কোচবিহার, 11 এপ্রিল: কোচবিহারের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারেও বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে৷ ওই গ্রামের বাসিন্দারা নানা প্রয়োজনে ভারতের মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করে থাকেন। ভারতের মূল ভূখণ্ডে আসতে হলে পেরোতে হয় কাঁটাতারের বেড়া। ওই বেড়ার মধ্যবর্তী এলাকায় রয়েছে BSF-এর ছোট চেকপোস্ট বা গেট। যে গেটকে স্থানীয়রা কাঁটাতারের গেট বলে থাকেন। স্বভাবতই ভারতের মূল ভূখণ্ডে আসতে হলে স্থানীয়রা ওই গেটটিকেই ব্যবহার করেন৷ এমনিতে সেই গেটে থাকে BSF-এর কড়া নিরাপত্তা বলয়৷ কিন্তু, সীমান্তের এপার-ওপারে থাকা স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতে কোনও অসুবিধা হয় না। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে BSF কর্তৃপক্ষ ভারতের মূল ভূখণ্ডে আসার ওই কাঁটাতারের গেট বন্ধ করে দিয়েছে গতকাল৷ ফলে গ্রামবাসীদের যাতায়াতও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওষুধ কেনা, বাজার করা সহ একাধিক জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডে আসতে হয়। যা বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে না। BSF কর্তৃপক্ষকে অনেক আবেদন নিবেদন করার পরও তাঁরা গেট খোলেনি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের৷ এরপরই শনিবার সকাল থেকে গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয়রা৷ ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ব্লকের জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের লতামারি গ্রামে৷
তবে, শুধু লতামারি গ্রামেই নয়৷ একইভাবে BSF-এর তরফে মেখলিগঞ্জের কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কলসি গ্রামের কাঁটাতারের গেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ যার জেরে দুই গ্রামের বাসিন্দারা একইরকম সমস্যার মধ্যে পড়েছেন৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, BSF-এর এই সিদ্ধান্তের ফলে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী, যেমন, খাবার, ওষুধ, জমির সার ইত্যাদি পাচ্ছেন না তাঁরা। এমনকী অসুস্থ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছেন না স্থানীয়রা৷ এদিন, লতামারি গ্রামের BSF-এর 140 নম্বর ব্যাটেলিয়নের নিয়ন্ত্রিত 12 নং গেটের সামনে সকাল থেকেই বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা।
এদিকে BSF সূত্রে জানা গিয়েছে, কোরোনা পরিস্থিতিতে সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে থাকা গ্রামবাসীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রেও কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। সে কারণেই মেখলিগঞ্জ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটাতারের ওপারের লতামারি এবং কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কলসি গ্রামের গেটও সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোরোনা মোকামিলায় লকডাউন সফল করতে আপাতত কাঁটাতারের বেড়ার গেট দিয়ে যাতায়াত করা যাবে না বলে গ্রামবাসীদের জানিয়ে দিয়েছে BSF। আর এতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গ্রামবাসীদের। দীর্ঘদিন ধরে কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরে আটকে পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
লতামারি গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য রঘু রায় পাখাধরা বলেন, "গ্রামের বাসিন্দাদের কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডে এসে বাজার করা, ওষুধ কেনা সব করতে হয়৷ কিন্তু, এখন গেট বন্ধ হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন 240 জন বাসিন্দা৷"
কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কলসি গ্রামের গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, "তিনদিক কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা কলসিগ্রাম । তাই কাঁটাতারের গেট দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এখন BSF গেট পুরো বন্ধ করে রেখেছে। কীভাবে কী করব জানি না!"
এই বিষয়ে 140 নম্বর ব্যাটেলিয়নের প্রধান এ শ্রীবাস্তব বলেন, "কোরোনা পরিস্থিতিতে BSF-এর উচ্চ আধিকারিকদের নির্দেশেই গেট বন্ধ করা হয়েছে৷"
শনিবার কাঁটাতারের গেটের বিক্ষোভ সামলাতে ঘটনাস্থানে আসে মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ। আসেন মেখলিগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকও৷ গোটা ঘটনায় ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, "গ্রামবাসীদের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রসাশনিক স্তরে আলোচনা চলছে।"