কোচবিহার,19 অগাস্ট : কোরোনা আবহের মধ্যেই রাজ্যে বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু হলেও ভিন রাজ্যের সঙ্গে বাস পরিষেবা এখনও চালু হয়নি ৷ এর ফলে কয়েকশো বাসকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা চরম আর্থিক সংকটে। গত 5 মাস ধরে এই পরিস্থিতি চলছে । বাসকর্মী ও তাঁদের পরিবারের বক্তব্য ,প্রথমদিকে মালিক পক্ষ কিছু সহযোগিতা করলেও এখন আর করছে না। তারাই বা কতদিন করবে, কারণ তাদের আয়ও বন্ধ হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের জীবনধারণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও কবে থেকে ভিনরাজ্যের সাথে বাস পরিষেবা চালু হবে এবিষয়ে পরিস্কার করে কিছু জানাতে পারেননি জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
কোচবিহার থেকে এরাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যেমন বাস চলাচল করে তেমনই উত্তর পূর্বের অসম, মেঘালয়, অরুণাচলপ্রদেশে বেসরকারি বাস যায়। প্রতিদিন অন্তত 100 বাস কোচবিহারের বক্সিরহাট ও আলিপুরদুয়ারের শ্রীরামপুর গেট দিয়ে উত্তর পূর্বের এই রাজ্যগুলোতে চলাচল করে। কোরোনা পরিস্থিতির কারণে 22 মার্চ থেকে কোচবিহার থেকে উত্তর পূর্বের এই রাজ্যগুলোতে বাস চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন কয়েকশো বাসকর্মী। বাসকর্মীরা বলেন, "আনলকপর্ব শুরু হতেই সরকার এরাজ্যের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে বাস পরিষেবা চালু করলেও অসমের সাথে বাস পরিষেবা চালু করছে না। ফলে রোজগার একদম বন্ধ। আগে অসম রুটের যেকোনও বাসে গেলেই প্রতিদিন 500-700 টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। আপার অসম কিংবা মেঘালয় , অরুণাচল হলে 1000-1200 টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। কিন্তু লকডাউনে সব শেষ।"
কবে চালু হবে বাস পরিষেবা কেউ বলতে পারছে না। বাসকর্মীরা বলেন, "আগে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বসে থাকতাম। বাসগুলোর অবস্থা দেখলেও খারাপ লাগে। টায়ার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাসের দেওয়ালে শেওলা জমে যাচ্ছে। ব্যাটারি বসে যাচ্ছে। একটা সময় কোচবিহারের যে বেসরকারি বাসস্ট্যান্ডে হাজার হাজার মানুষের ভিড় লেগে থাকতো, এখন সেখানে খাঁখাঁ করে। মাঝেমধ্যে কিছু বাসকর্মী এসে সময় কাটিয়ে চলে যায়।"
কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অসম রুটে গাড়ি নিয়ে যাওয়া এক বাসকর্মী বাপি হোসেন বলেন, "বাস বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ। খুব অশান্তির মধ্যে আছি। কতদিন আর বসে বসে খাওয়া যায়।" আরও এক বাসকর্মী আবু বক্কর সিদ্দিকি বলেন, "প্রথম দিকে মালিক কিছুটা সাহায্য করেছিল, এখন শুধু রেশনের চাল দিয়ে চলছে। বাড়িতে দুই ছেলে। তাদের পড়াশোনা বন্ধ। খাব না কি ছেলেদের পড়াশোনা করাব!"
এক বাসকর্মীর স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, "কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব অশান্তির মধ্যে আছি। মাঝখানে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সুদে টাকা নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি।" বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন বাস মালিকরাও। এক মালিক সমিতির পক্ষে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "বাস বন্ধ থাকায় আমরা কর্মীদের বেতন যেমন দিতে পারছি না, তেমনই বাস পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাস খোলা খুব দরকার।" কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান বলেন," ভিনরাজ্যের সাথে বাস পরিষেবা চালুর বিষয়ে এখনও খবর নেই।"