সুন্দরবন, 20 মে : আমফানের প্রভাব পড়বে সুন্দরবনেও । ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাই সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন । চলছে মাইকিং । মানুষকে সতর্ক করতে পথে নেমেছেন পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা । কিন্তু এতকিছুর পরও বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইছেন না সুন্দরবনের বাসিন্দারা । গোসাবা, কুলতলি, রায়দিঘি, নামখানা, সাগরসহ একাধিক ব্লকের অনেকেই এখনও বাড়িতে রয়েছেন । কেন ? প্রশ্ন করলেই তাঁদের কথায় উঠে আসছে, আয়লার স্মৃতি বা ফণী- বুলবুলের ঘটনা ।
আজ দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে রাজ্যে আছড়ে পড়বে আমফান । দিঘা ও বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যে দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে সুন্দরবন । আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আয়লা বা বিগত দু'দশকের যে কোনও বড় ঝড়ের থেকেও শক্তিশালী এটি । ফলে, দু'দিন ধরে সুন্দরবনের নানা এলাকায় শুরু হয়েছে সতর্কতামূলক প্রচার । আমফানের জেরে নদীবাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা আছে বলে নদীর ধারের বা উপকূলের বাড়িগুলি থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের । একাজে রাস্তায় নেমেছেন BDO, পুলিশ আধিকারিকরাও । বিভিন্ন থানার OC ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ- সভাপতিরাও কাজ চালাচ্ছেন । কিন্তু কারও কথাই শুনছেন না বাসিন্দারা । দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে আওয়াজ দিতেই বেরিয়ে আসছেন কেউ না কেউ । কেউ আবার গোয়াল বা খড়ের গাদায় লুকিয়ে পড়ছেন পুলিশ দেখে । বার বার আয়লার বা বিগত বড় ঝড়গুলির স্মৃতি টেনে এনে বলছেন, বাড়ি-ঘর ছেড়ে যেতে পারবেন না । কারণ, ঝড় থামলে বাড়ি এসে আর কিছু ফিরে না-ও পেতে পারেন । দুর্যোগকে কাজে লাগিয়েই চুরি হয় এই এলাকাগুলিতে । ত্রাণ শিবির থেকে থালা-বাটি খুঁজে পাননি তেমনও অভিজ্ঞতা হয়েছেন বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা । ফলে হাজার আশ্বাসের পরও ত্রাণ শিবিরে যাচ্ছেন না তাঁরা ।
আয়লার স্মৃতি উসকে এক বাসিন্দা বলেন, "আমরা যাব কী করে ? আমরা যদি যাই এসে দেখব অর্ধেক জিনিস চুরি হয়ে গেছে । তালা- চাবি ভেঙে এর মধ্যেও চুরি হয় । আলমারি বা ট্রাঙ্ক ভেঙেও তো চুরি হয়েছে । আয়লার সময় আমরা অনেকেই বাড়ি এসে আর কিছু পাইনি । ফলে বাড়িতে সব রেখে কীভাবে যাব ?" তাহলে প্রাণের ঝুঁকি নেই ? তিনি বলেন, "আছে । কিন্তু বেঁচে ফিরে যদি ঘরে কিছুই না থাকে চলবে কেমন করে ? টাকা-পয়সা, বাসনও চুরি গেছে আগে ।"
শ্যামলী মণ্ডল নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, "সব জিনিস চুরি হয়ে যাবে । দুর্যোগেও অনেকে আছে যারা ঘরে এসে চুরি করবে । আয়লার সময়ও হয়েছে । সেই ভয়েই তো যেতে পারছি না । গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি হলে কী আর পাব আমরা ? সেইবারও পাইনি । এর দায়িত্ব কে নেবে ?"
শ্যামলী মণ্ডলদের মতো অনেকেই বলছেন, বাড়িগুলির নিরাপত্তা কোথায় ? বাড়ি ছেড়ে সব সঙ্গে নিয়ে কী যাওয়া সম্ভব ? আগে প্রশাসনকে ভরসা করে চলে গেছিলাম, ফিরে আর কিছুই পাইনি । ফলে প্রাণ আছে থাকুক । এখানেই থাকা ভালো ।
এবিষয়ে গোসাবার BDO সৌরভ মিত্র বলেন, "বুলবুলের ক্ষেত্রে একদম শেষ মুহূর্তে ঘরের বাইরে বেরিয়েছিলেন অনেকে । ঝড়ের দাপট বুঝতে পেরে । ওঁরা আমফানের ভয়াবহতা বুঝতে পারছেন না । বারবার মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে । এখানকার স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা চেষ্টা চালাচ্ছেন । OC আছেন । আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছি । এখনও পর্যন্ত 10 হাজারেরও বেশি মানুষকে সরানো হয়েছে । আর চুরির অভিযোগ উঠেছে শুনেছি । চুরি পুরোপুরি রোধ করতে এখনই পারব না । আমরা বলছি বার বার, ওঁদের যা যা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে- সোনা-গয়না, নথি-পত্র সেগুলি যাতে সঙ্গে নিয়ে চলে আসেন । যেখানে ওঁদের রাখা হচ্ছে, সেখানে ওঁদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি । আমরা সবরকম ব্যবস্থা করছি । চুরি ঠেকাতে স্থানীয় থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে । ঝড়-বৃষ্টির সময়ে তাঁরা টহলদারি চালাবেন । আমরা সজাগ আছি । চুরি আটাকনোরও চেষ্টা চলবে ।"