কোচবিহার, 23 নভেম্বর : প্রতি বছর রাসচক্র ঘুরিয়ে রাস উৎসবের সূচনা করা হয় কোচবিহারে ৷ মদনমোহন মন্দিরের চারপাশে রাস উপলক্ষে বসে মেলা ৷ কিন্তু এবছর কোরোনার কারণে পুজো হলেও বসবে না মেলা ৷ হবে না লাখ লাখ ভক্তদের সমাগম ৷ আর সেই কারণেই মন ভারক্রান্ত আলতাফ মিঞা ৷
আলতাফ মিঞা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বংশপরম্পরায় রাসচক্র তৈরির কাজ করে আসছেন ৷ কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, 1812 সালে কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ রাসপূর্ণিমার দিন কোচবিহারের ভেটাগুড়ির রাজপ্রসাদে প্রবেশ করেন । সেই উপলক্ষে রাসপূর্ণিমার দিন এলাকায় মেলা বসত । পরবর্তীকালে রাজপ্রাসাদ কোচবিহারে স্থানান্তরিত হয় । বৈরাগী দিঘির পাড়ে মদনমোহন মন্দির নির্মিত হয় । মন্দিরকে কেন্দ্র করে মেলা বসতে শুরু করে ৷ সেই থেকেই রাস উপলক্ষে ১৫ দিন ব্যাপী মেলা বসে ৷
প্রথমদিকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসতেন ৷ পরে ভিন জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেন ৷ আগে রাজারাই রাসপূর্ণিমার দিন রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা করতেন । হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরি হয় এই রাসচক্র । শুরু থেকেই রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব পান হরিণচওড়ার বাসিন্দা মামুদ মিঞা ৷ বংশপরম্পরায় আজও সেই কাজ করে আসছেন মামুদ মিঞার নাতি আলতাফ মিঞা ৷
আলতাফ মিঞা জানাচ্ছেন, লক্ষ্মীপূর্ণিমার দিন উপোস থেকে বাড়িতেই রাসচক্র তৈরির কাজ শুরু করেন । তারপর একমাস ধরে চলে কাজ ৷ মূলত এই একমাস নিরামিষ খেয়ে, নিষ্ঠাভরে তাঁরা রাসচক্র তৈরির কাজ করেন । পুজোর দিন সকালে মন্দির চত্বরে দিয়ে আসেন ৷ প্রায় 37 বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন ৷ অনেক সূক্ষ্ম কাজ করতে হয় ৷ তাই পরিবারের সবাই কাজে হাত লাগান ৷ ছেলেকেও রাসচক্র তৈরির কাজ শিখিয়েছেন আলতাফ মিঞা ৷ তিনি চান ছেলেও পারিবারিক পরম্পরা মেনে রাসচক্র তৈরির কাজ করুক ৷ বলেন, "সরকারি ব্যাপার, ট্রাস্ট যদি চায়, তবে ছেলে এই কাজ করবে ৷ তবে আমি ছেলেকে তৈরি করে রেখেছি ৷ "
বর্তমানে জেলা শাসক রাস উৎসবের সূচনা করেন ৷ উৎসবের আয়োজন করে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড ৷ এবছর কোরোনার কারণে কাট ছাঁট হচ্ছে উৎসবে ৷ জেলা শাসক পবন কাদিয়াল জানান, উৎসব 15 দিনই হবে ৷ কিন্তু মেলা বসবে না ৷ কোরোনা সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ মানতে হবে ৷
কোরোনার কারণে কড়কড়ির জেরে এবছর ভক্তরা রাসচক্র ঘোরানো থেকে বঞ্চিত থাকবেন ৷ তাই খানিকট মন খারাপ আলতাফ মিঞার ৷ বলেন," এবার হয়তো সবাই রাসচক্র ঘোরাতে পারবেন না ৷ "