ETV Bharat / state

রাজ আমলের নিয়ম মেনে আজও বড়দেবীর পুজো কোচবিহারে - Durgapuja in coochbehar according to the rules of the royal period

কথিত আছে, " কোচ " রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা বিশ্বসিংহ ৷ শৈশবে তাঁর তিন ভাই শিষ্য সিংহ, কুমার চন্দন ও কুমার মদনসহ খেলার সাথীদের নিয়ে অসমের চিকনা নামে গভীর জঙ্গলে দেবী দুর্গা কল্পনা করে পুজো করছিলেন ।

durgapuja-in-coochbehar-according-to-the-rules-of-the-royal-period
রাজ আমলের নিয়ম মেনে বড়দেবীর পুজো কোচবিহারে
author img

By

Published : Oct 13, 2020, 7:05 AM IST

কোচবিহার , 13 অক্টোবর : রাজা নেই, নেই রাজ্যপাট । তবুও আজও রাজ আমলে শুরু হওয়া 500 বছরের পুরোনো বড়দেবীর পুজো নিয়ম-নিষ্ঠা সহকারে হয়ে আসছে কোচবিহারে । সামনেই পুজো । তাই গোটা বাংলা যখন দুর্গাপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত ৷ তখন কোচবিহারের দেবীবাড়ি মন্দিরে বড়দেবীর পুজো নিয়ে জোর ব্যস্ততা কোচবিহারে ।

কথিত আছে, " কোচ " রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা বিশ্বসিংহ ৷ শৈশবে তাঁর তিন ভাই শিষ্য সিংহ, কুমার চন্দন ও কুমার মদনসহ খেলার সাথীদের নিয়ে অসমের চিকনা নামে গভীর জঙ্গলে দেবী দুর্গা কল্পনা করে পুজো করছিলেন । সেসময় তাঁর ভাই শিষ্য সিংহ তাঁদের খেলার এক সাথীকে ছাগলের মতো করে আটকে রাখেন ৷ মহারাজা বিশ্বসিংহ কুশ দিয়ে আঘাত করা মাত্রই অলৌকিক ক্ষমতায় সেই বন্ধুর মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায় । পরবর্তীতে দেবী দুর্গার আশীর্বাদে বিশ্বসিংহ চিকনার অধিপতি তুরকা কোতয়ালকে পরাজিত ও নিহত করে কোচবিহারের সিংহাসনে আসীন হন । এখানে ময়না গাছের ডালকে দেবী দুর্গারূপে কল্পনা করে পুজো করা হয়েছিল বলে আজও শ্রাবন মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে ময়না গাছের ডাল পুজো করে সেই ময়না কাঠেই দেবীপ্রতিমা গড়া হয় ।

পরবর্তীতে কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণ (1554-1587) স্বপ্নাদেশে দশভুজা দুর্গামূর্তির পুজো শুরু করেন । ইতিহাসবিদদের মতে, মহারাজা নরনারায়ণের ভাই সেনাপতি চিলারায় নিজের বীরত্বে গর্বিত হয়ে কোচবিহারের সিংহাসনে বসার লোভে মহারাজা নরনারায়ণকে হত্যা করতে রাজসভায় গেছিলেন । রাজসভায় উপস্থিত হতেই চিলারায় দেখতে পান, স্বয়ং ভগবতী দুর্গা দশহাত দিয়ে ঘিরে নরনারায়ণকে রক্ষা করছেন । এই অলৌকিক দৃশ্য দেখে চিলারায় ভয় ও লজ্জায় দাদার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন । কিন্তু এই ঘটনায় মহারাজা নরনারায়ণের মনে ভিন্ন ভাবের সৃষ্টি হয় । তিনি ভাবলেন দেবী ভগবতী ভাইকে দর্শন দিল, অথচ আমি তার দেখা পেলাম না । এই চিন্তায় তিনি ভেঙে পড়েন । এরপরই দেবী ভগবতী মহারাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন । এরপর থেকেই প্রতিমা গড়ে পুজোর কাজ শুরু হয় । দেবী এখানে রক্তবর্ণা । অসুরের গায়ের রং সবুজ । ডানদিকে থাকে সিংহ, বামদিকে চিতাবাঘ । দু'পাশে থাকে জয়া ও বিজয়া ।

