কলকাতা, 8 জুলাই: গতকাল তপসিয়ায় মনু মেমোরিয়াল ইন্সটিটিউশন বন্ধ করে প্রধান শিক্ষকের হজে যাওয়া উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার অভিযোগ উঠেছে । যদিও প্রধান শিক্ষকের দাবি, তাঁর হজে যাওয়া উপলক্ষে নয়, ইদ-উল-ফিতর উদযাপন ও মজলিস-এ-দোয়া উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা হয়েছে । কিন্তু, শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য অনুষ্ঠানে স্কুল বন্ধ রাখা অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন। তিনি সোমবার প্রকৃত ঘটনা জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন ।
ঠিক কী ঘটেছিল?
তপসিয়ার মনু মেমোরিয়াল ইন্সটিটিউশনের প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াহাব গত শুক্রবার হঠাৎ ঘোষণা করেন শনিবার স্কুল ছুটি থাকবে । শনিবার স্কুলে একটি অনুষ্ঠান হয় । অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক হজে যাচ্ছেন তাই অনুষ্ঠানে তাঁকে ফুলের মালা পরিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় । অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের জন্য চিকিন বিরিয়ানি সহ ভোজেরও ব্যবস্থা ছিল । মনু মেমোরিয়াল ইন্সটিটিউটে বাংলা ও উর্দু মাধ্যমে পঠনপাঠন হয় । সকালে প্রাথমিক বিভাগ এবং দুপুরে মাধ্যমিক বিভাগের ক্লাস হয়। শনিবার সকালে ক্লাস হলেও অনুষ্ঠানের জন্য দুপুরে তা বন্ধ ছিল ।
আবদুল ওয়াহাব বলেন, "হজের সঙ্গে অনুষ্ঠানের সম্পর্ক ছিল না । আমি হজে যাচ্ছি সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয় । শনিবার বিশ্বশান্তির জন্য দোয়ার মজলিস করেছিলাম । এছাড়া ইদ-উল-ফিতরের সেলিব্রেশন ও একটা আলোচনা সভা ছিল । বিভিন্ন মানুষ এসেছিলেন যাঁরা স্কুলের হিতাকাঙ্খী । চার-পাঁচটা ছুটি হেডমাস্টারদের হাতে থাকে। আমরা কোনও অনুষ্ঠানে স্পেশালভাবে ছুটি দিতে পারি। আমি তো হজের অনুষ্ঠান করিনি । আমায় লোক ভালোবাসে । তারা শুনেছে আমি হজে যাব । কেউ যদি আমার গলায় মালা দেয় তাহলে আমি সেটাকে ডিনাই করব ? ফেলে দেব ? অনুষ্ঠানের ব্যানারে তো লেখাই রয়েছে ইদ-উল-ফিতর সেলিব্রেশন এবং মজলিস-এ-দোয়া। মানে আশীর্বাদের একটা অনুষ্ঠান । সারা বিশ্বের হিন্দু, মুসলিম বা খ্রিশ্টান যেই হোক, সবার জন্য মঙ্গল কামনা করে অনুষ্ঠান হয়েছে । অতিথিদের খাইয়েছে আল-আমিন মিল্লি মিশন নামে একটি NGO। আমি সেই সংগঠনের সম্পাদক ।"
স্কুল ছুটি না দিয়ে কি কোনও ছুটির দিনে অনুষ্ঠান করা যেত না ? প্রধান শিক্ষক বলেন, "করতে পারতাম। তবে ছুটি যেটা হয়েছে সেটা কোনও অন্যায় নয় । শনিবার হাফ ডে ছিল। তাই এটা করা হয়েছে। রবিবার অনুষ্ঠান করলে যাদের দূরে বাড়ি সেই শিক্ষকরা উপস্থিত থাকতে পারতেন না । শান্তির দোয়ার জন্য যদি অনুষ্ঠান করে থাকি তাহলে কী অন্যায় কাজ করেছি বলুন তো ?"
আবু তাহের কামরুদ্দিন বলেন, "অফিস খুলুক । এটা নিয়ে আমি ব্যবস্থা নেব । আমি জানতে চাইব ঠিক কী ঘটেছে । ঘটনাটা নিন্দনীয় । এটা ঠিক হয়নি । সরকারি প্রতিষ্ঠান তো এভাবে বন্ধ করা যায় না । তদন্ত করব ।" ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের 65 টি ছুটি থাকে । প্রধান শিক্ষকের হাতে 3-5 টা ছুটি থাকে । কিন্তু সেই ছুটি তো হজে যাওয়ার অনুষ্ঠানের জন্য নয় । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে ছুটি দেওয়া যেতে পারে । অ্যাকাডেমিক পারপাস ছাড়া কেউ তাঁর হাতে থাকা ছুটি ব্যবহার করতে পারেন না । একটা স্পোর্টস হল তখন ঠিক করা হতে পারে যে আজ ক্লাস হবে না । কিন্তু হজে যাব, তার জন্য দোয়ার মজলিস হবে ওনার হাতে থাকা ছুটি দিয়ে - এখন উনি এই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন । ইদ-উল-ফিতরে উনি মালা পড়ে কী করছেন ? ইদ-উল-ফিতরের জন্য আলাদা ছুটি তো আছেই । দুটো দিন ছুটি দেওয়া হয় । সেই সময় সেলিব্রেশন করতে হত । তার জন্য আলাদা করে অনুষ্ঠান করার কী দরকার ছিল ? আমরা তো ইদের ছুটি দিই । ইদের সেলিব্রেশনটা উনি সেই সময় করুন না । তার জন্য আলাদা করে ছুটি আমার মনে হয় না দেওয়ার কোনও দরকার ছিল । এটা নিন্দনীয় কাজ, এটা ঠিক নয় ।"