অন্য বুথগুলিতে হেরেছি । আমাদের সাত জন প্রার্থী হেরেছেন । এই অবস্থা। হতেই পারে ।’’ জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র কমিটির জয়ের পর পশ্চিম কাঁঠালিয়া এলাকায় নতুন করে বোমাবাজি শুরু হয় । এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি ।
পোলেরহাট 2 নম্বর পঞ্চায়েতে এ বার আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল 24 । সব আসনেই এ বার প্রার্থী দিয়েছিল জমি রক্ষা বাস্তুতন্ত্র কমিটি । পঞ্চায়েত সমিতিতে তিনটি এবং জেলা পরিষদের একটি আসনেও মনোনয়ন দাখিল করে তারা ।
2016 সালে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের সময় তৈরি হয়েছিল জমি, জীবিকা ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটি বা জমি কমিটি । গতবারও পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করে তারা । তাদের মনোনয়নপত্র পেশে বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ । তার পর হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জমি কমিটির সদস্যরা । এ বার অবশ্য তেমন অভিযোগ ওঠেনি । সংবাদমাধ্যমে কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান বলেছিলেন, "প্রথম দিন বাধা দিতে চেয়েছিল তৃণমূল । কিন্তু আমরা বলেছিলাম, আমাদের উপরে হামলা হলে পাওয়ার গ্রিডই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেব ।"
আরও পড়ুন: অশান্তির মাঝেই চলছে গণনা ! অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল, পাহাড়ে বিজিপিএম ঝড়
2018 সালেও পোলেরহাটে দাপট দেখিয়েছিল জমি কমিটি । সে বার পোলেরহাট 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের 16টি আসনের মধ্যে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আটটি আসনে জিতেছিল । বাকি আটটিতে জমি কমিটির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় । তার মধ্যে পাঁচটি আসন পেয়েছিল জমি কমিটি । তৃণমূল জিতেছিল তিনটি আসনে । তৃণমূল 16টির মধ্যে 11টি আসন জিতলেও পঞ্চায়েত অফিসে কার্যত ঢুকতে পারেননি জয়ীরা । প্রধান, উপপ্রধানদের পঞ্চায়েত অফিসে ঢোকার সময় বাধা দিয়েছিলেন জমি কমিটির সদস্যরা ।
2018 সালের সঙ্গে এ বার অনেকটাই ফারাক রয়েছে । কারণ 2021 সালে ভাঙড়ে জয়লাভ করেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । তার পর থেকে ভাঙড়ে দাপট বেড়েছে আইএসএফ-এর । এ বারও ভাঙড়ে মনোনয়নপত্র পেশ ঘিরে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধেছিল আইএসএফ-এর । সেই ঘটনায় মোট তিনজনের মৃত্যুর খবর সামনে আসে । সেই আইএসএফ-কে সঙ্গে নিয়েই তৃণমূলকে হারাল জমি কমিটি ৷