রাজ আমলের নিয়ম মেনে বড়দেবীর পুজো কোচবিহারে

গবেষক দেবব্রত চাকী বলেন, " মহারাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর শুরু করেছিলেন । দেবী এখানে রক্তবর্ণা । শরৎকালে গোটা বাংলা যখন দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে, তখন কোচবিহারে বড়দেবীর পুজো হয় । বংশপরম্পরায় এই দেবী প্রতিমা তৈরি করে আসছেন চিত্রকর পরিবার । বর্তমানে প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন প্রভাত চিত্রকর । তিনি বলেন, দেবী দুর্গার চেয়ে এই মূর্তি আলাদা । মূর্তি তৈরির আগে চামটা গ্রামের চামটা দেবীর পুজো করে বড়দেবী তৈরির জন্য মাটি নিয়ে আসা হয় । রাজা নেই । তবে প্রথা অনুযায়ী এখনও শ্রাবণ মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে গুঞ্জবাড়ি ডাঙরাই মন্দিরে ময়না গাছের ডাল কেটে এনে যূপছেদন পুজো করা হয় । এরপর ওই রাতেই শোভাযাত্রা সহকারে ওই যূপ নিয়ে আসা হয় কোচবিহার মদনমোহন বাড়িতে । সেখানে একমাস পুজো হওয়ার পর সেই ময়নাকাঠ নিয়ে যাওয়া হয় দেবীবাড়ি মন্দিরে । সেখানে বিশেষ পুজোর পর সেই ময়নাকাঠেই তৈরি হয় বড়দেবী । এই দুমাস ধরে প্রতিদিন পুজো চলবে । মহালয়ার দিন হবে চক্ষুদান । তবে এবারে আশ্বিন মাস মলমাস থাকায় ওই একমাস মন্দির বন্ধ থাকবে । এরপর যথাসময়ে পুজো অনুষ্ঠিত হবে ।

রাজপুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, " পুজোতে বলিপ্রথা রয়েছে । অষ্টমীতে মোষ বলি হয় । এরপর দশমীতে লম্বা দিঘিতে বিসর্জন হয় । " প্রতিবছর বাংলা ও নিম্ন অসমের মানুষ ভিড় জমায় বড়দেবীর পুজোতে । তবে, কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরোনার কারণে ভিড়ের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম মানা হবে ৷

কোচবিহার , 13 অক্টোবর : রাজা নেই, নেই রাজ্যপাট । তবুও আজও রাজ আমলে শুরু হওয়া 500 বছরের পুরোনো বড়দেবীর পুজো নিয়ম-নিষ্ঠা সহকারে হয়ে আসছে কোচবিহারে । সামনেই পুজো । তাই গোটা বাংলা যখন দুর্গাপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত ৷ তখন কোচবিহারের দেবীবাড়ি মন্দিরে বড়দেবীর পুজো নিয়ে জোর ব্যস্ততা কোচবিহারে ।

কথিত আছে, " কোচ " রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা বিশ্বসিংহ ৷ শৈশবে তাঁর তিন ভাই শিষ্য সিংহ, কুমার চন্দন ও কুমার মদনসহ খেলার সাথীদের নিয়ে অসমের চিকনা নামে গভীর জঙ্গলে দেবী দুর্গা কল্পনা করে পুজো করছিলেন । সেসময় তাঁর ভাই শিষ্য সিংহ তাঁদের খেলার এক সাথীকে ছাগলের মতো করে আটকে রাখেন ৷ মহারাজা বিশ্বসিংহ কুশ দিয়ে আঘাত করা মাত্রই অলৌকিক ক্ষমতায় সেই বন্ধুর মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায় । পরবর্তীতে দেবী দুর্গার আশীর্বাদে বিশ্বসিংহ চিকনার অধিপতি তুরকা কোতয়ালকে পরাজিত ও নিহত করে কোচবিহারের সিংহাসনে আসীন হন । এখানে ময়না গাছের ডালকে দেবী দুর্গারূপে কল্পনা করে পুজো করা হয়েছিল বলে আজও শ্রাবন মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে ময়না গাছের ডাল পুজো করে সেই ময়না কাঠেই দেবীপ্রতিমা গড়া হয় ।

