বোলপুর, 16 অগস্ট: রাজ্য পুলিশ নিরপেক্ষ নয় ৷ বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তাই এখানে সক্রিয় পুলিশ । ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী । বুধবার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে রাজ্য পুলিশের অতি সক্রিয়তার বিরুদ্ধে আধিকারিক, অধ্যাপকদের নিয়ে ধর্নায় বসেন উপাচার্য । কেন তাঁর সময়কালে রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের সঙ্গে বিশ্বভারতীর দূরত্ব ? কেন তাঁর বক্তব্য নিয়ে এত বিতর্ক হয় ? সব প্রশ্নের অকপটে উত্তর দিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সময়কালে তাঁর একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে । এমনকী, উপাচার্য-সহ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে শান্তিনিকেতন থানায় । এছাড়া বহু মামলাও চলছে । উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অভিযোগ, রাজ্য পুলিশ নিরপেক্ষ নয় । বিশ্বভারতী যেহেতু কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তাই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ হলেই পুলিশ সক্রিয় । অথচ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও অভিযোগ করলে সে ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় থাকে । এ দিন ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ।
তিনি বলেন, "পুলিশের কী ধরনের নিরপেক্ষতা, যে কোনও ফেক নিউজের ভিত্তিতে এফআইআর করে । বিশ্বভারতীর দুই-তিনজন শিক্ষকের সঙ্গে শাসক দলের যোগাযোগ আছে । তাঁদের স্বার্থ বিঘ্নিত হলেই তাঁরা অভিযোগ করছেন । আর পুলিশ তাঁদের সাহায্য করছে আমাদের বিপর্যস্ত করার জন্য । কারণ বিশ্বভারতী সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, সেই হাঁস তাদের হাত থেকে চলে এসেছে অন্য জায়গায় ৷"
অমর্ত্য সেনের বাড়িতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তারপর বিশ্বভারতী একটি চিঠিতে লিখেছিলেন 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কান দিয়ে দেখেন'। তারপর থেকেই কি রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিশ্বভারতীর দূরত্ব ?
ইটিভি ভারতের প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, "অমর্ত্য সেনের বিষয় বিচারাধীন, এই নিয়ে কিছু বলব না । তবে মুখ্যমন্ত্রী আসতেই পারেন ৷ অমর্ত্য সেন একজন জগৎ বিখ্যাত লোক, তাঁর সঙ্গে দেখা করাটা ভাগ্যের ব্যাপার ৷ তারপর যে চিঠি দিয়েছিলাম, সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল প্রতিবাদ করা দরকার । প্রতিবাদ করেছি ৷"
এরপরেই ফের রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ।
তিনি বলেন, "যখন প্রাচীর ভাঙা হয়, তাণ্ডব হয়, আমাকে ঢিল মারে, বন্দি করে রাখা হয় তখন আমরা অভিযোগ করলেও পুলিশ এফআইআর করে না ৷ অথচ কোনও ফেক নিউজ হলে সেটার ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর করে । তাই পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে । যাদবপুর যেহেতু রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে শক্ত পদক্ষেপ করবে না ৷ আর বিশ্বভারতী যেহেতু কেন্দ্রের বিশ্ববিদ্যালয়, তাই চান্স পেলেই রগড়ে দেব এটা ঠিক নয় ।"
আপনার যে কোনও বক্তব্য নিয়ে এত বিতর্ক কেন হয় ?
ইটিভি ভারতের প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, "তোমাদের দোকান চলে তাই । আগে অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য দিয়ে দোকান চালাতে, এখন আমার বক্তব্য দিয়ে । আমি কি বিতর্কিত বক্তব্য রাখি ? আমি বিশ্বভারতীর জন্য যা যা বলার তাই বলি । পুলিশ ক্যাম্পাসে আসতে গেলে রেজিস্ট্রারের অনুমতি নিতে হয়, এটা আমি বলেছি । এতে বিতর্ক কোথায় ?"
এভাবেই এ দিন রাজ্য সরকার, শাসক দল তৃণমূল-কংগ্রেস ও পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা, নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ।
আরও পড়ুন: অমর্ত্যর পাশে দাঁড়ানোয় মার্কিন নোবেলজয়ীদের 'স্বার্থপর' বলল বিশ্বভারতী