পরবর্তীতে কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণ (1554-1587) স্বপ্নাদেশে দশভুজা দুর্গামূর্তির পুজো শুরু করেন । ইতিহাসবিদদের মতে, মহারাজা নরনারায়ণের ভাই সেনাপতি চিলারায় নিজের বীরত্বে গর্বিত হয়ে কোচবিহারের সিংহাসনে বসার লোভে মহারাজা নরনারায়ণকে হত্যা করতে রাজসভায় গেছিলেন । রাজসভায় উপস্থিত হতেই চিলারায় দেখতে পান, স্বয়ং ভগবতী দুর্গা দশহাত দিয়ে ঘিরে নরনারায়ণকে রক্ষা করছেন । এই অলৌকিক দৃশ্য দেখে চিলারায় ভয় ও লজ্জায় দাদার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন । কিন্তু এই ঘটনায় মহারাজা নরনারায়ণের মনে ভিন্ন ভাবের সৃষ্টি হয় । তিনি ভাবলেন দেবী ভগবতী ভাইকে দর্শন দিল, অথচ আমি তার দেখা পেলাম না । এই চিন্তায় তিনি ভেঙে পড়েন । এরপরই দেবী ভগবতী মহারাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন । এরপর থেকেই প্রতিমা গড়ে পুজোর কাজ শুরু হয় । দেবী এখানে রক্তবর্ণা । অসুরের গায়ের রং সবুজ । ডানদিকে থাকে সিংহ, বামদিকে চিতাবাঘ । দু'পাশে থাকে জয়া ও বিজয়া ।

রাজ আমলের নিয়ম মেনে বড়দেবীর পুজো কোচবিহারে

গবেষক দেবব্রত চাকী বলেন, " মহারাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর শুরু করেছিলেন । দেবী এখানে রক্তবর্ণা । শরৎকালে গোটা বাংলা যখন দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে, তখন কোচবিহারে বড়দেবীর পুজো হয় । বংশপরম্পরায় এই দেবী প্রতিমা তৈরি করে আসছেন চিত্রকর পরিবার । বর্তমানে প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন প্রভাত চিত্রকর । তিনি বলেন, দেবী দুর্গার চেয়ে এই মূর্তি আলাদা । মূর্তি তৈরির আগে চামটা গ্রামের চামটা দেবীর পুজো করে বড়দেবী তৈরির জন্য মাটি নিয়ে আসা হয় । রাজা নেই । তবে প্রথা অনুযায়ী এখনও শ্রাবণ মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে গুঞ্জবাড়ি ডাঙরাই মন্দিরে ময়না গাছের ডাল কেটে এনে যূপছেদন পুজো করা হয় । এরপর ওই রাতেই শোভাযাত্রা সহকারে ওই যূপ নিয়ে আসা হয় কোচবিহার মদনমোহন বাড়িতে । সেখানে একমাস পুজো হওয়ার পর সেই ময়নাকাঠ নিয়ে যাওয়া হয় দেবীবাড়ি মন্দিরে । সেখানে বিশেষ পুজোর পর সেই ময়নাকাঠেই তৈরি হয় বড়দেবী । এই দুমাস ধরে প্রতিদিন পুজো চলবে । মহালয়ার দিন হবে চক্ষুদান । তবে এবারে আশ্বিন মাস মলমাস থাকায় ওই একমাস মন্দির বন্ধ থাকবে । এরপর যথাসময়ে পুজো অনুষ্ঠিত হবে ।

রাজপুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, " পুজোতে বলিপ্রথা রয়েছে । অষ্টমীতে মোষ বলি হয় । এরপর দশমীতে লম্বা দিঘিতে বিসর্জন হয় । " প্রতিবছর বাংলা ও নিম্ন অসমের মানুষ ভিড় জমায় বড়দেবীর পুজোতে । তবে, কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরোনার কারণে ভিড়ের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম মানা হবে ৷

For All Latest Updates

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.